বেতন-বোনাস
ঈদের আগে ৫ শতাধিক পোশাক কারখানায় বিশৃঙ্খলার শঙ্কা
প্রকাশিত : ১৩:৩০, ১৪ আগস্ট ২০১৮ | আপডেট: ১৩:৫০, ১৪ আগস্ট ২০১৮
ঈদের আগে শ্রমিক আন্দোলনসহ নানাবিধ বিশৃঙ্খলার শঙ্কায় পড়েছে দেশের ৫ শতাধিক পোশাক কারখানা। সময় মতো শ্রমিকদের বেতন ও বোনাস পরিশোধের ব্যর্থতায় এ শঙ্কা আরো বাড়ছে বলে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিল্প পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, প্রতিবার ঈদের আগে দেশের পোশাক শিল্পে বেতন-বোনাস নিয়ে বিশৃঙ্খলা দেখা যায়। এবারও তেমন কিছু ঘটার আভাস আমরা আগে থেকে পেয়েছি। আমাদের কাছে তথ্য আছে দেশের ৫২৫টি কারখানা সমস্যাগ্রস্ত।
এসব কারখানাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি উদ্বেগ শিল্প পুলিশ-১ বা আশুলিয়ার কারখানাগুলো ঘিরে। এলাকাটিতে বহিরাগত শ্রমিক নেতারা আছেন, যারা বিভিন্ন সময় সমস্যার সৃষ্টি করেন। তবে এবার আশুলিয়া এলাকা ঘিরে বিশেষ নজরদারি রয়েছে শিল্প পুলিশের। অন্যান্য এলাকাতেও বিশেষ নজরদারি আছে। আশা করছি কোন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির সুযোগ কেউ পাবে না।
শিল্প পুলিশের মতো বিশৃঙ্খলার শঙ্কায় আছে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন দেশের শ্রম পরিস্থিতির তদারকি ও নজরদারি করা সংস্থা কল-কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতর (ডিআইএফই)। সংস্থাটি বিশেষ নিয়ন্ত্রণ কক্ষের মাধ্যমে ১২ আগস্ট থেকে দেশের বিভিন্ন জেলার শ্রম পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। সংস্থাটির মতে আগামী ঈদের আগে দেশের ২৬১টি কারখানায় বেতন-বোনাস পরিশোধ নিয়ে সমস্যা হতে পারে।
সংস্থাটির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, রাজধানী ঢাকাতেই সমস্যাপ্রবণ কারখানা আছে ৯০টি। নরসিংদীতে ২০, গাজীপুরে ৯৫, ময়মনসিংহে ১০, চট্টগ্রামে ৯, নারায়ণগঞ্জে ৩৫ ও টাঙ্গাইলে দুটি কারখানা আছে বিশৃঙ্খলার শঙ্কায়।
জানা গেছে, ঈদের আগে ১৬ আগস্টের মধ্যে শ্রমিকদের বোনাস পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন শিল্প মালিকরা। বকেয়া বেতনের পাশাপাশি ১৯ আগস্টের মধ্যে চলতি মাসের অগ্রিম বেতন পরিশোধের ঘোষণাও দিয়েছেন তারা। যা অনেক কারকানা বাস্তবায়নে সক্ষমতা দেখাচ্ছে না। অক্ষম সেই কারখানা মালিকদের বিরুদ্ধে শ্রমিকদের ক্ষোভ বাড়ছে। ক্ষোভের রেশ ধরে ঈদের আগেই এমন বিশৃঙ্খলার শঙ্কায় পড়েছে খাত সংশ্লিষ্টরা।
ডিআইএফইর মহাপরিদর্শক মো. সামছুজ্জামান ভূইয়া বলেন, ঈদের আগে এরই মধ্যে দু’একটি কারখানায় কিছুটা বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে। এব্যাপারে ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট কোর কমিটির সভায় আমরা উদ্বেগও প্রকাশ করেছি। এ বিষয়ে সতর্কতা বাড়ানো হচ্ছে। আশা করছি বড় ধরণের কোন বিশৃঙ্খলা হবে না।
এদিকে ঈদের আগে বেতন-বোনাস পরিশোধ নিয়ে এরই মধ্যে অসন্তোষ দেখা গেছে কিছু কিছু কারাখানা শ্রমিকদের মধ্যে। গতকাল সোমবার রাত সাড়ে ৭টার সময়ও বিজিএমইএ’র সামনে ২ শতাধিক শ্রমিককে বেতনের দাবিতে অবস্থান নিতে দেখা যায়। তার আগে আশুলিয়ার ডিফাইনের শ্রমিকরা বেতনের দাবিতে কাজ বন্ধ করে রাখে।
এছাড়া আশুলিয়ার খেজুরবাগান এলাকার ক্রিস্টাল কম্পোজিট, জামতলার ক্রিয়েটিভ ফ্যাশন, জামগড়ার লিন্ডা ফ্যাশন ও আমতলার স্পাইসি ফ্যাশনে কাজ বন্ধের ঘটনা ঘটেছে।
গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য ফোরামের সভাপতি মোশরেফা মিশু বলেন, প্রতিবারই শ্রমিকদের বেতন নিয়ে কিছু কারখানা ঝামেলা করে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। আমরা আশা করবো শ্রমিকদের বেতন-বোনাস ও অগ্রিম বেতনও যেন দিয়ে দেওয়া হয়। তা না হলে দাবি আদায়ে শ্রমিকরা আন্দোলনে নামবে।
ঈদের আগে শ্রমিকদের পাওনা নিয়ে সৃষ্ট সমস্যা নিরসনে মধ্যস্থতার মাধ্যমে সমাধানের কাজ করে পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ নেতারা। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে তারাও ঈদের আগে কিছু কারখানায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির সংকেত পেয়েছেন। তাদের হিসেবে এবার সমস্যা কবলিত ১ হাজার কারখানা আছে।
বিজিএমইএর সহসভাপতি এসএম মান্নান কচি বলেন, ঈদকে সামনে রেখে কেউ পোশাক শিল্পে অস্থিরতা সৃষ্টির সুযোগ পাবে না। আমরা সমস্যাগ্রস্ত হাজার খানেক কারখানার ব্যাপারে সজাগ দৃষ্টি রাখছি। সরকার ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী আমাদের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে। আশা করছি বেতন-বোনাস ঠিকমতো দেওয়া হবে। সুষ্ঠ-সুন্দরভাবে সবাই ঈদ উৎযাপন করবে এটাই আমাদের কাম্য।
আরও পড়ুন