উপাচার্যের অপসারণের দাবিতে আন্দোলন মুখর শিক্ষার্থীরা
প্রকাশিত : ১১:০৪, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্বাবিদ্যালয়ের উপাচার্যের অপসারণের দাবিতে পঞ্চম দিনের মতো বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন শিক্ষার্থীরা। আজ সোমবার ভোর রাত থেকে বৃষ্টি উপেক্ষা করে এক দফা দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে নিচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।
এর আগে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে শনিবার বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হলেও শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস ছেড়ে যাননি। উপাচার্য অধ্যাপক ড. খোন্দকার নাসিরউদ্দিনের অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত যে পন্থাই প্রশাসন হাতে নিক না কেন আন্দোলন চলবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
আমাদের গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, সোমবারও বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি বাড়ছে। উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে স্লোগানে স্লোগানে উত্তাল হয়ে উঠছে পুরো বিশ্ববিদ্যালয়। এ সময় আন্দোলনকারীরা উপাচার্যের নানা অনিয়ম, দুর্নীতির অভিযোগ উল্লেখ করে বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করে। আন্দোলনরত বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বললে তারা একুশে টিলিভিশনকে জানান, উপাচার্যের অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। ঝড়, বৃষ্টি বা অন্য যতো ধরনের বাধাই আসুক না কেন তারা তা উপেক্ষা করে আন্দোলন চালিয়ে যাবে।
এদিকে শনিবার হল ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া পরও শিক্ষার্থীরা আন্দোলন চালিয়ে নিলে হলের বিদ্যুৎ, পনি বন্ধ করে দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এ দিনই আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর সন্ত্রাসী হামলায় অন্তত ৩০ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। এ হামলার ঘটনার প্রতিবাদে সহকারী প্রক্টর মো. হুমায়ূন কবীর পদত্যাগ করেন। পরে এ হামলার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। তাদেরকে তদন্ত করে তারা আগামী ৫ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। ক্যাম্পাস উত্তাল থাকায় ক্যাম্পাসসহ বিভিন্ন স্থানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
এর আগে রোববার জেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠন শিক্ষার্থীদের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সম্প্রতি ছুটি চলে যাওয়ায় প্রক্টরের দায়িত্বে থাকা ড. বশির উদ্দিন আমাদের প্রতিনিধিকে জানান, শিক্ষার্থীরা যে আন্দোলন করছেন তা উদ্দেশ্য প্রনোদিত। এ আন্দোলনে হাতে গোনা কয়েকজন শিক্ষকের সম্পৃক্ততা রয়েছে। উপাচার্যের বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগ মিথ্যা।
ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে আন্দোলনে সরগরম থাকায় ক্যাম্পাসের বাইরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়ন করা হয়েছে। জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সানোয়ার হোসেন বলেন, ‘ক্যাম্পাসের ভিতরে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছেন। এখানে আমাদের কিছু করার নেই। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চাইলে পুলিশ ক্যাম্পাস অভ্যন্তরে প্রবেশ করবে।’
উল্লেখ্য, গত ১১ সেপ্টেম্বর ফেইসবুকে স্ট্যাটাসের জের ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও একটি জাতীয় দৈনিকের প্রতিবেদক ফাতেমা-তুজ-জিনিয়াকে সাময়িক বহিষ্কার করে কর্তৃপক্ষ। বহিষ্কারের বিষয়ে দেশ ব্যাপি সমালোচনা হলে গত বুধবার সন্ধ্যায় তার বহিষ্কারাদেশ তুলে নেয় প্রশাসন। তবে বুধবার রাতেই উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ শুরু করেন শিক্ষার্থীরা।
পরে বুধবার রাতেই ১৪টি সমস্যার সমাধান করার কথা উল্লেখ করে একটি বিজ্ঞপ্তিও দেয়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
জানা যায়, নারী কেলেঙ্কারী, ভর্তি ও নিয়োগ দুর্নীতি, প্রকল্প দুর্নীতি, বাকস্বাধীনতা হরণ, শিক্ষার উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করতে না পারা, আবাসন সংকট, বৃক্ষরোপনসহ বিভিন্ন খাতের মাধ্যমে অর্থ লোপাট, গুন্ডাবাহিনী তৈরিসহ নানা বিষয়ে উপাচার্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে।
এমএস/
আরও পড়ুন