এভাবে আর কত কাল ...
প্রকাশিত : ১২:২৮, ৯ অক্টোবর ২০১৯
বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে মেধাবীদের কারখানা। প্রাথমিক, মাধ্যমিক বা উচ্চমাধ্যমিকে মেধার যে বীজ বপন করা হয়, তার উন্নত ও উর্বর ফলন ঘটে এখানে। এ অঙ্গনে শুধুই মস্তিষ্কের খেলা চলে। এখানে শিক্ষার্থীরা নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা করে না, তারা প্রতিযোগিতায় মত্ত হয় বইয়ের সঙ্গে নিজের মেধার। ছোট বেলায় স্কুল-কলেজে যে শিক্ষা লাভ করা হয়, তার উচ্চতর জ্ঞানের প্রতিফলন ঘটে এখানে। কিন্তু মাঝে মধ্যেই আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার চিত্র ফুটে উঠছে। যা আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অভিভাবকরা তাদের মেধাবী সন্তানকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পাঠাতে ভয় পাচ্ছে।
এখানে ছাত্ররাজনীতি, বৈরিতা ও মাদকের ভয়াবহতা মেধাবীদের মেধার বিকাশে বাঁধা সৃষ্টি করছে। যদিও দেশের ইতিহাসে এইসব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই নিজেদের অংশগ্রহণে প্রতিবারই বিশেষ ভূমিকা রেখেছে। সেই ৫২ ভাষা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধ ও যুদ্ধাপরাধিদের বিচারের আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ভূমিকাই বেশি। এখনও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রশাসনের অসৎ উদ্দেশ্য ও কর্মকাণ্ড মোকাবেলায় ছাত্ররাই মাঠে নামছে। এমনকি তাদের প্রতিবাদের মুখে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বাধ্য হচ্ছে অপরাধ স্বীকার করে পদত্যাগ করতে। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে, যেকোন অনৈতিক কর্মকাণ্ড প্রতিহত করতে, নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় শিক্ষার্থী মাঠে নামবে এটা স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় এক শিক্ষার্থী আরেক শিক্ষার্থীর উপর চরাও হবে, হত্যার মত জঘন্য কাজে লিপ্ত হবে তা কোনভাবেই কাম্য নয়। অথচ এই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে যে হত্যার রাজনীতি চলে তাতে একটি পর্যায়ে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে- পরিবার, রাষ্ট্র, প্রতিষ্ঠান, শিক্ষার পরিবেশ, তথা সমগ্র শিক্ষার্থীরা।
নতুন করে ‘আবরার হত্যা’ আবারও সেই নোংরা ছবিটিকে সামনে নিয়ে আসলো। এর আগেও বিশ্ববিদ্যালয়ের সবুজ ক্যাম্পাস রক্তের দাগে রঙিন হয়েছে। সেই হত্যাগুলোর প্রতিবাদ হয়েছে কিন্তু অধিকাংশের বিচার হয়নি। কিছু হত্যার দাগ এখনও শুকায়নি।
এবার ‘আবরার হত্যা’ যেনো সবাইকে জাগিয়ে তুলেছে। এখানে কোন রাজনৈতিক বিবেচনায় নয়, কোন রাজনৈতিক প্রতিহিংসা নয়, কাউকে আক্রমন করার উদ্দেশ্যে নয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) হচ্ছে- মেধাবিদের চেয়েও মেধাবি শিক্ষার্থীদের বসবাস। ধ্যানে, জ্ঞানে, চিন্তা, চেতনায় তারা শুধুই মেধার চর্চায় লিপ্ত। অথচ সেখানেও আক্রমন? সেখানেও নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ড। এ হত্যাকাণ্ড মেনে নেওয়া যায় না। এতো নিজের ভাইকে হত্যার মতই!
বর্তমান সরকার, বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অন্যায় ও অপকর্মের বিরুদ্ধে সোচ্চার ভূমিকা রাখছেন। অপরাধী যেই হোকনা কেনো তাকে তিনি ছাড় দিচ্ছেন না। তার একটাই কথা ‘অন্যায় করে কেউ পার পাবে না’। তিনি যে ‘আবরার হত্যা’র বিষয়ে কঠোর হবেন তাতে কোন সন্দেহ নেই।
২০১০ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এফ রহমান হলে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে নির্মমভাবে খুন হন মেধাবী ছাত্র আবু বকর। সে কথা সবার জানা আছে।
একই ভাবে ২০১২ সালের ১২ মার্চ অভ্যন্তরীণ কোন্দলে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবদুল আজিজ খান সজীব খুন হন।
২০১৪ সালের ১৪ জুলাই ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জেরে প্রকাশ্যে খুন হন যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ ও বিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র নাইমুল ইসলাম রিয়াদ।
একই বছর ২০ নভেম্বর শাহজালাল বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের বন্দুকযুদ্ধে প্রাণ হারান ছাত্রলীগ কর্মী ও সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী সুমন দাস।
এরকম অসংখ্য হত্যা আমরা দেখেছি। যারা এই হত্যার সঙ্গে জড়িত তাদের কি হয়েছে? তাদেরও বা কি লাভ হয়েছে এই হত্যাগুলো করে? কি পেয়েছেন হত্যাকারিরা? খুব বড় কিছু হতে পারেননি কেউ ই। বরং বাবা-মায়ের আহাজারি দেখেছি। এক একটি স্বপ্নের অপমৃত্যু ঘটেছে।
‘আবরার হত্যা’র ঘটনায় শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে খুনিদের ফাঁসি, সাত দিনের মধ্যে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করাসহ ৮ দফা দাবি উত্থাপন করে আন্দোলন করছেন। এ হত্যা জাতিকে নাড়িয়ে দিয়েছে। সবাই নড়েচড়ে বসেছেন। কিছু দিনের মধ্যে সবই থেমে যাবে। আসামীরা ধরা পড়ছে। বিচারও হয়তো হবে! কিন্তু এর দীর্ঘস্থায়ী সমাধান কি? ছাত্র রাজনীতির নামে এই নির্মমতা থামবে কবে?
আমরা আর এমন চিত্র দেখতে চাই না। কোন পরিবারের স্বপ্নকে বিলিয়ে দিতে চাই না। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শুধুই মেধার চর্চা দেখতে চাই।
এসএ/
** লেখার মতামত লেখকের। একুশে টেলিভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে।