এ পর্যন্ত গ্রেপ্তার হলেন যারা
প্রকাশিত : ১৪:১৬, ২৯ আগস্ট ২০২৪
বুধবার রাতে সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশিকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। তাকে ঢাকার গুলশান এক নম্বর থেকে রাত একটা ১০ মিনিটে গ্রেফতার করা হয়েছে।
গ্রেফতারের পর রাত দুইটার দিকে তাকে গুলশান থানায় সোপর্দ করা হয়।
গতকাল রাতে টিপু মুনশি গুলশানের ১২৩ নম্বর সড়কে অবস্থিত এমজি গ্রুপের মালিকের বাড়িতে ছিলেন।
খবর পেয়ে সেখান থেকেই তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে র্যাব। রংপুরে করা একটি মামলায় টিপু মুনশিকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
জুলাই মাসে রংপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান শ্রমিক মুসলিম উদ্দিন মিলন।
ওই ঘটনায় সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশিসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়।
গত ২২শে অগাস্ট টিপু মুনশি ও তার পরিবারের সদস্যদের ব্যাংক হিসাব স্থগিত করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংস্থা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।
সেই সঙ্গে টিপু মুনশির মালিকানাধীন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবের লেনদেনও স্থগিত করা হয়।
চলতি মাসের পাঁচ তারিখে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে দলটির বিভিন্ন সারির নেতাকর্মীরা আত্মগোপনে চলে যান, কেউ কেউ দেশ ছেড়েছেন বলেও খবর পাওয়া যায়।
অন্য অনেক নেতাকর্মীর মতো সাবেক সংসদ সদস্য টিপু মুনশিও আত্মগোপনে ছিলেন। তিনি রংপুর-৪ আসনের (পীরগাছা-কাউনিয়া) সাবেক সংসদ সদস্য।
তিনি ২০১৮ সালে ওই আসন থেকে টানা তৃতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হন।
এরপর আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর তাকে বাণিজ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়।
পদচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে পাঁচই অগাস্ট থেকে ২৮শে অগাস্ট পর্যন্ত মোট ৮০টি মামলা করা হয়েছে। এর মধ্যে ৭৪টি হত্যা মামলা। বাকি মামলার মধ্যে গণহত্যা এবং অপহরণের মত মামলাও রয়েছে।
পাঁচই অগাস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যাবার পরপরই হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হয়ে দেশত্যাগের চেষ্টা করেন তার আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রিসভার একাধিক সদস্য।
সাবেক তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলককে বিমানবন্দর থেকে আটক করা হয়।
একই দিনে তার কিছুক্ষণ পর আটক হন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। ইমিগ্রেশন পুলিশ তাকে আটকে দেয়।
সাবেক ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকুকে একই দিনে খিলক্ষেত থানার নিকুঞ্জ আবাসিক এলাকা থেকে আত্মগোপনে থাকাবস্থায় গ্রেফতার দেখানো হয়।
তবে, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ সম্পর্কে এখনও কিছু জানায়নি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
সেসময় বিমানবন্দর থেকে ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত এবং ঢাকা মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক রিয়াজ মাহমুদকেও আটকের খবর আসে গণমাধ্যমে।
তবে, তাদের সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে কি না সে ব্যাপারে কোনও তথ্য মেলে নি।
এদিকে, সরকার পতনের পর আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাসহ দলের অনেক নেতার বিরুদ্ধে গণহত্যা, হত্যা, গুম ইত্যাদির মামলা করা হচ্ছে।
তাদেরকে অনেককে টিপু মুনশির মতো গ্রেফতার করা হয়েছে, অনেককে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।
এখন পর্যন্ত যাদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ড. দীপু মণি এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা ও বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান।
এছাড়া আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, সাবেক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী এবি তাজুল ইসলাম, সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, সাবেক পর্যটন ও বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রী রাশেদ খান মেননও গ্রেফতার হয়েছেন।
সরকারের মন্ত্রী প্রতিমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ যেমন গ্রেফতার হয়েছেন, তেমনি সাবেক অনেক কর্মকর্তাও আটক হয়েছেন।
এদের মধ্যে অন্যতম আলোচিত সেনা কর্মকর্তা ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার এনটিএমসির সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান। পাঁচই অগাস্ট সরকার পতনের পর তাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
সেইসাথে চট্টগ্রাম বন্দরের সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল, যিনি এক সময় র্যাবে কর্মরত ছিলেন, তাকেও আটক করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।
তবে বাংলাদেশে কোটা বিরোধী আন্দোলনের সময় নিহতের ঘটনাকে ঘিরে যেভাবে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদেরকে গ্রেফতারের ঘটনা ঘটছে, তার সমালোচনাও করছেন অনেকেই।
আত্মগোপন এবং সেনা হেফাজত
বাংলাদেশে গত পাঁচই অগাস্ট গণআন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাজনৈতিক দলের নেতা, বিচারক, সরকারি আমলা, পুলিশ কর্মকর্তাসহ প্রায় ৬২৬ জন ব্যক্তিকে বিভিন্ন সেনানিবাসে আশ্রয় দেওয়া হয়েছিল।
এর মধ্যে ৫১৫ জনই পুলিশের সদস্য, যাদের মধ্যে ২৮ জন পুলিশ কর্মকর্তা।
আশ্রয়গ্রহীতাদের অধিকাংশই নিজ উদ্যোগে পরে সেনানিবাস ছেড়ে চলে গেছেন। এখন সেখানে রয়েছেন সাত জন।
এছাড়া বিভিন্ন অভিযোগ বা মামলার ভিত্তিতে আশ্রয় গ্রহণকারীদের চারজনকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে ইতোমধ্যেই হস্তান্তর করা হয়েছে।
অগাস্টের ১৮ তারিখে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানিয়েছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)।
প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সামি উদ দৌলা চৌধুরী সাক্ষরিত ওই বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, আশ্রয়গ্রহীতাদের মধ্যে পরিবারের সদস্যসহ এখনও সাতজন সেনানিবাসে অবস্থান করছেন।
তবে তারা ঠিক কারা, সে বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি।
উল্লেখ্য যে, প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে শেখ হাসিনা বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার পর থেকেই দেশের বেশিরভাগ জেলাতেই আওয়ামী লীগ কার্যালয় ও নেতাকর্মীদের বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে।
এসব ঘটনায় ঢাকা, চাঁদপুর, যশোর, সাতক্ষীরা, বরিশাল, সিরাজগঞ্জ, লালমনিরহাটসহ বেশ কিছু জেলায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের অনেকে নিহত ও আহত হন।
এমন পরিস্থিতিতে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে দলটির শীর্ষনেতাদের অনেকেই গা ঢাকা দেন।
বিদেশে পালিয়ে যান আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাসহ বহু নেতা।
সূত্র: বিবিসি বাংলা
এসবি/
আরও পড়ুন