ঢাকা, শনিবার   ১৮ জানুয়ারি ২০২৫

উচ্চশিক্ষা কী গণশিক্ষার মতো সুযোগ নাকি অধিকার?

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২০:৩১, ১৭ জানুয়ারি ২০২৫

দক্ষ মানবসম্পদ ও সমৃদ্ধ জাতি গঠনে মানসম্পন্ন, আধুনিক ও যুগোপযুগি শিক্ষা ব্যবস্থার কোনো বিকল্প নেই। মানুষকে সঙ্গে সম্পদ হিসেবে পরিণত করার বহুল প্রচলিত হাতিয়ার হচ্ছে উচ্চ শিক্ষা। আমাদের দেশে প্রচলিত উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা পাশের পর প্রশ্ন আসে উচ্চ শিক্ষার। সরকারি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় মিলিয়ে দেশের পৌনে দুই'শ বিশ্ববিদ্যালয় মিলে বাংলাদেশে উচ্চ শিক্ষা প্রদানে নিয়োজিত। দেশে এতো সংখ্যক বিশ্ববিদ্যালয় থাকার পরও উচ্চশিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে না বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী।

আইনের দৃষ্টিতে উচ্চশিক্ষা সুযোগ হলেও সাধারণ ও প্রাথমিক শিক্ষা একটি সর্বজনীন মানবাধিকার বা Universal Human Right. বিশ্বের সব রাষ্ট্রই তার নাগরিকদের জন্য বাধ্যতামূলক বিনা-বেতনে প্রাথমিক শিক্ষা প্রদান করতে আন্তর্জাতিক ভাবে আইনত বাধ্য। শুধু তাই নয়, উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাতেও সবার জন্য সহজপ্রাপ্য করতে হবে। উচ্চশিক্ষা প্রদানের ভিত্তি হবে সমতা ও মেধা।

International Covenant on Economic, Social and, Cultural Rights, 1966-এ শিক্ষাকে একটি অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। বিনামূল্যে প্রাথমিক শিক্ষা সবার অধিকার। সেই সাথে দ্বিতীয় স্তরের শিক্ষার সুযোগও সহজ করতে হয় রাষ্ট্রকেই।

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সনদের অনুচ্ছেদ ২৬ -এ বলা হয়েছে, Everyone has the right to education. Education shall be free, at least in the elementary and fundamental stages. Elementary education shall be compulsory. Technical and professional education shall be made generally available and higher education shall be equally accessible to all on the basis of merit.

এখানে Elementary and fundamental stags বলতে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ধরলে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত শিক্ষাকে বোঝাচ্ছে। এজন্য ১৯৯০ সালে বাংলাদেশে প্রাথমিক শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করার জন্য আইন পাস করা হয়। 

এছাড়া উচ্চশিক্ষার প্রসারকে সহজ ও অন্তর্ভুক্তিমূকক করার জন্য দেশের সর্বত্র উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ দেয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে পাঠদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

আসলে যে উদ্দ্যেশ্যে উচ্চ শিক্ষাকে Equally Accessible করার জন্য দেশের ইউনিয়ন লেভেল পর্যন্ত উচ্চশিক্ষাকে পৌঁছে দিতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা, সেই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বর্তমানে ২,২৫৭টি অধিভুক্ত কলেজ রয়েছে। এসব কলেজে উচ্চ শিক্ষা পর্যায়ে ডিগ্রি, অনার্স ও মাস্টার্স প্রোগ্রাম পরিচালনা করা হয়।

এদিকে বাংলাদেশে ইউনিয়নের সংখ্যা বর্তমানে ৪, ৫৫৪ টি। সে হিসেবে দেশে গড়ে প্রতি ২ টা ইউনিয়নের জন্য একটা উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে! এ যেন ইউনিয়নে ইউনিয়নে উচ্চশিক্ষার প্রসার।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, আমরা ইউনিয়নে ইউনিয়নে উচ্চ শিক্ষার সার্টিফিকেট পৌঁছে দিচ্ছি ঠিকই, কিন্তু সেই সার্টিফিকেটধারী উচ্চশিক্ষার প্রোডাক্টগুলো কতটুকু প্রতিযোগিতা-সক্ষম সেটা দেখার বিষয়। শুধু সার্টিফিকেট বন্টন করার মধ্যেই যদি উচ্চশিক্ষার দায়িত্ব শেষ হয় তাহলে আমরা দক্ষ মানবসম্পদ সৃষ্টি হতে যোজন যোজন দূরে আছি।

জেলায় জেলায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় সৃষ্টি, শহরের অলিতে-গলিতে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় সৃষ্টি আর মফস্বলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে ডিগ্রি/ অনার্স কলেজের সার্টিফিকেট বন্টনের এক জোয়ার আমরা ইতোমধ্যে দেখেছি। তাতে কোয়ালিটির দিকে যতটুকু নজর দেয়া না হয়েছে, কোয়ান্টিটির দিকে তার চেয়ে অনেক বেশি আগ্রহ দেখা যাচ্ছে।

এসব প্রতিষ্ঠানের জন্য শতভাগ যোগ্য জনবল নিশ্চিত করতে হবে এবং এসব সার্টিফিকেট সর্বস্ব শিক্ষায়তন সংস্কার করতে হবে। তবেই উচ্চশিক্ষার প্রকৃত সুফল পাওয়া যাবে। উচ্চশিক্ষাকে সুযোগ থেকে যদি অধিকার হিসেবে দেখাতেই হয়, তবে উচ্চশিক্ষার যথাযথ মান নিশ্চিত করতে হবে। নতুবা উচ্চশিক্ষা ব্যবসা বৈ অন্য তকমা পাবে না।

লেখক: শিক্ষক ও কলামিস্ট। 
 

এমবি//


** লেখার মতামত লেখকের। একুশে টেলিভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে।
Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি