ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪

এক চিলতে রোদ!

শাকেরা আরজু

প্রকাশিত : ১৮:১০, ১৩ জুলাই ২০২০ | আপডেট: ১৯:০১, ১৩ জুলাই ২০২০

অদৃশ্য করোনায় চারপাশটা কেমন যেন ঝিম মেরে আছে। দোকানপাট, হোটেল সব বন্ধ। কোন খাবার নেই, নেই শোয়ার জায়গা আর প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র! যে কারণে আজ চারদিন ধরে শুধু বিস্কিট আর পানি খেয়ে দিন পার করছে জাহিদ, তার মা আর ছোট ভাইয়ের বউ। ছোট ভাই অহিদ আইসিইউ-তে ভর্তি।

নিউরোসাইন্স হাসপাতালে অহিদের কাছে থাকতে পারবে শুধু একজন। অহিদের বউকে রেখে তাই জাহিদ তার মা’কে নিয়ে হাসপাতালের বাইরে কোনরকম সময় পার করছে। ছোট ভাইটার যখন তখন ঔষধ ও প্রযোজনীয় জিনিস কিনে দিতে হয়। তাই দূরে কোথাও যেতেও পারছে না তারা। 

কি থেকে কি হয়ে গেল অহিদের। চোখের সামনে টগবগে ভাইটা অসুস্থ হয়ে পড়লো। একদিন সকালবেলা অহিদ ঘুম থেকে উঠে আর পা ফেলতে পারে না। সারা শরীর অবশ ও দূর্বল মনে হয় তার। ধীরে ধীরে একসময় প্যারালাইসিস হয়ে যায় অহিদের। বরগুনা সদর হাসপাতালের চিকিৎসক তাকে ঢাকা যাবার পরামর্শ দেন।

অতঃপর অহিদকে নিয়ে আসা হয় ঢাকায়। চলমান করেনাকালে অন্য রোগীদের ভর্তিও নিতে চায় না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তাছাড়া দুইজন করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারাও গেছে হাসপাতালটিতে। শেষমেশ অহিদেরই অফিসের সহায়তায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করতে পারে জাহিদ।

পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানা গেলো অহিদের গুলেন বারি সিনড্রোম হয়েছে। এটাও একটি ভাইরাস,  বাংলাদেশে প্রতি ১০ হাজারে ১ জনের সক্রামিত হয়ে থাকে। সক্রামিত হাওয়ার পর গোটা শরীরে খুব দ্রুত ছড়ায় ভাইরাসটি। তীব্র হলে রোগীকে আইসিইউতে রাখতে হয়। চিকিৎসাও বেশ দীর্ঘ ও ব্যয়বহুল। অহিদের চিকিৎসায়ও তাই প্রায় ২০ লাখ টাকা লাগবে। শুনে চারপাশটা দুলে ওঠে জাহিদের। অন্ধকার হয়ে আসে সব। দিশেহারা হয়ে পড়ে সে। 

এমন সময়েই ফোন করেন অহিদের অফিসের মেহেদী স্যার। চার দিন না খেয়ে থাকার কথা শুনে কষ্ট পান তিনি। পরদিনই খাবার পাঠিয়ে দেন, সাথে কিছু টাকাও। সেইসঙ্গে এও বলে দেন যে, চিকিৎসা বন্ধ করা যাবে না।

জাহিদ নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তান। ঢাকায় আসার আগে জমি বিক্রি করে কিছু অর্থ নিয়ে এসেছে। তবে করোনার সময় জমি বিক্রিতে ভালো দাম পায়নি সে।

যাইহোক, অন্তত একটা আশ্বাস পাওয়া গেলো। অহিদ চাকরী করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রারের ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে। জাহিদ সহায়তা চাইবার আগেই ট্রাইব্যুনালের সিনিয়র কনসালটেন্ট মেহেদী মাসুদ অহিদের পাশে দাঁড়ান। চীফ প্রসিকিউটরসহ প্রসিকিউশন টিমের আইনজীবীদেরকে সমন্বিত করে অর্থ সহায়তা নেন। হয়তো সবটা পারেন নি, তবে চেষ্টা করে যাচ্ছেন। 

অন্যদিকে, করোনার এই সময়ে বাড়ি ভাড়াও পাচ্ছিলো না জাহিদ। অনেক ঝামেলা পার করে বাড়ি ভাড়া করে দিয়েছেন মেহেদী মাসুদ।

অহিদ এখন অল্প স্বল্প হাঁটতে পারে। খেতেও পারে। ডাক্তার বলেছেন- সুস্থ হতে মাস চারেক লাগতে পারে। সাথে লাগবে আরও ৫ লাখ টাকাও। কিন্তু কিভাবে তা সংগ্রহ হবে- জানা নেই জাহিদের। হয়তো কেউ হাত বাড়িয়ে দিবে সাহায্যের। অনেকেই দিয়েছেন ইতোমধ্যেই।

সবার অপরিমেয় সহযোগিতায় সুস্থ হয়ে উঠুক অহিদ। করোনা মহামারির সময়টায় সবাই যখন যুদ্ধ করছি, সে সময় অহিদের পাশে দাড়ানো মানুষগুলো চরম মানবিকতার পরিচয় দিয়েছেন।

অহিদের স্বপ্নটা খুব যত্ন করে আগলে রক্ষা করেছেন তারা। এপিজে আবদুল কালাম বলেছিলেন, যে স্বপ্ন ঘুমিয়ে দেখা হয় সেটা স্বপ্ন নয়, যা মানুষকে ঘুমাতে দেয় না সেটাই স্বপ্ন। অহিদের জন্য স্বপ্ন এখনো দেখে চলেছেন তারা। যে স্বপ্ন বাস্তব রুপ নিবে, সব অমানিশা কেটে যাবে, দেখা দিবে এক চিলতে রোদ!

লেখক- সাংবাদিক।

এনএস/


** লেখার মতামত লেখকের। একুশে টেলিভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে।
Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি