ঢাকা, মঙ্গলবার   ০১ এপ্রিল ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

এক মাসে ৫ বার ভূমিকম্প অনুভূত: ঝুঁকিতে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৩:২৪, ২৯ মার্চ ২০২৫ | আপডেট: ১৩:২৮, ২৯ মার্চ ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

বাংলাদেশে গত এক মাসে পাঁচবার ভূমিকম্প অনুভূত হওয়ায় বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। শুক্রবার দুপুরে মিয়ানমারের মান্দালয় থেকে উৎপন্ন ৭.৩ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প বাংলাদেশে অনুভূত হয়, যা ছিল ঢাকা থেকে ৫৯৭ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এর আগে ৫ মার্চ ভারত-মিয়ানমার সীমান্তে ৫.৬ মাত্রার, ২৭ ফেব্রুয়ারি নেপালের কোদারিতে ৫.৫ মাত্রার, ২৬ ফেব্রুয়ারি ভারতের আসামে ৫.৩ মাত্রার এবং ২৫ ফেব্রুয়ারি বঙ্গোপসাগরে ৫.১ মাত্রার ভূমিকম্প রেকর্ড করা হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপক ড. সৈয়দ হুমায়ুন আখতার বর্তমান পরিস্থিতিকে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, "এটি ঠিক যেমন কাঠের টুকরোতে ক্রমাগত চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে, একসময় এই চাপ বড় ধরনের ভূমিকম্পের মাধ্যমে মুক্তি পেতে পারে।" আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালে বাংলাদেশ ও সংলগ্ন এলাকায় ২৮টি ভূমিকম্প রেকর্ড করা হয়েছিল, যা ২০২৩ সালে বেড়ে দাঁড়ায় ৪১টিতে এবং গত বছর তা আরও বেড়ে ৫৪টিতে পৌঁছেছে।

বাংলাদেশে সর্বশেষ বড় মাত্রার ভূমিকম্প ঘটেছিল ১৭৬২ সালে, যার মাত্রা ছিল ৮.৫ রিখটার স্কেলে। এরপর ১৮৯৭ সালে আসামে ৮.৭ মাত্রার, ১৯১৮ সালে সিলেটের বালিসিরা উপত্যকায় ৭.৬ মাত্রার এবং ১৯৩০ সালে আসামের ধুবড়িতে ৭.১ মাত্রার ভূমিকম্প রেকর্ড করা হয়।

ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রুবায়েত কবীর জানান, তাদের পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা শক্তিশালী করা হয়েছে। ২০০৭ সাল থেকে পর্যবেক্ষণ ইউনিটের সংখ্যা ৪টি থেকে বেড়ে ১৩টিতে উন্নীত করা হয়েছে।

তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন যে, পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা উন্নত হলেও জনসচেতনতা ও অবকাঠামোগত প্রস্তুতির এখনও ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে। তারা ভবন নির্মাণে আধুনিক মানদণ্ড মেনে চলা এবং নিয়মিত ভূমিকম্প ড্রিল পরিচালনার উপর জোর দিয়েছেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্তমান পরিস্থিতিতে সবচেয়ে জরুরি হলো সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা এবং জরুরি পরিস্থিতি মোকাবেলায় পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নেওয়া।

এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ববিদ অধ্যাপক ড. মো. জিল্লুর রহমান বলেন, বাংলাদেশে যদি ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হয় তাহলে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে। তিনি উল্লেখ করেন, দেশের ৯০ শতাংশ ভবন ভূমিকম্প-প্রতিরোধী নয়।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের পরিচালক লে. কর্নেল তাজুল ইসলাম বলেন, ভবন নির্মাণে ভূমিকম্প-প্রতিরোধী নকশা বাধ্যতামূলক করা প্রয়োজন। পাশাপাশি নিয়মিত ড্রিল পরিচালনারও পরামর্শ দেন তিনি। বাংলাদেশে সর্বশেষ বড় ভূমিকম্প হয়েছিল ১৯১৮ সালে, যার মাত্রা ছিল ৭.৬। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ১০০ বছরের বেশি সময় ধরে শক্তি জমা হওয়ায় বড় ভূমিকম্পের আশঙ্কা বেড়েছে।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক মেহেদী আহমেদ আনসারী টেকটোনিক প্লেটের গতিবিধি নিয়মিত পর্যবেক্ষণ এবং ভবন কোড কঠোরভাবে প্রয়োগের পরামর্শ দিয়েছেন। এই ঘটনাকে বাংলাদেশের জন্য একটি সতর্কবার্তা হিসেবে দেখা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ভূমিকম্প নয়, বরং অপ্রস্তুতিই বড় বিপদের কারণ হবে।

এসএস//


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি