ঢাকা, বুধবার   ০৮ জানুয়ারি ২০২৫

এস আলমের দুই ছেলের নেতৃত্বে ঋণের নামে ১১১৪ কোটি টাকার ভাগাভাগি

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৪:৩৯, ৭ জানুয়ারি ২০২৫

জাল নথিপত্র তৈরি করে ঋণের নামে শুধুমাত্র ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের চট্টগ্রামের জুবিলী রোড শাখা থেকে প্রায় এক হাজার ১১৪ কোটি টাকা লুটপাট হয়েছে। যার নেতৃত্ব দেন এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলমের ছেলে আহসানুল আলম ও আশরাফুল আলম।  দুই ভাইয়ের লুটপাটের এই কাজে সহযোগিতা করেন ইসলামী ব্যাংকের সাবেক এমডি ও পরিচালকসহ ডজন খানেক কর্মকর্তা। এসব কর্মকর্তার পাশাপাশি ঋণগ্রহীতা প্রতিষ্ঠানগুলোর কাগুজে মালিক মিলিয়ে ৫২ থেকে ৫৪ জনের লুটপাটে জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধান টিম। শিগগিরই এ ঘটনায় দ্বিতীয় মামলার সিদ্ধান্ত আসতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন দুদক। 

আহসানুল আলম ছিলেন ইসলামী ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান। আশরাফুল আলম কাগুজে প্রতিষ্ঠান ইনফিনিটি সিআর স্ট্রিপস লিমিটেডের মালিক। আত্মীয়-স্বজন ও নিজ কোম্পানির বেতনভুক্ত কর্মচারীদের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মালিক দেখিয়ে মাত্র তিন বছরে ওই টাকা হাতিয়ে নেয় আলোচিত গ্রুপটি।

এর আগে, গত ১৯ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের চাকতাই শাখা থেকে এক হাজার ৯২ কোটি টাকা লুটপাটে আহসানুল আলমসহ ৫৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। 

দুদকের অনুসন্ধান প্রতিবেদন ও নথিপত্র সূত্রে জানা যায়, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের চট্টগ্রামের জুবিলী রোড শাখায় মেসার্স ইউনাইটেড সুপার ট্রেডার্সের মালিক মোহাম্মদ গোলাম কিবরিয়া চৌধুরীকে সাপ্লাইয়ার হিসেবে দেখানো হয়। মূলত ওই প্রতিষ্ঠানের মালিক অন্যান্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মালিক ও ব্যাংকের সর্বোচ্চ কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশে অপকর্ম ঘটিয়েছেন। অভিযোগ সংশ্লিষ্টরা ব্যাংকিং অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে ইউনাইটেড সুপার ট্রেডার্সের অনুকূলে ২০২১ সালের ১৫ ডিসেম্বরে ৮৯০ কোটি টাকা ঋণ সুবিধা গ্রহণ করলেও তার বিপরীতে কোনো মালামাল ক্রয় এবং বিক্রয় না করে বিভিন্ন জাল কাগজপত্র তৈরি করে। 

এরপর ওই টাকা উত্তোলন ও বিতরণ করে রূপান্তর, স্থানান্তর ও হস্তান্তরের মাধ্যমে অপরাধ গোপন করার চেষ্টা করা হয়েছে। ওই চক্রটি নানাবিধ অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে আবারও বিনিয়োগ সীমা ৮৯০ কোটি টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ১০০০ কোটি করা হয়। আর ২৮টি ডিল সাজিয়ে চক্রটি ২০২৩ সালের ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত সর্বমোট ৯৯৫ কোটি টাকা উত্তোলন করে। এসব কাজে ব্যাংকিং নীতিমালা এবং ইসলামী ব্যাংকের জন্য প্রচলিত শরীয়াহ নীতি লঙ্ঘন করা হয়েছে।

অন্যদিকে ২০২৩ সালে নতুন করে ক্রয়-বিক্রয় সংক্রান্ত ভুয়া ডকুমেন্ট তৈরি করে ৪টি ডিল সৃষ্টি করে আরও ১৮১ কোটি টাকা উত্তোলন করে নতুন করে আত্মসাৎ করা হয়েছে। এভাবে জুবিলি রোড শাখার গ্রাহক মেসার্স ইউনাইটেড সুপার ট্রেডার্সের নামে ২০২২ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত সময়ে ইস্যু করা অসমন্বিত ৩২টি ডিলে মোট ১ হাজার ৭৪ কোটি ৮৯ লাখ ২৬ হাজার টাকা ছাড় করা হয়, যা ব্যাংকের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ ছিল বলে অডিট প্রতিবেদন কিংবা দুদকের অনুসন্ধান প্রতিবেদনে প্রমাণ মিলে। 

পরে ২০২৪ সালের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে জাল নথি তৈরি করে কৃত্রিম উপায়ে ১৩ কোটি ৫০ লাখ ৮৭ হাজার পরিশোধ দেখা হয়েছে। সর্বশেষ ২০২৪ সালের ২ অক্টোবর পর্যন্ত ঋণ হিসাবে ৯৯৩ কোটি ৭০ লাখ ২৪ হাজার টাকা ও মুনাফা হিসাবে ১২০ কোটি ২৩ লাখ ৪০ হাজার টাকাসহ মোটি ১ হাজার ১১৩ কোটি ৯৩ লাখ ৬৪ হাজার টাকা অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে আত্মসাৎ হয়েছে বলে দুদকের অনুসন্ধানে প্রমাণ মিলেছে। যার মাধ্যমে ব্যাংকের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে বলে দুদক টিম মনে করছে।

এ বিষয়ে দুদকের মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন বলেন, এক হাজার ৯২ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে এর আগে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের (আইবিবিএল) সাবেক চেয়ারম্যান আহসানুল আলম, ভাইস চেয়ারম্যান, এমডি ও একাধিক পরিচালকসহ ৫৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছিল দুদক। এ সংক্রান্ত আরও অনুসন্ধান চলমান রয়েছে। মামলার সিদ্ধান্ত হলে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হবে।

এসএস//


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি