ঢাকা, সোমবার   ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

করোনা মহামারী

ঐক্যবদ্ধ শক্তিই আমাদের জয়ী করবে

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৫:০৩, ১২ এপ্রিল ২০২০ | আপডেট: ১৫:৩৪, ১২ এপ্রিল ২০২০

জনসচেতনতামূলক কর্মকাণ্ডে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী

জনসচেতনতামূলক কর্মকাণ্ডে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী

গোটা বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশও এক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। করোনা সংকট ঘিরে ধরছে গোটা দেশ। এ রকম চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতিতে সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে সাধারণ মানুষ সবাই উদগ্রীব। একদিকে মহামারী থেকে মানুষকে বাঁচিয়ে রাখা আবার অর্থনীতিকে সচল রাখা। এ অবস্থায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই দায়িত্ব নিয়েছেন। প্রতিদিন গোটা দেশের তদারকি করছেন। দৃপ্ত কণ্ঠে বলেছেন, ‘ঐক্যবদ্ধ শক্তিই আমাদের জয়ী করবে, আমাদের কেউ দাবিয়ে রাখতে পারবে না।’

বাঙ্গালীরা সকল ক্রান্তিকালে নিজেদের সাহস ও শাক্তি দিয়েই উত্তির্ণ হয়েছে। সিপাহী বিপ্লব থেকে শুরু করে ইংরেজদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা যুদ্ধ -সব কিছুতেই সংগ্রামী বাঙ্গালীর জয় হয়েছে। বাঙ্গালীর স্বভাব বিপদে ধর্ম, বর্ণ, জাতি গোষ্ঠী ভেদাভেদ থাকে না। মহাদুর্যোগে বাংলাদেশে ইতিহাস মানেই ঐক্যবদ্ধ মানুষের প্রবল শক্তি নিয়ে একে অন্যের পাশে দাঁড়ানো। ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, আমাদের কেউই দাবিয়ে রাখতে পারবে না। পাকিস্তানি সশস্ত্র সৈন্যবাহিনী নিরস্ত্র বাঙ্গালীর কাছে পরাজিত হয়েছিল। 

বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বাংলাদেশের মানুষের রয়েছে আশ্চর্য এক সহনশীল ক্ষমতা ও ঘাত-প্রতিঘাত সহ্য করে দ্রুত ঘুরে দাঁড়ানোর সক্ষমতা। ১৯৭১ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে যে জাতি মাত্র নয় মাসে স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছে, সে জাতিকে কোনো কিছুই দাবিয়ে রাখতে পারবে না।’ 

সরকার মানুষের দোরগোড়ায় খাদ্য পৌঁছে দিতে নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কারণে এই দু:সময়ে বিপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সমাজের বিত্তবানদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা প্রাণঘাতী রোগের বিস্তার রোধে দেশব্যাপী বন্ধের ঘোষণা দেয়ায় কাজ না পেয়ে দিনমজুর ও ছোট ব্যবসায়ীসহ অনেক লোক কষ্টে তাদের দিন কাটাচ্ছেন, কাজেই প্রতিটি দ্বারে খাদ্য পৌঁছে দেয়ার জন্য আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছি।’

তিনি আরও বলেছেন, ‘আমরা করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছি। যে যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেছে দেশের সর্বস্তরের মানুষ। সকল পর্যায়ের কর্মকর্তারা মাঠে নেমেছেন। যেসব চিকিৎসক মাঠে কাজ করছেন তাদের তালিকা করতে বলেছি। তাদেরকে আমরা পুরস্কৃত করব। চিকিৎসক, পুলিশ, প্রশাসন, সকল বাহিনীর সদস্য সবার জন্য বীমা সুবিধার ব্যবস্থা করছি। কর্মরত অবস্থায় যারা আক্রান্ত হবেন তাদের জন্য স্বাস্থ্য বীমা সুবিধা দেয়া হবে।’

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক ও সাবেক উপাচার্য ডা. কামরুল হাসান খান বলেন, ‘আমাদের বাংলাদেশের রয়েছে লড়াইয়ের দীর্ঘ ইতিহাস। লড়াই করে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে স্বাধীনতা এনেছি, এনেছি গণতন্ত্র। প্রধানমন্ত্রী সঠিক নেতৃত্ব দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে চলেছেন। বাংলাদেশের সব মানুষকে দলমত-ধর্ম নির্বিশেষে কঠিন দৃঢ় ঐক্যবদ্ধ থাকতেই হবে। বাংলাদেশের মানুষ যখন ঐক্যবদ্ধ হয়েছে, তখন পরাজয়ের ইতিহাস নেই। আজ এখনই এক সময়, যখন কেউ নিরাপদ নয়। তাই সবাইকে সব নিয়ম-কানুন, নির্দেশনা অনুসরণ করে ঐক্যবদ্ধ হয়ে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে। এ লড়াইয়ে আমাদের জিততেই হবে।’

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের বেশীর ভাগ মানুষ মুক্তিযুদ্ধে শরীক হয়েছিলেন। কেউ সরাসরি আবার কেউ প্রেরণা জুগিয়েছেন। যারা সরাসরি অংশ নেননি তবে কোন না কোনভাবে সংগ্রামে অংশ নিয়েছিলেন। তৎকালীন অত্যধুনিক মরণাস্ত্রের সামনে নিরস্ত্র বাঙ্গালীরা জয়ী হয়েছে শুধুমাত্র মনোবলের করনেই। বাঙ্গালীরা সর্বাত্মকভাবে অংশ নিয়েছিল অস্তিত্বের লড়াইয়ে। আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা যে যেভাবে পেরেছিল ঐ যুদ্ধে অংশ নিয়েছিল। তখন একপাশে পাকিস্তান ও তার সঙ্গীরা অন্যপাশে নিরিহ বাঙ্গালীরা। শেষে এ বাংঙ্গালীদেরই জয় হয়, কেননা বাঙ্গালীর অপরাজেয়।  

বর্তমানে বিশ্বব্যাপী মানুষ এক অদৃশ শক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে। করোনা ভাইরাস বা কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়েছে বিশ্বের প্রায় ২০০টি দেশ। আজ রোববার (১২ এপ্রিল, ২০২০) পর্যন্ত মারা মারা গেছেন ১ লাখ ৮ হাজারেরও অধিক। আক্রান্ত হয়েছেন পৌনে ১৮ লাখ। 

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় গেলে এক বছরে বাংলাদেশে প্রায় ৯ লাখ কর্মসংস্থান কমে যেতে পারে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক’র এক প্রতিবেদনে এমন শঙ্কার কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া ৩০০ কোটি ডলারের বেশি মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ক্ষতি হতে পারে। 

করোনা সঙ্কটের ব্যাপ্তি এখনো বাংলাদেশে তেমন ছড়িয়ে পড়েনি বলে সবাই বলছেন। কিন্তু সেই সঙ্গে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সাবধান করে দিচ্ছে যে আগামী দিনগুলোতে এ সঙ্কট ঐ সব দেশেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। কিন্তু সেটা যদি নাও হয়, বাংলাদেশে বর্তমান যে অবস্থা বিরাজ করছে, তা চলতে থাকলে বাংলাদেশ অর্থনীতিতে কতগুলো বিরূপ প্রতিক্রিয়া সহজেই চিহ্নিত করা যায়।

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও শিক্ষক ড. সেলিম জাহান বলেন, ‘করোনা সঙ্কটের কারণে বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতিতে তিনটে প্রভাব পড়বে। প্রথমত: আমাদের উচ্চ প্রবৃদ্ধির দুটো মূল চালিকা শক্তি হচ্ছে পোশাক রপ্তানী ও বর্হি:বিশ্বে কর্মরত বাঙ্গালি শ্রমিকদের প্রেরিত অর্থ। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, করোনা সঙ্কটের কারণে দু’টো চালিকা শক্তির ওপরে বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়বে। এর ফলে আমাদের প্রবৃদ্ধির হার কমে আসবে এবং অর্থনীতিতে মন্দা দেখা দিতে পারে। মন্দার কারণে কর্মসংস্থান কমে যাবে এবং বেকারত্ব বাড়বে। পোশাক শিল্পের হাজার হাজার কর্মী বেকার হয়ে পড়বেন এবং বিদেশে কর্মরত অদক্ষ শ্রমিকেরা কর্মহীন অবস্থায় দেশে ফিরবেন। এসব জনগোষ্ঠী ও তাঁদের পরিবারের ওপরে বিরাট অর্থনৈতিক চাপ পড়বে। সেই সঙ্গে বর্তমানে তেলের দাম যে বাড়ছে, তার ফলে বাংলাদেশকে তেল আমদানীর জন্যে একদিকে যেমন আমাদেরকে অনেক বেশি বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করতে হবে, তেমনি মূল্যস্ফীতিতে এটা একটা বিরাট ভূমিকা রাখবে।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গর্ভনর ড. আতিউর রহমান বলেন, ‘আমাদের অর্থনীতিও আজ হুমকির মুখে পড়েছে। এ দেশের শ্রমশক্তির বড়ো অংশটি অনানুষ্ঠানিক খাতে যুক্ত থাকায় অর্থনৈতিক ধাক্কা মোকাবিলার প্রথাগত কৌশলগুলো বাংলাদেশের জন্য যথেষ্ট নয়। এছাড়া ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকায় করোনা বিস্তারের কারণে আমাদের জাতীয় আয়ের প্রধান দুই উত্স গার্মেন্ট ও রেমিট্যান্স হুমকির মুখে পড়েছে। অন্য দিকে চীনে এই দুর্যোগের কারণে আমাদের আমদানিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ব্যাপক মাত্রায়। এ মুহূর্তে বিদেশি সহায়তাও খুব বেশি আশা করা যাচ্ছে না। কারণ, যারা সহায়তা করবে তারা নিজেরাও বিপদে।’

এই চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতিতেই একদিকে দেশের মানুষকে বাঁচাতে হবে, অন্যদিকে মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদে অর্থনীতিকে চাঙ্গা রাখার ব্যবস্থা করতে হবে উল্লেখ করে আতিউর রহমান বলেন, ‘সরকার অবশ্যই সাধ্যের সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করবে। কিন্তু এর পাশাপাশি আমাদের অ-সরকারি এবং সামাজিক সংগঠনগুলোর সক্ষমতাকেও কাজে লাগাতে হবে। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ, ১৯৮৮ সালের ভয়াবহ বন্যা, এমন কি সাম্প্রতিককালে রানা প্লাজা দুর্ঘটনার সময়েও সরকারের পাশাপাশি অন্যান্য অংশীজনদের সুসমন্বিত অংশগ্রহণের মাধ্যমে দুর্যোগ মোকাবিলার সক্ষমতা আমরা দেখিয়েছি। সৌভাগ্যের বিষয় এই যে, এই সময় আমাদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন মাননীয় প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার পিতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মতো তিনিও জাতীয় দুর্যোগে বলিষ্ঠ নেতৃত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন। এই করোনা দুর্যোগের সময়ও তিনি জাতির অনুপ্রেরণার ও ভরসার উত্স হয়ে আছেন।’

বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয় ৮ মার্চ। এরপর ক্রমেই এ ভাইরাসের আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ছে। বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। গতকাল শনিবার (১১ এপ্রিল, ২০২০) পর্যন্ত মারা গেছেন ৩০ জন এবং আক্রান্ত হয়েছেন ৪৮২ জন। 

এদিকে বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের প্রাদূর্ভাব কমাতে ইতোমধ্যে সরকার সর্বাত্মক চেষ্টা করছে। সরকারের বিভিন্ন বিভাগ, সংস্থা ও বাহিনী মানুষকে সচেতন করতে কাজ করছে। দুর্গতদের বাড়ি বাড়ি খাবার পৌঁছে দিচ্ছে। মহামারীর এ সময়ে আমরা নিরাপদে থাকতে বাসায় সময় কাটাচ্ছি। নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকার পাশাপাশি কেউ কেউ নানাভাবে মানুষের সহযোগিতা করছেন।

এমএস/এনএস


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি