এরশাদের কবর নিয়ে উত্তেজনা!
প্রকাশিত : ১২:০৭, ১৬ জুলাই ২০১৯ | আপডেট: ১২:০৭, ১৬ জুলাই ২০১৯
সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এবং সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা হুসেইন মুহম্মাদ এরশাদের দাফন হবে আজ। কিন্তু শেষ ঠিকানা কোথায় হবে তা নিয়ে দলটির মধ্যে উত্তেজনা এখন প্রকাশ্য রুপ নিয়েছে।
গত রোববার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ৯১ বছর বয়সী সাবেক এ সেনাপ্রধান ও রাষ্ট্রপতি। ওই দিনই গণমাধ্যমে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এরশাদের স্ত্রী, জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় উপনেতা রওশন এরশাদ জানিয়েছিলেন, এরশাদকে সামরিক কবরস্থানে দাফন করা হবে।
এরশাদের ভাই জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জি এম কাদেরও রওশনের সঙ্গে একমত হয়ে বলেছিলেন, ভাইয়ের (এরশাদের) শেষ চাওয়া অনুযায়ী তাকে সামরিক কবরস্থানেই সমাহিত করা হবে।
কিন্তু বাধ সাধে এরশাদের জন্মস্থান রংপুর জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা। তারা কোনভাবেই এরশাদকে রংপুর ছাড়া অন্যস্থানে দাফন করাতে রাজি নন।
রোববার ঢাকা ক্যান্টমেন্টের মসজিদে তার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরদিন সোমবার জাতীয় সংসদ ও বায়তুল মোকাররম মসজিদে দ্বিতীয় ও তৃতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। আজ রংপুরে চতুর্থ জানাজা শেষে বনানীর সামরিক হাসপাতালে দাফন করার কথা।
কিন্তু ইতোমধ্যে রংপুরে এরশাদের দাফনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন সেখানকার জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা। ইতিমধ্যে এরশাদের পল্লী নিবাসের লিচু বাগানে কবরও খনন করা হয়ে গেছে।
মঙ্গলবার বেলা ১১টায় এরশাদের মরদেহ বহনকারী হেলিকপ্টার রংপুর সেনানিবাসের হ্যালিপ্যাডে অবতরণ করেছে। সেখান থেকে তাকে নেয়া হবে রংপুর কালেক্টরেট ঈদগাহ মাঠে।
সেখানে সর্বস্তরের মানুষ তার কফিনে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন এবং তাকে শেষবারের মতো দেখবেন। বাদ জোহর তার জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। জানাজার সব প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হয়েছে।
স্থানীয় জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, এরশাদের জানাজায় ইমামতি করবেন রংপুর করিমিয়া নুরুল উলুম মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা মুহম্মদ ইদ্রিস আলী। তাকে সমাহিত করতে পল্লী নিবাসের লিচু বাগানে প্রস্তুত করা হয়েছে কবর। তবে দলের পূর্ব সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জানাজা শেষে এরশাদের মরদেহ ঢাকায় নিয়ে গিয়ে বনানীর সামরিক কবরস্থানে দাফন করার কথা রয়েছে।
রংপুর মহানগর জাতীয় পার্টির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লোকমান হোসেন বলেন, জানাজা শেষে স্যারের (এরশাদ) মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে পল্লী নিবাসে। সেখানে লিচুতলায় তাকে দাফন করা হবে। এ জন্য সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।
এদিকে এরশাদের কবর নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন তার সাবেক স্ত্রী বিদিশা। গতকাল সোমবার দেয়া এক স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন, বেঁচে থাকাকালীন সময়ে এরশাদ রংপুরের পল্লী নিবাসে কবর দেয়ার অনুভূতি ব্যক্ত করেন। যেন তার কবরে এসে রংপুরের মানুষ দোয়া করতে পারে।
স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন, ‘তাই যেন হয়, আমি ও তাই চাই লক্ষ লক্ষ নেতাকর্মীদের মতো রংপুরের মাটি যেন হয় এরশাদের শেষ ঠিকানা। সহধর্মীনী থাকতে বহুবার পল্লী নিবাসে বারান্দায় ছেলে এরিককে কোলে বসিয়ে উনি আমাকে বলেছিলেন, তুমি আমার ছোট, দেখ আমার মৃত্যু ও যেন আমার ছেলের কাছে থেকে দূরে না রাখে। আমার কবর আমি এই পল্লী নিবাসে চাই।
রংপুরের মানুষের ভালোবাসার প্রতিদান আমি দিতে পারিনি আজও। রংপুরের মানুষ আমার কবরে এসে দোয়া করবে এটাই আমার চাওয়া। প্রতিবার এই কথাটি বলতেন তিনি এরিকের দিকে তাকিয়ে, ভিজে চোখে। আজ সদ্য বাবা হারা ছেলে আমার মায়ের আশ্রয়েও নেই। এরিকের চোখের পানিতে পাথরও গলে যায় কিন্তু গলেনা রাজনীতিবিদদের মন। আমার ছেলে এরিককে আটকিয়ে রাজনীতি কোন ফায়দা লুটবেন এনারা?’
এদিকে, এরশাদের জানাজা ও দাফন নিয়ে যাতে আইনশৃঙ্খলার অবণতি না ঘটে, সে জন্য উত্তরের জেলাগুলোতে বিশেষ করে এরশাদের জন্মস্থান রংপুরে বাড়তি নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার আবদুল আলিম মাহমুদ।
তিনি বলেন, জাতীয় পার্টির দুর্গ হিসেবে পরিচিত রংপুরে এরশাদের জানাজা উপলক্ষে ব্যাপক লোক সমাগম হবে এটিই স্বাভাবিক।
বিশৃঙ্খলা হলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী হিসেবে যা করা দরকার তাই করা হবে। তবে জানাজা যাতে সুশৃঙ্খলভাবে শেষ হয় এবং শান্তিপূর্ণভাবে সবাই চলে যেতে পারে সে জন্য পুলিশ মোতায়েন থাকবে।
শুধু তাই নয়, রংপুরের ব্যবসায়ীরা মঙ্গলবার দুপুর ২টা পর্যন্ত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছেন। মহানগর দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন জানান, স্যার আমাদের জন্য অনেক করেছেন। আজ তিনি নেই। তার সম্মানে আমরা আধাবেলা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ওষুধ ও খাবার ছাড়া সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে।
এদিকে, সাবেক রাষ্ট্রপতির দাফন যেকোনো মূল্যে রংপুরে হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন জাতীয় পার্টির নেতা রংপুরের মেয়র মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা।
তিনি বলেন, এরশাদের অন্তিম ইচ্ছা অনুযায়ী তার নিজ হাতে গড়া পল্লী নিবাসে রোপিত লিচু বাগানের নিচেই হবে। উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবেলায় এরশাদের লাশ যদি রংপুরে না আনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, তবে পরিস্থিতি হবে আরও ভয়াবহ। প্রয়োজনে জীবন দিয়ে এরশাদকে রংপুরে সমাহিত করা হবে বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা সোমবার রাতে একটি বেসরকারি টেলিভিশনকে বলেন, জানাজা শেষে রংপুর জাতীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে বসে বিষয়টি নিয়ে আলাপ-আলোচনা করে এরশাদের দাফনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
তবে, এরশাদের ছোটভাই জি এম কাদের বলেন, রংপুরের মানুষের তার প্রতি ভালবাসা অনেক বেশি তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। তবে এরশাদ যেহেতু শুধু রংপুরের নন, তিনি গোটা দেশের মানুষের হৃদয়ে আছেন।
এছাড়া তিনি সামরিক দায়িত্ব পালন করেছেন। তাই তার শেষ ঠিকানা সামরিক কবরস্থানে হওয়াই উচিত। এতে তার প্রতি সম্মান ও ভালবাসা আরও বেড়ে যাবে।
এ জন্য রংপুরের মানুষকে আবেগের ঊর্ধ্বে উঠে আসতে হবে। তার প্রতি ভালবাসা থাকলে, এখানে এসেও শ্রদ্ধা জানানো যাবে বলে যোগ করেন তিনি।
আই/
আরও পড়ুন