ঢাকা, শুক্রবার   ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪

এনামুল হক মোস্তফা শহীদ

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২০:৪৭, ১০ মে ২০১৮

১৯৩৮ সালের ২৮ মার্চ সিলেট জেলার তরফ পরগনার বর্তমান চুনারুঘাট উপজেলার উবাহাটা ইউনিয়নের কুটিরগাঁও নামক গ্রামে মরহুম ডা. আব্দুল হকের ঔরসে ও মরহুমা খোদেজা খাতুনের গর্ভে জন্মগ্রহণ করেন। পরবর্তী সময়ে আমরা মরহুম এনামুল হক মোস্তফা শহীদকে তুখোড় রাজনীতিবিদ, বিশিষ্ট আইনজীবী, অদম্য শিক্ষক, মেধাবী সাংবাদিক, সাবলীল সাংস্কৃতিক কর্মী, নাট্যশিল্পী, ভাষাসৈনিক ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক হিসেবে দেখতে পাই।

কুদরতীয়া মাদ্রাসায় বাল্যশিক্ষা সম্পন্ন করে শায়েস্তাগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণিতে অধ্যয়ন করে তিনি ১৯৫২ সালে হবিগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে ম্যাট্রিক পাস করেন। তিনি বৃন্দাবন কলেজ থেকে ১৯৫৬ সালে বিএ পাস করেন। ১৯৭২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করে ১৯৭৬ সালে হাইকোর্টের একজন আইনজীবী হিসেবে সনদপ্রাপ্ত হয়ে আইন পেশায় মনোনিবেশ করেন।

১৯৫২ সালে হবিগঞ্জ ভাষা সংগ্রাম কমিটির অন্যতম আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এই লড়াকু ভাষাসৈনিক ভাষা আন্দোলনসহ মুসলিম লীগ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে বারবার কারাবরণ করেন।

১৯৬০ থেকে ১৯৬৮ সাল পর্যন্ত শিক্ষা সেবার মহান পেশাকে ব্রত মনে করে তিনি হবিগঞ্জ জে. কে. অ্যান্ড এইচ. কে. হাই স্কুলে আট বছর শিক্ষকতা করেন।

তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে ১৯৬৬-এর ছয়দফা আন্দোলন ও ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের আন্দোলনে সরাসরি অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭০-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের একজন তরুণ প্রার্থী হিসেবে প্রথমবারের মতো তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে হবিগঞ্জ মহকুমা সংগ্রাম কমিটির একজন নির্বাহী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক হিসেবে সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদের অন্যতম সদস্য হিসেবে কাজ করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারত থেকে সিএমসি’র স্পেশাল ট্রেনিং গ্রহণ করেন এবং ইয়ুথ ক্যাম্পের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধের সিভিল এয়ারফোর্সের অ্যাডভাইজার হিসেবে কাজ করেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্য ২০১৩ সালে একুশে পদকে ভূষিত হন।

১৯৭০-এর নির্বাচনে প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য হিসেবে তিনি নির্বাচিত হন। পরে ১৯৭৩, ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন। ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত হয়ে সমাজকল্যাণমন্ত্রী হিসেবে ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি শপথবাক্য পাঠ করেন। তিনি হবিগঞ্জ-৪ আসন থেকে মোট ছয়বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

তিনি পূর্ব পাকিস্তানের আর্ট কাউন্সিল হবিগঞ্জ মহকুমা শাখার শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। বহুবিধ নাটকে প্রাণবন্ত ও সাবলীল অভিনয়ের জন্যে সাধারণের কাছে একজন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হন।

লেখক হিসেবে তাঁর লেখা ‘খোয়াই নদীর বাঁকে’ এক অনবদ্য সৃষ্টি। তিনি হবিগঞ্জের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের একমাত্র মুখপত্র মাসিক ‘অভিযাত্রী’র সম্পাদক ছিলেন।

১৯৭৪ সালের ৪ মার্চ এনামুল হক মোস্তফা শহীদ সিলেট জেলার জালালপুর রাইখাইল গ্রামের সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারের মরহুম সৈয়দ মমতাজ আলী ও মরহুমা সৈয়দা কামরুন্নেছা খাতুনের কন্যা সৈয়দা মিনু মমতাজের সঙ্গে বিয়েবন্ধনে আবদ্ধ হন।

২০১৬ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি ৭৮ বছর বয়সে দুই ছেলেসন্তান ও স্ত্রীসহ বহু ভক্ত, শুভাকাক্ষীকে কাঁদিয়ে ঢাকায় একটি হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন।  

 টিকে


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি