ঢাকা, বুধবার   ২৭ নভেম্বর ২০২৪

ঋণ আগ্রাসন

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৮:২২, ১৯ ডিসেম্বর ২০১৯ | আপডেট: ১৮:৩০, ১৯ ডিসেম্বর ২০১৯

কয়েকজন তরুণ মিলে মুরগির খামার করল। ব্যবসা ভালোই চলছিল। পরিচিত একজন উদ্বুদ্ধ করল ব্যাংক থেকে ব্যবসা খাতে ঋণ (সিসি লোন) নিতে। ঋণের টাকায় খামার আরও বড় হলো। কিন্তু আকস্মিক বার্ড ফ্লুর আক্রমণে ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হলো ভীষণভাবে। অন্যদিকে কিস্তি পরিশোধের চাপ। সময়মতো কিস্তি শোধ করতে না পারায় আসতে থাকল ব্যাংকের চিঠি, উকিল নোটিশ। এ বিপদ থেকে মুক্তি পেতে তারা খামারের জমি সস্তা দামে বিক্রি করে দিল। এখানেই শেষ নয়, ঋণের বাকি অংশ শোধ করতে প্রত্যেকে দেউলিয়া হয়ে গেল। অনেকে আবার শখ করে কেনাকাটা করতে গিয়ে ক্রেডিট কার্ডের ফাঁদে পড়ে এরকম সর্বশান্ত হয়ে যান।

উল্লিখিত ঘটনাই সমাজের বাস্তব চিত্র, দেশে-বিদেশে এমন উদাহরণ অগণিত। ঋণ, কিস্তি ও ক্রেডিট কার্ড বর্তমানে এভাবেই পরিণত হয়েছে মরণফাঁদে। বিশ্বজুড়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। ব্রিটেনের বৃহত্তম সামাজিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল সেন্টার ফর সোশ্যাল রিসার্চের সমীক্ষা অনুযায়ী, ইংল্যান্ডে প্রতি বছর এক লাখেরও বেশি মানুষ ঋণের ধকল সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যার চেষ্টা করে।

আমেরিকায় বিবাহ-বিচ্ছেদের অন্যতম প্রধান কারণ ঋণ। ঋণকে মার্কিন সমাজবিজ্ঞানীরা তাই বলছেন, সম্পর্কের ঘাতক। গোটা বিশ্বেই এই আগ্রাসন বাড়ছে। ঋণ বিক্রেতারা নানারকম কলাকৌশলের মাধ্যমে ঋণজাল বাড়াচ্ছে।

আমাদের দেশও এই ঋণজালের বাইরে নয়। ২০১৫ সালে বোস্টন কনসাল্টিং গ্রুপ (বিসিজি) বাংলাদেশকে নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল। সেখানে বলা হয়েছিল, ২০২৫ সালে ঢাকার মধ্যবিত্ত ও বিত্তবান জনগোষ্ঠীর আকার হবে বর্তমানের দ্বিগুণ। রাজশাহী ও বরিশালে তিন গুণ এবং খুলনায় হবে বর্তমানের ছয় গুণ। কেননা ভারত চীন ইন্দোনেশিয়ার মতো উদীয়মান ধনী দেশগুলোর চেয়ে বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ খরচ ও ঋণশোধের ব্যাপারেও সচেতন। কিন্তু মধ্যবিত্ত ও বিত্তবান ক্রেতা-ভোক্তাদের মধ্যে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে মাত্র ৬% আর এদের মধ্যে গৃহঋণ নিয়েছে মাত্র ৩%।

 ২০১৬ সালে বোস্টন গ্রুপের একটি রিপোর্ট হচ্ছে, This is how consumers turn into debt slaves অর্থাৎকীভাবে ভোক্তারা ঋণগ্রহীতায় পরিণত হয়।

ক্রেডিট কার্ড : শুভঙ্করের ফাঁকি

ক্রেডিট কার্ড কোম্পানিগুলোর মূল লক্ষ্য হচ্ছে, বিলাসী পণ্যসামগ্রী বাকিতে কিনতে অভ্যস্ত করা। কারণ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যগুলোর জন্যে কাউকে ঋণের দ্বারস্থ হতে হয় না। বিলাসী ভোগ্যপণ্য (স্মার্ট টিভি, হোম থিয়েটার, এসি, ওয়াশিং মেশিন, স্মার্ট ডোর সিকিউরিটি সিস্টেম, গেমিং ল্যাপটপ) কেনার সামর্থ্য না থাকলেও ক্রেডিট কার্ডে তা কিনে ফেলা কয়েক মুহূর্তের বিষয়।

একটি ওয়াশিং মেশিনের দাম যদি হয় ৫০ হাজার টাকা, আপনার উপার্জন যা-ই হোক, মিনিমাম এমাউন্ট পে-এবল পলিসিতে ৫% সুদে আপনি তা কিনে ফেললেন। এ ঋণ শোধ হতে সময় লাগবে প্রায় ১৮ বছর এবং এই সময়ে আপনাকে শোধ করতে হবে দুই লক্ষাধিক টাকা। বর্তমানে ক্রেডিট কার্ডের প্রতি তরুণদের তীব্র আকর্ষণ লক্ষণীয়। পকেটে একাধিক ক্রেডিট কার্ড থাকাকে তারা স্ট্যাটাস সিম্বল মনে করে।

বিভিন্ন উৎসব-পার্বণকে কেন্দ্র করে ক্রেডিট কার্ড কোম্পানিগুলোর থাকে নানা আয়োজন। কোরবানির ঈদে আকর্ষণীয় মূল্যে আর কিস্তিতে অর্থাৎ বাকিতে ফ্রিজ কিনতে প্রলুব্ধ করা হয় ক্রেতাদের।

ঋণ সম্পর্কে ধর্ম কী বলছে?

ক্রেডিট কার্ডের ব্যাপারে ওআইসি (অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশন)-এর ২০০০ সালের ফতোয়া হলো- যদি ক্রেডিট কার্ডে সুদ আরোপ করার ব্যবস্থা থাকে, সুদ আরোপ হওয়ার আগেই আসল শোধ করে দিলেও এটা অনুমোদনযোগ্য  নয়।

 সনাতন ধর্মে বলা হয়েছে-ইহলোকে উত্তমর্ণের কাছে সকল ঋণশোধ করার শক্তি দাও। তোমার প্রাসাদে আমায় সকল ঋণ থেকে মুক্ত করো। ঋণ নিমিত্ত নরকপাত থেকে আমায় মুক্ত করো।... [অথর্ববেদ : শ্লোক ১১৭-১৮-১৯]

বাইবেলে ঋণ নিষিদ্ধ ছিল। সেইন্ট অ্যামব্রোস ৩৮০ খ্রিষ্টাব্দে বলেছেন, সুদি ব্যবসা হলো ঋণী ব্যবসা, যা ডাকাতি। এমনকি খুনের সঙ্গে তুলনীয়।

 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি