একুশে ফেব্রুয়ারির পরেই জমে উঠেছে বইমেলা
প্রকাশিত : ১১:০৯, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০ | আপডেট: ১১:১২, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০
অমর একুশে গ্রন্থমেলা-২০২০। বইমেলা প্রাণের মেলা। লেখক প্রকাশক আর বইপ্রেমীদের এক মিলনমেলা। নতুন বইয়ের গন্ধে মৌ মৌ করছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। আর মাত্র কদিন পরেই শেষ হয়ে যাবে এই প্রাণের মেলা। মেলা শেষ হওয়ার আগেই তাইতো কেনাকাটায় ব্যস্ত ক্রেতারা। ফলে জমে উঠেছে বইমেলা।
প্রতিদিনই প্রকাশিত হচ্ছে লেখকদের নতুন নতুন বই, সামনে আরও আসবে। তবে পাঠকের চাহিদা অনুযায়ী বিষয়ভিত্তক বই মেলায় আনতে পারছেন প্রকাশকরা নাকি প্রকাশকের ইচ্ছের উপরই নির্ভর করতে হচ্ছে পাঠকদের, এমন প্রশ্ন অনেকের।
ইতোমধ্যে মেলায় বেশি পরিমাণে বিক্রীত বইগুলো অনেকটাই দৃশ্যমান। যদিও এবার বেশি বিক্রীত বা বেস্টসেলার বই খুব একটা বেশি নয়। অন্যবারের তুলনায় একটু কমই বলা যায়। বেস্টসেলার বইয়ের মধ্যে উপন্যাসই বেশি। তবে ইতিহাস-ঐতিহ্য-শিল্প-সংস্কৃতির উপর গবেষণামূলক বইয়ের সংখ্যা যেমন কম, তেমনি শিশুসাহিত্য-রম্যসাহিত্যের বইয়ের সংখ্যাও আশার সঞ্চয় করছে না। মেলায় এ পর্যন্ত বিজ্ঞানবিষয়ক নতুন বই এসেছে ৬৮টি, চিকিত্সা বিজ্ঞানবিষয়ক ২৩টি আর সায়েন্স ফিকশন এসেছে ৫৩টি।
মূলত একুশে ফেব্রুয়ারি থেকেই বেড়েছে বইয়ের বিক্রিবাট্টা। এ দিন থেকে নিরাশ হতে হয়নি কাউকেই। টিএসসিসংলগ্ন প্রবেশপথ দিয়ে বইমেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঢুকলে যে কয়েকটি প্যাভিলিয়নের বিক্রয়কর্মীদের অলস সময় কেটেছে গত শুক্রবার থেকে বদলে যায় সেই দৃশ্যপটও।
গতকাল শনিবার অমর একুশে গ্রন্থমেলার ২১তম দিনটি ছিল সাপ্তাহিক ছুটির দিন। সকালে মেলায় ছিল শিশুপ্রহর। সকাল থেকেই বিপুল জনসমাগম ছিল মেলায়।
নতুন বই: এছাড়া গতকাল মেলায় নতুন বই এসেছে ২৪২টি। এর মধ্যে হাসনাত আবদুল হাইয়ের ‘মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাসসমগ্র’ (আগামী), ফরিদুর রেজা সাগরের ‘বল্টু ভুতের গল্প’ (ইতি প্রকাশ), মোহিত কামালের ‘হ্যাঁ’ (বিদ্যাপ্রকাশ), আহমাদ মোস্তফা কামালের ‘পাখির চোখে দেখা’ (সন্দেশ), মজিদ মাহমুদের ‘সাহিত্যচিন্তা ও বিকল্পভাবনা’ (কথাপ্রকাশ), আনোয়ার কবিরের ‘বঙ্গবন্ধু :শত ফুলের কোরাস’ (প্রকৃতি), মোস্তফা সেলিমের ‘সিলেটি নাগরীলিপি সাহিত্যে প্রণয়োপাখ্যান’ (অনিন্দ্যপ্রকাশ), রওশান আরা সিদ্দিকীর ‘বুকের ভিতর নদী’ (উৎস) ইত্যাদি। এ নিয়ে মেলার ২১ দিনে তিন হাজার ৬৩১টি নতুন বই প্রকাশের তথ্য রয়েছে বাংলা একাডেমিতে। একক বিষয় হিসেবে কাব্যগ্রন্থ হাজার ছাড়িয়েছে। গতকাল পর্যন্ত কবিতার বই প্রকাশ পেয়েছে এক হাজার ১৩৬টি।
শিশু-কিশোরদের পুরস্কার প্রদান: সকাল ১১টায় অমর একুশে উদযাপনের অংশ হিসেবে শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন, আবৃত্তি ও সংগীত প্রতিযোগিতায় বিজয়ী শিশু-কিশোরদের পুরস্কার দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আসাদুজ্জামান নূর এমপি। সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী। আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলা একাডেমির সচিব (ভারপ্রাপ্ত) অপরেশ কুমার ব্যানার্জি, অমর একুশে গ্রন্থমেলার সদস্য সচিব ড. জালাল আহমেদসহ সংশ্নিষ্ট কর্মকর্তারা।
আসাদুজ্জামান নূর বলেন, ‘প্রতিটি শিশুর ভেতরেই সৃষ্টিশীল প্রতিভা লুকিয়ে আছে। অভিভাবকদের দায়িত্ব হবে শিশুর এই প্রতিভা বিকাশের জন্য সুন্দর ও অনুকূল পরিবেশ তৈরি করা।’ হাবীবুল্লাহ সিরাজী বলেন, ‘সন্তানদের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত রাখতে পারলে তারা ভবিষ্যতে সুনাগরিক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে এবং বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।’
মঞ্চের আয়োজন: বিকেল ৪টায় অনুষ্ঠিত হয় শামসুজ্জামান খান সম্পাদিত 'বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ : বহুমাত্রিক বিশ্নেষণ' শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ পাঠ করেন মফিদুল হক। আলোচনায় অংশ নেন ড. সোনিয়া নিশাত আমিন, গোলাম কুদ্দুছ ও মামুন সিদ্দিকী। সভাপতিত্ব করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য ড. মুহাম্মদ সামাদ।
কবিকণ্ঠে কবিতা পাঠ করেন কবি অসীম সাহা, মুহাম্মদ সামাদ, মাশুক চৌধুরী, ফরিদ কবির, সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল, মানিক মোহাম্মদ রাজ্জাক, পিয়াস মজিদ ও আলতাফ শাহনেওয়াজ। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ছিল মো. আনোয়ার হোসেনের পরিচালনায় ‘আরশিনগর বাউল সংঘ’ শিল্পীদের পরিবেশনা।
এমএস/
আরও পড়ুন