এন ৯৫ মাস্ক কতক্ষণ পরবেন, যা বলছেন বিশেষজ্ঞরা
প্রকাশিত : ১২:৫২, ১৪ জানুয়ারি ২০২২ | আপডেট: ১৪:২৪, ১৪ জানুয়ারি ২০২২
সারাবিশ্বেই লাফিয়ে বাড়ছে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ। এই পরিস্থিতিতে বিশেষজ্ঞরা বার বার বলছেন নিয়মিত মাস্ক পরার কথা। এই ভাইরাস আটকাতে যে ধরনের মাস্ক সবচেয়ে বেশি কার্যকর বলে দাবি করা হচ্ছে সেটি হল এন ৯৫ মাস্ক। কিন্তু এই মাস্কের চাহিদা যেমন বেশি তেমনই বেশি এর দামও। কাজেই মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষের পক্ষে প্রতিনিয়ত এই মাস্ক জোগাড় করা বেশ কঠিন। অনেকেই আবার প্রশ্ন করছেন এন ৯৫ মাস্কের উপর লেখা রয়েছে, এটি একবার ব্যবহারযোগ্য। তাহলে এই কথাটির কী মানে? এটি কি এক বার ব্যবহার করার পরেই ফেলে দিতে হবে? এসব প্রশ্নেরই উত্তর দিয়েছেন ভার্জিনিয়া টেকের সিভিল এন্ড এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জনিয়ারিংয়ের অধ্যাপক লিন্সে মার।
লিন্সে মার বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত না আপনি ঘষে বা ছিদ্র করে এটি নষ্ট না করছেন ততক্ষণ পর্যন্ত আপনার মাস্কের কার্যকারিতা নষ্ট হবে না।
মূলত দীর্ঘসময় দূষিত বাতাসে থাকার কারণে ধীরে ধীরে এন ৯৫ মাস্কের ফিল্টার করার কার্যক্ষমতা নষ্ট হয়। তবে এ জন্য সর্বোচ্চ দূষিত বাতাসে থাকতে হবে। সুতরাং এটি বলাই যায় যে, আপনি আপনার এন ৯৫ মাস্কটি বেশ কিছুটা সময় পরতে পারেন।
সাধারণত বলা হয়ে থাকে ৪০ ঘণ্টা পর্যন্ত কার্যকর থাকে এন-৯৫ মাস্কের কার্যকারিতা। এটিকে সমর্থন করে লিন্সে মার বলেন যে, তিনিও মনে করেন, ৪০ ঘণ্টা যথেষ্ট।
এই সময়ের পরেই এন ৯৫ মাস্ক আপনার মুখমণ্ডলের তুলনায় ঢিলা অনুভুত হবে এবং এর ফিল্টার করার কার্যক্ষমতাও নষ্ট হতে থাকবে।
অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগতে পারে যে, এন ৯৫ মাস্ক একবার ব্যবহার উপযোগী করে কেন তৈরি করা হয়?
এই প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন ম্যাসাচুসেটস ডার্টমাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞানের সহযোগী অধ্যাপক এরিন ব্রোমেজ। তিনি বলেন, এন-৯৫ মাস্ক মেডিকেল মাস্কের আওতায় পড়ে, যে কারণে এটি একবার ব্যবহারের উপযোগী করেই তৈরি করা হয়েছে।
একজন মেডিকেল কর্মী অবশ্যই একজন রোগীর ঘরে পেশাগত দায়িত্ব পালন শেষে অন্য রোগীর ঘরে যাওয়ার সময় তার মাস্ক ও এপ্রোন পরিবর্তন করেন।
যাতে এক রোগীর কাছ থেকে আরেক রোগীর কাছে ভাইরাস সংক্রমণ না হয়। যে কারণে মেডিকেল কর্মীদের ঘন ঘন মাস্ক ও পোশাক পরিবর্তন করতে হয়। একারণেই এন ৯৫ মাস্ক একবার ব্যবহার উপযোগী করে তৈরি করা হয়েছে এবং এটির গায়ে সেই সতর্কতাটি লেখা রয়েছে।
তবে মেডিকেল উপকরণ হিসাবে তৈরি এই এন ৯৫ মাস্ক যখন কোনও সাধারণ মানুষ ব্যবহার করে, তখন এটি ভাবার কোনও কারণ নেই যে তিনি তার এন ৯৫ মাস্কটি দ্রুত পরিবর্তন না করলে তিনি ভাইরাস ছড়াবেন কিংবা, নিজে ঝুঁকিতে পড়বেন।
কারণ মেডিকেল কর্মীদের মত তিনি কোনও রোগী তথা ব্যাক্তির খুব কাছে যেয়ে কোনও কাজ করছেন না।
এরিন ব্রোমেজ বলেন, আপনি যদি সাধারণ জনগণ হন তবে আপনি চাইলেই একটি এন ৯৫ মাস্ক দুই থেকে তিন দিন ব্যবহার করতে পারেন। তবে সে ক্ষেত্রে আপনাকে অনেক সাবধানী হতে হবে।
অধ্যাপক লিন্সে মার বলেন, এ ক্ষেত্রে মাস্ক পরার সময় সামনের বাইরের অংশ স্পর্শ করা যাবে না। এর পরিবর্তে মাস্কের প্রান্ত বা স্ট্র্যাপ ধরে পরতে হবে।
ভিজে গেলে, ময়লা হয়ে গেলে, মাস্কের মধ্যে ভাঁজ পড়ে গেলে বা অন্য কোনও ভাবে মাস্কটি ক্ষতিগ্রস্ত হলে সেই মাস্ক আর ব্যবহার করা যাবে না।
যত বেশি দিন মাস্ক ব্যবহার করা হবে স্বাভাবিক ভাবেই তত বেশি জীবাণু ও দূষিত পদার্থ আটকে যাবে মাস্কে। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই ক্রমশ অসুবিধাজনক হয়ে উঠবে শ্বাস নেওয়া। বিশেষজ্ঞরা বলছেন যখন মাস্ক পরে শ্বাস নেওয়া অসুবিধাজনক হয়ে যাবে তখনই বুঝতে হবে আর ব্যবহারযোগ্য নেই মাস্ক।
কোভিড আক্রান্ত ব্যক্তির কাছাকাছি থাকলে এক বারের বেশি এই মাস্ক ব্যবহার না করাই শ্রেয়।
এন ৯৫ মাস্ক স্যানিটাইজ করবেন যেভাবে:
মাস্কের ওপরে থাকা ভাইরাস বেশিরভাগ সময় কয়েক ঘণ্টার মধ্যে অটোমেটিক্যালি মারা যায়। তবে তার আগেই আপনার মাস্কাট জীবানুমুক্ত করতে হলে তা সূর্যের আলোতে রেখে দিন।
তবে আপনার এন-৯৫ মাস্কটি অবশ্যই ধুয়ে পরিস্কার করার চেষ্টা করবেন না। কারণ পানির কারণে মাস্কের কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যাবে বলেই জানিয়েছেন লিন্সে মার।
সূত্র: সিএনএন
এসবি/