ঢাকা, মঙ্গলবার   ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪

এবার প্যারাডাইজ পেপারস কেলেঙ্কারিতে শতাধিক ক্ষমতাধরের নাম

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০২:০৪, ৬ নভেম্বর ২০১৭ | আপডেট: ০২:০৫, ৬ নভেম্বর ২০১৭

পানামা পেপার্স কেলেংকারির রেশ কাটতে না কাটতেই আবারও ধাক্কা খেল বিশ্ব। আরেকটি আর্থিক কেলেঙ্কারির তথ্য ফাঁস হয়েছে আজ। বারমুডার একটি ল’ ফার্মের এক কোটির বেশি ফাঁস হওয়া গোপন নথিতে রয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের নাম। ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, এমনকি বিশ্বজুড়ে মহানায়ক বনে যাওয়া কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর নামও বাদ যায়নি। প্রায় ১৪ কোটি গোপন নথি ফাঁস হওয়া এই কেলেঙ্কারির নাম দেওয়া হয়েছে প্যারাডাইজ পেপারস।

এসব ব্যক্তি ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের গোপনে বিপুল পরিমাণ অর্থ করস্বর্গ হিসেবে পরিচিত দেশ ও অঞ্চলের অফশোর কোম্পানিতে বিনিয়োগের তথ্য বেরিয়ে এসেছে।

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্যমন্ত্রীর মালিকানার একটি কোম্পানির যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা রুশ কোম্পানির সঙ্গে লেনদেন করছে বলে এতে উঠে এসেছে।

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছর ফাঁস হওয়া পানামা পেপার্সের মতো এবারও এসব নথি প্রথমে জার্মান দৈনিক সুইডয়চে সাইটংয়ের হাতে আসে। সেসব নথি ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অফ ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টসকে (আইসিআইজে) দিয়েছে তারা।

আইসিআইজে- এর কাছ থেকে সেসব নথি পেয়েছে বিবিসি, গার্ডিয়ানসহ বিভিন্ন দেশের ১০০টি সংবাদমাধ্যম।এখন চলছে এসব নথির বিশ্লেষণ।

এসব নথিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কয়েকশ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কর ফাঁকি ও গোপন আর্থিক ব্যবস্থাপনার তথ্য উঠে এসেছে, যার ক্ষুদ্র একটি অংশ রোববার প্রকাশিত হয়েছে বলে বিবিসি বলছে।

রাজনীতিবিদ, দ্বৈতনাগরিক, উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষাকারী ও সেলিব্রেটিরা কীভাবে কর ফাঁকি দিতে বা গোপনীয়তার আবরণে নিজেদের লেনদেন ঢাকতে জটিল কাঠামোর ট্রাস্ট, ফাউন্ডেশন ও শেল কোম্পানি গড়ে তুলছেন, তা উঠে এসেছে অনেক নথিতে। ৬৭টি দেশের ৩৮০ জন সাংবাদিক ১ কোটি ৩৪ লাখ ডকুমেন্টস এখন তদন্ত করে দেখছে।

অধিকাংশ তথ্যই বিভিন্ন দেশের রাজনীতিবিদদের। যারা কর থেকে বাঁচার জন্য বিভিন্ন ট্যাক্স হেভেনে (কর দিতে হয় না কিংবা খুবই নিম্ন হারে কর দেওয়া যায় এমন দেশ) বিনিয়োগ করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। তদন্তের এখনো শুরু মাত্র। তাই পুরো তথ্য পাওয়া এখনো সম্ভব নয়। তবে এর মাঝেই চমকে দেওয়ার মতো কিছু তথ্য দিয়েছে বিশ্বের বড় বড় সব সংবাদমাধ্যম।

রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ

ফাঁস হওয়া গোপন নথিতে দেখা গেছে কেম্যান আইল্যান্ড ও বারমুডায় রানির নামে আলাদা তহবিল সৃষ্টি করা হয়েছে। প্রায় ১ কোটি পাউন্ড পরিমাণের গোপন অর্থের হিসেব পাওয়া গেছে। এ দুটো জায়গায় রানির ৫০ কোটি পাউন্ডের ব্যক্তিগত সম্পত্তি দেখভাল করে ডাচি অফ ল্যাঙ্কাস্টার। ডাচি দাবি করছে, তারা বিনিয়োগ বিষয়ক কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ায় জড়িত ছিল না। এবং রানি নিজে এ ব্যাপারে জানেন এমন কোনো ইঙ্গিতও দেওয়া হয়নি।

যদিও এই বিনিয়োগে বেআইনি নয়, বা বলা হয়নি রানি কর দিচ্ছেন না। কিন্তু রাজপরিবারের নিয়ম হচ্ছে তারা অন্য দেশে বিনিয়োগ করতে পারবেন না। এ ছাড়া ব্রাইট হাউস নামে একটি প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগের তথ্য পাওয়া গেছে। যারা দরিদ্রদের নিষ্পেষিত করছে বলে অভিযোগ আছে। প্রায় ১ কোটি ৭৫ লাখ পাউন্ড কর বকেয়া আছে এই প্রতিষ্ঠানের। ৬ হাজার লোক তাঁদের চাকরি হারিয়েছে।

ডোনাল্ড ট্রাম্প

ট্রাম্প প্রশাসনে বাণিজ্যসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন উইলবার রস। নব্বইয়ের দশকে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করেছিলেন বলেই রস এমন গুরুত্বপূর্ণ একটি পদ পেয়েছেন। অন্তত মার্কিন মল্লুকে এমন জনশ্রুতি আছে। বিভিন্ন নথিতে দেখা গেছে রস এমন এক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত, যারা রাশিয়ান সংস্থাকে তেল ও গ্যাস শিপিং করে। যে প্রতিষ্ঠানে অংশীদার ভ্লাদিমির পুতিনের জামাই এবং আরও দু’জন ব্যক্তি যারা যুক্তরাষ্ট্রের চোখে অপরাধী।

জাস্টিন ট্রুডো

কানাডীয় প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর নির্বাচনে আর্থিকভাবে সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা করেছেন স্টেফান ব্রনফম্যান। মাত্র দুই ঘণ্টায় ট্রুডোকে আড়াই লাখ ডলার তহবিল এনে দিয়েছিলেন ব্রনফম্যান। কিন্তু ফাঁস হওয়া গোপন নথিতে দেখা যাচ্ছে, ব্রনফম্যান ও তাঁর প্রতিষ্ঠান কেম্যান আইল্যান্ডে প্রায় ৬ কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছেন। অথচ ট্রুডো বারবারই ‘অফশোর’ (কর থেকে বাঁচার জন্য বিদেশে বিনিয়োগ) বিনিয়োগের বিপক্ষে নিজের অবস্থান তুলে ধরেছেন। ট্রুডোর জন্য এটা বিরাট বড় এক ধাক্কা।

এর আগে পানামা পেপারস কেলেঙ্কারিতে আর্জেন্টাইন ফুটবলার লিওনেল মেসির নাম এসেছিল। এবারও ফুটবল বাদ পড়েনি। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ক্লাব এভারটন এফসিতে বিনিয়োগ করা বড় একটা অংশ নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে। 

সূত্র: বিবিসি, নিউইয়র্ক টাইমস।


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি