ঢাকা, সোমবার   ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

এবারের রমজান হোক করোনা আতঙ্ক জয়ের

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৮:০৯, ২৫ এপ্রিল ২০২১

করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ে আতঙ্কের এক অভূতপূর্ব অবস্থায় অতিবাহিত হচ্ছে পবিত্র মাহে রমজান। সংক্রমণ ঠেকাবার উপায় হিসেবে মানুষকে বাসায় থাকতে হচ্ছে। কিছু মানুষ আক্রান্ত, বাকিরা আতঙ্কিত। আবার অনেক নিম্নআয়ের মানুষের জীবন ও জীবিকার দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।

এই আতঙ্ক, অস্থিরতা, অনিশ্চয়তার মধ্যেই দান করে কীভাবে এবারের রমজান আপনার জীবনকে প্রশান্তি ও নিশ্চয়তায় ভরিয়ে তুলতে পারি তা জানাতেই এ নিবন্ধ।

ধর্মীয় বিধিমতে মুসলমান সাবালক হলে, রোজা রাখার শারীরিক সামর্থ্য থাকলে, ভ্রমণরত না থাকলে এবং অসুস্থ, আহত,
মাতৃদুগ্ধদানরত বা গর্ভবতী না হলে তার জন্যে রোজা ফরজ। এসব সঙ্গত কারণ ছাড়া কেউ যদি রোজা না রাখেন, তাহলে
ধর্মের বিধান অনুযায়ী তাকে কাফফারা দিতে হবে। 

হে বিশ্বাসীগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন করা হয়েছিল তোমাদের পূর্বসূরিদের ওপর। যাতে তোমরা
আল্লাহ-সচেতন থাকতে পারো। [সূরা বাকারা, আয়াত- ১৮৩]

কোরআন নাজিলের আগে রমজান ছিল অন্য এগারটি মাসের মতোই একটি সাধারণ মাস। কিন্তু যখন কোরআন নাজিল হলো, রমজান একটি গুরুত্বপূর্ণ মাস হিসেবে বিবেচিত হতে লাগল, এমনকি স্বয়ং আল্লাহর কাছেও।

মানবজাতির ওপর কোরআন নাজিলকে আল্লাহ নিজেও গুরুত্বপূর্ণ গণ্য করেছেন। আর সেজন্যেই রমজান মাসটিকে তিনি শুধু অন্য এগার মাস নয়, হাজার মাসের চেয়েও বেশি মর্যাদাপূর্ণ বলে বলেছেন।

রমজানে আল্লাহ যে-কোনো সুন্নত কাজের সওয়াব ফরজ কাজের সমান করে দেন। আর একটি ফরজের সওয়াবকে ৭০টি ফরজের সমান করে দেন।

তার মানে তিনি কোরআন নাজিল করেছেন এবং সেই আনন্দে তার বান্দাদেরকে এই সুবিধা দিতে চাচ্ছেন যে, এই মাসে তোমরা বেশি বেশি ভালো কাজ কর। কারণ, কাজের তুলনায় বিনিময় তোমরা অন্য সময়ের তুলনায় অনেক বেশি পাবে।

একজন সাধারণ শ্রমিক যদি কিছু বাড়তি মজুরির আশায় ওভারটাইম পাওয়ার আশায় তার দুনিয়ার পরিশ্রমকে কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিতে পারে,  তাহলে একজন বিশ্বাসী যখন জানতে পারে যে রোজার মাসে তার যে-কোনো ভালো কাজের প্রতিদান আল্লাহ অন্তত ৭০ গুণ বাড়িয়ে দিতে চেয়েছেন, তখন তার দৃষ্টিভঙ্গি কী হওয়া উচিৎ? পরিশ্রম কী মাত্রার হওয়া উচিৎ?

আর ৭০ আসলে একটি রূপক। এর মানে এর গুণন হতে পারে অগুণতি। রমজানে তাই ভালো কাজ বাড়াতে হবে।

‘মহাবিচার দিবসে তোমাদের প্রত্যেকের সাথেই তার প্রতিপালক কথা বলবেন। এই কথাবার্তায় কোনো দোভাষী থাকবে না। যখন ডানে তাকাবে, তুমি তখন তোমার অতীত ভালো কাজ দেখতে পাবে। বামে তাকালে তুমি তোমার অতীত মন্দ কাজ দেখবে। আর সামনে দেখবে জাহান্নামের লেলিহান আগুন। তাই সময় থাকতে, এমনকি এক টুকরা খেজুর দান করে হলেও নিজেকে বাঁচাও। আর তা-ও যদি না পারো, তবে হাসিমুখে কথা বলে, ভালো কথা বলে ও ভালো ব্যবহার করে নিজেকে জাহান্নাম থেকে বাঁচাও।’ - আদী ইবনে হাতিম (রা); বোখারী, মুসলিম

‘আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যে দান করলে সেই সাদাকা বা দান গ্রহীতার হাতে পৌঁছার আগেই আল্লাহর কাছে পৌঁছে যায়।’- তাবারানী

রমজানে আমাদের প্রস্তুতিটা তাই এরকম থাকা উচিত যে, ফরজগুলো আমরা মনোযোগের সাথে আদায় করবই। আর সুন্নত কাজসহ যত কাজ আছে কোনোটাই যাতে এ মাসে বাদ না পড়ে। এগারোটি মাসে যেসব কাজে গাফলতি করেছি সেসব যেন রমজান মাসে করতে পারি।

-এ মাসের প্রথম ১০ দিন রহমতের, পরের ১০ দিন মাগফেরাতের আর শেষ ১০ দিন নাজাত অর্থাৎ জাহান্নাম থেকে মুক্তির।
এই সময়গুলোতে এই প্রাসঙ্গিক দোয়া বেশি বেশি করতে হবে।

-নবীজী (স) বলেন- এ মাসে এমন একটি রাত (শবে কদর) আছে যা হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। তাই রমজানের শেষ ১০
দিনের প্রত্যেক বেজোড় রাতকে কদর এর মহিমান্বিত রাত মনে করে ফজর না হওয়া পর্যন্ত ইবাদতে মগ্ন থাকুন, ডুবে যান
কোরআনের মর্মবাণীর গভীরে।

রমজান যেহেতু কোরআন নাজিলের কারণে বিশিষ্ট, এ মাসে তাই যতবেশি কোরআন অনুধাবনে ব্যয় করা যাবে তত উত্তম। আর একজন বিশ্বাসীর জন্যে কোরআন কল্যাণ ও নিরাময় বয়ে আনে-

“বিশ্বাসীর জন্যে কোরআন হচ্ছে শেফা ও রহমতস্বরূপ” (সূরা বনি ইসরাইল, আয়াত ৮২)। এ নিরাময় শারীরিক, মানসিক,
আত্মিক এবং সামাজিক।

এই রমজানে এ কোরআনের গভীরেই আপনি ডুবে যান। করোনাসহ সকল বালা-মুসিবত থেকে পরিবার থাকবে আল্লাহর রহমতের ছায়ায়। কারণ আপনি জানেন, কোরআনের জ্ঞান যেখানে অনুশীলন হয় ফেরেশতারা সেখানে আল্লাহর রহমত বর্ষণ করে। 

রমজান মাসে আমাদের অনেকেরই বাজেট বেড়ে যায়। কেন? কারণ অন্য সময় আমরা যা খাই, রমজানে তার চেয়ে বেশি খাই। খাওয়া-খরচ বেশি হবে রমজানে- এটা আমরা ধরেই নিই। অথচ ধর্ম বলে এহেন আচরণ রমজানের উদ্দেশ্যের সম্পূর্ণ খেলাফ। রমজান মাসে অতিরিক্ত কোনো বাজার বা বাজেট রাখার প্রয়োজন নেই। এটা জাহেলিয়াত। রমজানের সময় বাড়াতে বলা হয়েছে ভালো কাজ। তাই রমজান হোক দানের মাস, সেবার মাস।

তাছাড়া ‘ইফতারি’ নামের ভাজাপোড়া গরম গরম পরিবেশন করার তাগাদা থেকে রমজানে বেশিরভাগ গৃহিণীর বিকেল থেকে পুরো সময়টা কাটে রান্নাঘরে। ইফতারের দোয়া করার সুযোগটাও উনি পান না। তাহলে কী হলো? ভ্যারাইটিজ ইফতার খেতে গিয়ে নিজের জীবনে বারোটা বাজল, দোয়ার মৌসুম হারিয়ে গেল। কাজেই রোজা রাখছি বলে ভালো ভালো খেতে হবে, ভোররাতের জন্যে আলাদা রান্না করতে হবে- এসব ভাবনার সাথে প্রকৃত ধর্মীয় চেতনার কোনো সম্পর্ক নেই। সারাবছর যেভাবে খেতেন এমাসেও সেভাবে খান। তাছাড়া করোনাকালের এ সময়ে অতিভোজন আপনার শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাবে। ভয়াবহ রকমের অসুস্থ্য হয়ে যেতে পারেন। ভোজনবাহুল্য বর্জন করুন, বেঁচে যাওয়া করোনার শিকার নিরন্ন মানুষের পাশে দাঁড়ান।

বরং এখন করোনাভাইরাসের কারণে দেশজুড়ে ব্যাপকসংখ্যক নিম্নবিত্ত মানুষ যেভাবে উপার্জনহীন-নিরন্ন হয়ে পড়েছে তাদের কথা চিন্তা করে আরো সংযমী, মিতাচারী হোন।

ইফতারের মেনু দুই-তিন আইটেমে সীমিত রাখুন। বেঁচে যাওয়া অর্থ নিরন্ন এই মানুষের কাজে লাগাবার মতো করে দেয়া-এটাই হোক এবার রমজানে আপনার সাধনা।
  
ইফতারে কী খাবেন? মাগরিবের আজান দিলে খেজুর খেয়ে পানি পান করুন; শরীরে আসবে তাৎক্ষণিক প্রাণশক্তি। চিনির
শরবতেরও প্রয়োজন নেই।

-নামাজ পড়ে রাতের খাবার খেয়ে নিন। খাবারে ভাত, শাকসবজি, মাছ বা মাংস বা ডিম ও ডালসহ অন্যান্য সুষম খাবার,
সালাদ, লেবু, ছোলা ও টক দই রাখুন।

-পেঁয়াজু, চপ, বেগুনি, পাকোড়ার মতো ভাজাপোড়া খাবেন না। হজমের অসুবিধা, বুক জ্বালাপোড়া ও এসিডিটির সমস্যা হতে পারে। পোলাও, বিরিয়ানি, তেহারি, মোগলাই, হালিম, চাইনিজ, গরু ও খাসির গোশত এ মাসে যত কম খান তত ভালো।

-ভাইরাস সংক্রমণের আশঙ্কার এসময়ে বেশি বেশি ভিটামিন সি-যুক্ত ফল খাওয়ার চেষ্টা করুন। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে।

-প্রোটিন পানির তৃষ্ণা বাড়ায়। সেহরিতে তাই মাছ-মাংস বর্জন করুন। খিচুড়ি, ডিম, ডালও খাবেন না। সামান্য ভাত-সবজি বা কলা-খেজুর বা দই-চিড়া খান।

-তবে একেবারে কিছুই না খাওয়া, অর্থাৎ ইচ্ছাকৃতভাবে সেহরি বর্জন- এটা করবেন না।

-রমজান খাদ্য সংযমের মাস, খাদ্য উৎসবের নয়। করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে সমাজের যে বিপুলসংখ্যক মানুষ উপার্জনহীন হয়ে পড়েছেন, তাদের প্রতি সমবেদনা জানাতে নামী-দামী হোটেলের খাবার বর্জন করুন একেবারেই।

এএইচ/


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি