ঢাকা, শনিবার   ০৯ নভেম্বর ২০২৪

এনায়েতপুর জুড়ে ভাঙ্গন আতঙ্ক, ক্ষোভ

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ১৪:৫৪, ৩০ জুন ২০২৪

সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর ও পুর্ব শাহজাদপুরে আবারও যমুনার ভাঙ্গন ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। সাড়ে ৬ কিলোমিটার এলাকার বিভিন্ন স্থানে শুরু হওয়া এ ভাঙ্গনে অগণিত আবাদী জমি ও শতাধিক ঘরবাড়ি বিলীন হয়েছে নদী তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের ৬৪৬ কোটি টাকার বাধ নির্মাণ চলমান থাকাবস্থায়। 

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, ২০২২ সাল থেকে শুরু হওয়া চলতি বছরের জুন পর্যন্ত এ প্রকল্পের কাজের মেয়াদ শেষে অগ্রগতি ৫০ শতাংশ। যা আগামী আরও ১ বছর বাড়িয়ে নেয়া হয়েছে। এ নিয়ে ক্ষুব্দ এলাকাবাসীর অভিযোগ, অবহেলায় শুষ্ক মৌসুমে কাজ না করে নানা অনিয়ম এবং দুর্নীতির কারণেই প্রকল্পের অগ্রগতি মন্থর। এজন্য ঘরবাড়ি হারিয়ে এর মাশুল গুনতে হচ্ছে স্থানীয়দের।    

জানা যায়, গত ১২ বছর ধরে নদী ভাঙ্গনে বিপর্যস্ত চৌহালী উপজেলার এনায়েতপুর থেকে দক্ষিণে শাহজাদপুরের মোনাকষা পর্যন্ত নদীর ডানতীরের ৩টি ইউনিয়নের সাড়ে ৬ কিলোমিটার। নদীর এই ভাঙ্গন ঠেকাতে সরকার ৬৪৬ কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করলে ২০২২ সালের শুরু থেকে বালু ভরে জিও ব্যাগ ফেলা হয় ব্রাক্ষ্মণগ্রাম, আড়কান্দি, জালালপুর, ভেকা, পাঁচিল, মনাকষা এলাকায়। 

তবে নদীর স্রোতে তা টিকতে না পারায় এসব জিও ব্যাগসহ নদী পাড়ের হাজারো ঘরবাড়ি বিলীন হয়। এরপর আবারও একই ভাবে বস্তা ফেলে এলাকা রক্ষার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে পাউবোর এই প্রকল্পের ১৯টি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। 

এর মধ্যেই প্রকল্পের সিসি ব্লক তৈরি হলেও চলতি বছরে তা তীর সংরক্ষণে ব্যবহার হয়নি। মাস খানেক আগে উজানে পাহাড়ী ঢলে নদীতে পানি বৃদ্ধির ফলে প্রকল্প এলাকার সর্ব দক্ষিণ মনাকষা থেকে পাঁচিল হয়ে ভেকা, সৈয়দপুর জালালপুর, দ্বাদশপট্টি, আড়কান্দি, ব্রাক্ষ্মণগ্রামে দেখা দিয়েছে নদী ভাঙ্গন। এর মধ্যে পাঁচিল, ভেকা, জালালপুর, দ্বাদশপট্টি এলাকায় ভাঙনের মাত্রা বেশি। মুহূর্তের মধ্যেই বিলীন হচ্ছে ঘর-বাড়ি ও শত-শত একর আবাদী জমি।

এছাড়া  শতাধিক পরিবার সরিয়ে নিয়েছে তাদের চিরচেনা বসতি। পুরো এলাকা জুড়ে দেখা দিয়েছে চরম ভাঙ্গন আতঙ্ক। এখানে কিছু-কিছু জিও ব্যাগ ফেললেও তা কাজ দিচ্ছেনা। এ জন্য ক্ষোভ স্থানীয়দের।

এ ব্যাপারে জালালপুর গ্রামের নদী ভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্ত আব্দুস ছালাম, পাকড়তলা গ্রামের ডাঃ ফজল আহমেদ, আকছেদ আলী, লালমিয়া, ভেকা গ্রামের সুজাব আলী আক্ষেপ করে জানান, কিছু দিন আগে আমাদের সবার ঘর-বাড়ি নদীতে বিলীন হয়েছে। এখন কোন রকমে অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে আছি। চলতি মৌসুমে আমাদের এলাকার অন্তত ৩ শতাধিক ঘর-বাড়ি নদীতে বিলীন হয়েছে। আমরা এখন ভূমিহীন অসহায় মানুষ। পরিবার নিয়ে আমাদের দুর্দশা চললেও কেউ আমাদের পাশে দাঁড়ায়নি। 

তারা অভিযোগ করে জানান, যদি পাউবোর ঠিকাদাররা কাজ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ করতো, তাহলে সর্বনাশ হতো না। যে কাজ হয়েছে তা অনিয়ম দুর্নীতিতে ভরা। এখন আমাদের উপায় হবে কি।  

এ ব্যাপারে জালালপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হাজী সুলতান মাহমুদ জানান, নদী ভাঙ্গনে খুকনী, কৈজুরী ও জালালপুর ইউনিয়ন খুবই ক্ষতিগ্রস্ত। এর মধ্যে আমাদের জালালপুর ইউনিয়নের অন্তত ৫/৬টি গ্রাম নদীতে কয়েক বছরে বিলীন হয়েছে। ভাঙ্গনে নিঃশ্ব হচ্ছে মানুষ। পানি উন্নয়ন বোর্ড ও ঠিকাদাররা বাধ নির্মান প্রকল্পের ৩ বছরেও শেষ করেনি কাজ। এজন্য আমরা সবাই ব্যথিত।

প্রকল্পের বাস্তবায়ন নিয়ে সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ মাহবুবুর রহমান জানান, এলাকার সাড়ে ৬ কিলোমিটার নদীর ভাঙ্গন রোধে নানা উদ্যোগের মধ্যে নদীর গতিপথ পূর্ব পাশে প্রবাহিত করতে খনন চলছে। পাশাপাশি বড় জিও টিউব ফেলা হচ্ছে। এছাড়া কাজের মেয়াদ আরও ১ বছর বাড়িয়ে ২০২৫ সালের জুন করা হয়েছে। 

বন্যার পানি নেমে যাবার পর সিসি ব্লক দিয়ে পুরো বাধ নির্মিত হলে এলাকা রক্ষা পাবে বলে জানান তিনি।

এএইচ


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি