ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

উত্তাল বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, মামলা প্রত্যাহারে আল্টিমেটাম

ববি প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ১৯:০৮, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

ফ্যাসিস্ট পুনর্বাসনের অভিযোগ এনে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় (ববি) ফের উত্তাল হয়ে উঠেছে। উপাচার্য অধ্যাপক ড. শূচিতা শরমিনের বিরুদ্ধে গোপন সিন্ডিকেট ও ফ্যাসিস্ট পুনর্বাসনের অভিযোগে উপাচার্যের বাসভবনের গেট ভেঙে প্রবেশ করে শিক্ষার্থীরা। এ ঘটনায় করা মামলা প্রত্যাহারের আল্টিমেটাম দিয়েছে শিক্ষার্থীরা।

গত ১৫ ফেব্রুয়ারি রাত ১০টায় গেট ভাঙার ঘটনা ও বিভিন্ন কারণ উল্লেখ করে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে বরিশাল বন্দর থানায় অভিযোগ দেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষে সহকারী রেজিস্ট্রার (নিরাপত্তা শাখা) সানোয়ার পারভেজ লিটন। 

এ অভিযোগে ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ২০-২৫ জনকে আসামি করা হয়। অভিযোগের বিষয়টি নিশ্চিত করেন বন্দর থানার ওসি রফিকুল ইসলাম। 

এ ঘটনার প্রেক্ষিতে রোববার (১৬ ফেব্রুয়ারি) বেলা সাড়ে ১২টার দিকে ক্যাম্পাসে সংবাদ সম্মেলন করেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। সংবাদ সম্মেলনে ৫ দফা দাবিসহ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের করা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহারের জন্য ছয় ঘন্টা অর্থাৎ সন্ধ্যা পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দেন তারা।

আজ সন্ধ্যার মধ্যে অভিযোগ বা মামলার আবেদনটি প্রত্যাহার না করলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন শিক্ষার্থীরা। বিকাল ৪টার মধ্যে প্রক্টর এ টি এম রফিকুল ইসলাম ও প্রক্টরিয়াল বডিকে পদত্যাগের দাবি জানান আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। 

লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী মোকাব্বেল শেখ জানান, আমরা আমাদের দাবি নিয়ে উপাচার্যের সাথে কথা বলতে চেয়েছি, তিনি আমাদের সাথে বসেননি। বিভিন্ন সময়ে আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের বাদ দিতে বললে তিনি তা করেননি। সিন্ডিকেটের এজেন্ডা না জানিয়ে আওয়ামী পুনর্বাসনের জন্য গোপন সিন্ডিকেট ডাকেন উপাচার্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরের আওয়ামী দালালদের কথা শুনে বিভিন্ন অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন তিনি।

ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী মোশাররফ হোসেন জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আশা আকাঙ্খা ছিলো উন্নয়নমূলক কাজের প্রতিফলন ঘটুক। উপাচার্য শিক্ষার্থীদের সাথে নিয়ে কাজ করবে অথচ তিনি ফ্যাসিস্টদের পুনর্বাসন করার চেষ্টা করছেন। উপাচার্যের নির্দেশে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের করা মামলায় বোঝা যায় তিনি ফ্যাসিস্টদের পুনর্বাসন করার চেষ্টা করছেন। অনতিবিলম্ব আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহার করে নিতে হবে।

এদিকে এসব উদ্ভূত পরিস্থিতির ঘটনার পিছনে উপাচার্য দায়ী করেছেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য, ট্রেজারার ও ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোঃ মুহসিন উদ্দীনকে।

উপাচার্য শুচিতা শরমিন এ প্রসঙ্গে বলেন, আমি ফ্যাসিস্টদের পুনর্বাসন করছি এরকম গুজব উদ্দেশ্যমূলকভাবে ছড়ানো হয়েছে। এর পেছনে কয়েকজন স্বার্থান্বেষী শিক্ষকসহ তিনজন ব্যক্তি জড়িত। যারা চিঠি দিয়ে সিন্ডিকেট সভায় যোগ না দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল। অথচ বহিঃস্থ সিন্ডিকেট সদস্য যারা, তারা সকলেই বর্তমান সরকার ও জুলাই চেতনার ধারণ করা ব্যক্তি।

তিনি জানান, শনিবার আমাদের সিন্ডিকেটের জরুরি মিটিং ছিল। আমাদের ১০ জন সদস্য নিয়ে সফলভাবে আমরা মিটিংটি করেছি। কয়েকজন এতে ভার্চ্যুয়ালি যোগ দেন। এসময় ২০-২৫ জন শিক্ষার্থী আমার বাসভবনের ফটক ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে নানান কুরুচিপূর্ণ স্লোগান দেয়। বুলডোজার দিয়ে বাড়িয়ে গুড়িয়ে দেওয়া, আগুন দেওয়ার হুমকি দেয়। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদানের পরই চেষ্টা করছি একাডেমিক ও প্রশাসনিক মান উন্নয়নের। অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছি, দেখা করেছি। ইউজিসির সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করছি। কিন্তু শুরু থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির জন্য কয়েক ব্যক্তি নানা ইস্যু সৃষ্টি করে কিছু শিক্ষার্থীকে উস্কে দিচ্ছেন। যেটা কাম্য নয়।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. গোলাম রব্বানী বলেন, শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত ও বিভিন্ন দাবি নিয়ে আন্দোলন করছে। কিন্তু এখানে তো আমার সংশ্লিষ্ট থাকার কথা না। বরং আমরা তাদের দাবি ও সমস্যা নিয়ে কাজ করতে চাই। উপাচার্যসহ আমরা যে তিনজন আছি এসব উদ্ভূত পরিস্থিতি একসাথে বসে শিক্ষার্থীদের সাথে নিয়ে সমাধান করা যেত।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক ড. হারুন অর রশিদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল সিদ্ধান্ত উপাচার্যই একাই নিয়ে থাকেন। আমি আসার পরে আমাদের কোন মিটিংয়ে ডাকেন না, কোন সিদ্ধান্তে আমাদের মতামত নেওয়া হয়না।

এএইচ


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি