ঢাকা, শুক্রবার   ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪

উপমহাদেশের প্রথম মুসলিম গণিত বিশারদ ড. আতাউল হাকিম

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১১:০৭, ১ মার্চ ২০২৩

আমাদের কাছে-দূরে এমন অনেক জ্ঞানী-গুণী শিক্ষাবিদ, চিকিৎসক রয়েছেন যারা সমাজকে নানাভাবে আলোকিত করেছেন, সমৃদ্ধ করেছেন। এমনই একজন আলোকিত ব্যক্তিত্ব অবিভক্ত বাংলার প্রথম মুসলিম গণিতবিশারদ, শিক্ষাবিদ, ড. আতাউল হাকিম। চট্টগ্রাম জেলাধীন পটিয়া উপজেলার নাইখাইন গ্রামে তাঁর জন্ম ১৮৯৪ সালের ১ জানুয়ারি। তাঁর পিতার নাম মুন্সি চাঁদ মিয়া।

ড. আতাউল হাকিম আরব দেশগুলোর প্রায় সাড়ে তিন হাজার অঙ্ক শাস্ত্রবিদের জীবন ও কর্ম নিয়ে গবেষণা করেন। এজন্য কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় হতে ১৯৪২ সালে তিনি অবিভক্ত বাংলার প্রথম মুসলিম পিএইচডি (ডক্টরেট) ডিগ্রিধারী ব্যক্তি হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। তাঁর গবেষণাকর্মের নাম ‘দ্য আরব ম্যাথমেটিকস’। প্রায় ২২ বছরের গবেষণায় রচিত তিন হাজার ৭০৬ পৃষ্ঠার গবেষণা অভিসন্দর্ভ চার খণ্ডে বিভক্ত।

আতাউল হাকিম নিজ গ্রাম নাইখাইনের গৌরচন্দ্র ভিক্ষুর হাতে প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করেন। গৈড়লা আপার প্রাইমারি স্কুল থেকে বৃত্তি নিয়ে ১৯০৬ সালে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হন এএস রাহাত আলী উচ্চবিদ্যালয়ে। এরপর ৭ম ও ৮ম শ্রেণিতে পড়েন পটিয়া আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়ে। তিনি ১৯১১ সালে চট্টগ্রাম সরকারি মোহসেনিয়া মাদ্রাসা (বর্তমানে হাজি মুহাম্মদ মহসীন কলেজ) থেকে অ্যাংলো পার্সিয়ান বিভাগে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক, ১৯১৩ সালে চট্টগ্রাম কলেজ থেকে আইএ ও ১৯১৫ সালে বিএ অনার্স পাশ করেন। ১৯১৮ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অঙ্কশাস্ত্রে এমএ পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে প্রথম এবং পরের বছর আরবীতেও এমএ পরীক্ষায় দ্বিতীয় হন।

ড. আতাউল হাকিম অবিভক্ত বাংলাসহ তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের শিক্ষা বিভাগে বহু গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। তিনি এমএ পরীক্ষার ফল প্রকাশের আগেই চট্টগ্রাম কলেজের প্রভাষক পদে যোগ দেন। ১৯২০ সালে কলকাতা ইসলামীয়া কলেজে অঙ্কশাস্ত্রের শিক্ষক হিসেবে যোগ দিয়ে পরে অধ্যক্ষ হন। এ ছাড়া তিনি কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজ এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন।

পাকিস্তান সৃষ্টির পর তিনি রাজশাহী রেঞ্জের বিভাগীয় স্কুল-পরিদর্শক পদে যোগ দেন এবং একই পদে ১৯৪৯ সালে অবসর (মতান্তরে ১৯৫০ সালে) নেন। প্রায় দুই বছর পর আবার তিনি পর্যায়ক্রমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অঙ্ক বিভাগের রিডার, অধ্যাপক, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অঙ্ক বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ড. হাকিম স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য বিশেষ করে অঙ্কের ওপর বহু বই লিখেছেন । ড. আতাউল হাকিম হোমিওপ্যাথি বিষয়েও অনুরাগী ছিলেন। তিনি ১৯৪৯ সালে হোমিওপ্যাথি বিষয়ে প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়া করে পরীক্ষায় সমগ্র পাকিস্তানে প্রথম হন এবং ৪৫০ পৃষ্ঠার ‘মেটেরিয়া মেডিকা’ বিষয়ক গ্রন্থ রচনা ও প্রকাশ করেন। তিনি হোমিওপ্যাথিক সোসাইটির অনারারি ফেলোশিপ অর্জন করেন।

কলকাতায় সেকালের চট্টগ্রামের মুসলিম ছাত্রদের লেখাপড়ার উপযোগী পরিবেশ, বিশেষত দরিদ্র ছাত্র এবং ব্যবসায়ী-চাকরিজীবীসহ বিভিন্ন জনের থাকা-খাওয়াসহ নানারকম সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে চট্টগ্রামের সমাজসেবী চিন্তার ব্যক্তিরা ১৯১২ সালে চট্টগ্রাম মোসলেম ছাত্র সমিতি প্রতিষ্ঠা করেন। ড. আতাউল হাকিম ১৯২৬ থেকে ১৯৩৫ সাল পর্যন্ত সংগঠনটির সভাপতি ছিলেন। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর সংগঠনটির নেতাকর্মীরা ঢাকা চলে আসেন এবং চট্টগ্রাম সমিতি-ঢাকা নামে ৩২, তোপখানা রোডে সংগঠনের কার্যক্রম শুরু করেন। সমিতিতে অসামান্য অবদানের জন্য ১৯৯৯ সালে। ড. আতাউল হাকিমকে মরণোত্তর 'চট্টগ্রাম সমিতি পদক' দিয়ে সম্মানিত করা হয়। এর আগে পিএইচডি ডিগ্রি লাভের পর কলকাতায় প্রবাসী চট্টগ্রামের অধিবাসীরা তাঁকে ১৯৪৩ সালের ১৪ মার্চ সংবর্ধনা দেয়। 

এই কৃতী শিক্ষাবিদ ১৯৬৯ সালের ১১ সেপ্টেম্বর ঢাকায় একটি বেসরকারি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন।
এসএ/
 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি