ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

যুদ্ধের ১ হাজার দিন

ইয়েমেন এখন রক্ত আর বোমের দেশ

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২০:৩০, ২১ ডিসেম্বর ২০১৭

হাসপাতালগুলো রোগীদের সেবা দিতে পারছে না। হাজার হাজার স্কুল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। হাজার হাজার বছর ধরে শির উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা নান্দনিক ভবনগুলো ধোঁয়া আর আর ধ্বংসস্তুপে পরিণত হচ্ছে। প্রতিবেশিরা এলাকা ছেড়ে পালাচ্ছে।

আরব উপদ্বীপের মধ্যে ঈশ্বরের সবচেয়ে বেশি আশীর্বাদপুষ্ঠ ইয়েমেন আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। আজ ইয়েমেন যুদ্ধের ১ হাজার দিন পূর্ণ হলো। ওই সময়ের মধ্যে আরব-উপদ্বীপের দেশটি ধ্বংসের সীমানায় দাঁড়িয়ে রয়েছে।

২০১৫ সালের ২১ মার্চ হুতি বিদ্রোহীদের লক্ষ্য করে ইয়েমেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে সৌদির-নেতৃত্বাধীন জোট। এরপর ওই জোটের বোমা হামলায় কমপক্ষে ১০ হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন। এছাড়া উদ্বাস্তু হয়েছেন ৩০ লাখেরও বেশি মানুষ। সৌদির বিমান হামলায় গত ১১ দিনেই ১৩৬ ইয়েমেনি নাগরিক নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে আল-জাজিরা।

এছাড়া সৌদি জোটের জল-স্থল ও আকাশপথে দেশটিকে অবরুদ্ধ করার ফলে সেখানে ব্যাপকমাত্রায় দুর্ভিক্ষ নেমে এসেছে। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, সৌদির অবরোধ চলতে থাকলে ব্যাপকহারে মানুষ মারা যাবে। ইয়েমেনের উত্তর সীমান্ত এলাকায় বসবাসকারী কয়েক লাখ লোক বর্তমানে ডায়রিয়াসহ আরও নানা জটিলতায় ভোগছে। এদিকে অবরোধ চলতে থাকলে, যারা বেঁচে আছেন, তারাও কয়েকদিনের মধ্যে মৃত্যুর ভাগ্য বরণ করতে হবে বলে হুশিয়ারি করেছেন ইউএনডিপি।

ইয়েমেনের সাদা শহরের বাসিন্দা হিশাম আবদুল্লাহ বলেন, আপনি যখন সাদা শহরে প্রবেশ করবেন, মৃত্যু আর ধ্বংসযজ্ঞই আপনাকে অভিবাদন জানাবে। এই প্রদেশে মৃত্যু আর ধ্বংসযজ্ঞ ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। বোমা এই দরিদ্র এলাকাকে তছনছ করে দিয়েছে। তিনি আরও বলেন, “আপনি আপনি রাতে বাসায় ঘুমুতে পারবেন, ছেলেদের নিয়ে ফুটবল খেলতে পারবেন, তবে যেকোন মুহুর্তে সৌদির একটি বিমান হামলা আপনার পুরো পরিবারকে কেড়ে নিয়ে যাবে। তাই মানুষ ঘরের বাইরে বের হওয়ার সাহস দেখায় না, এমনকি কোন কুকুরও নয়।”

সাদা শহরে ৫০ হাজার মানুষ বাস করে, যা মোটামুটি সমৃদ্ধ একটি শহর বলে মনে করেন ওই এলাকার বাসিন্দারা। তবে সেই সুন্দর শহর আর সুন্দর নেই। ২ হাজার ৯৯৬টি বিমান হামলায় ওই শহর এখন ভুতুড়ে শহরে পরিণত হয়েছে। আবদুল্লাহ বলেন, অনেকেই বলছে এখান থেকে চলে যাবে, তবে কোথায় যাব আমরা? সর্বত্রইতো ভয় আর মৃত্যু। দুটোকেই নিয়েই আমাদের জীবন।

তিনি আরও বলেন, “আমরা কোন শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিতে চাই না। কারণ আমরাতো দেখছি শরণার্থী শিবিরগুলির অবস্থা কি? সিরিয়ার শরণার্থীদের দুর্বিষহ জীবন-যাপনে আমরা আরও শঙ্কিত। আমাদের বাঁচার কি কোন অধিকার নেই”

সৌদি আরবের তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বী ইরান ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীদের মাধ্যমে সৌদি আরবকে দমাতে চায়, এমন অভিযোগ এনে আরববিশ্বের অন্যতম দরিদ্র দেশ ইয়েমেনের উপর বিমান হামলা শুরু করে সৌদিজোট। ইয়েমেনের এই অবস্থায় ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষ নিরাপদ পানি ও পয়োনিষ্কাশন থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এদের মধ্যে শিশুর সংখ্যাই ৭০ লাখ বলে জানা গেছে।

সেখানে দুর্ভিক্ষ চরমে পৌছেছে দাবি করে সানার এক ফটোগ্রাফার সাইফ সালেহ বলেন, শিশুদের খাবার কিনতে বাবা-মারা তাদের সর্বশেষ সম্বলটুকুও বিক্রয় করে দিচ্ছেন। এসময় তিনি বলেন, আমি কোন কাজ পাচ্ছি না, এমনকি আমার পরিবারের কারও একটাকাও বেতন নেই। এই অবরোধ আমাদের পরিস্থিতিকে নাজুক করে দিয়েছে।

এদিকে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে আল-জাজিরা জানায়, খাদ্যদ্রব্য আর জ্বালানীর দাম আকাশচুম্বী হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতে দরিদ্র মানুষেরা একবেলাও খেতে পারছে না বলে জানায় আল-জাজিরা। গত নভেম্বরের তুলনায় দেশটিতে ময়দার দাম দ্বিগুণ বেড়েছে। জাতিসংঘের এক কর্মকর্তা জানিয়েছে, মানুষ খাদ্যসামগ্রী ক্রয় করতে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ। বর্তমানে ৭০ লাখ লোক বর্তমানে চরম দুর্ভিক্ষের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন।

২০১৪ সালে প্রেসিডেন্ট আবদ রাব্বু মনসুর বহুল প্রতিক্ষীত নির্বাচন স্থগিত করলে হুতি বিদ্রোহীরা ইয়েমেনের বড় একটি অংশ দখলে নেয়। এছাড়া তেলখাতে ভর্তুকি কমানোর ঘোষণা দেওয়ায় হাদির বিরুদ্ধে ব্যাপক জনমত গড়ে ওঠে। ওই সময় বিদ্রোহীরা দেশটির সাদা প্রদেশ থেকে দক্ষিণের দিকে আসতে থাকে। এরপর তারা হাদিকে গৃহবন্দি করে ক্ষমতা দখল করে। ওই বিদ্রোহীরা সৌদির জন্য হুমকি দাবি করে, দেশটিতে বিমান হামলা শুরু করে সৌদি-আরব।

এদিকে বর্তমান ইয়েমেনকে জাহান্নাম বলে আখ্যায়িত করেছে দেশটির নাগরিকেরা। গত ১ হাজার দিনে ইয়েমেন একটি রক্ত আর বোমার দেশে পরিণত হয়েছে। এটিকে পৃথিবীর প্রথম জাহান্নাম বলছে তারা।

সূত্র: আল-জাজিরা

এমজে/


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি