ঐতিহ্যের মুরাদপুর-৮
প্রকাশিত : ০৯:৫৬, ১ সেপ্টেম্বর ২০২০ | আপডেট: ১০:২৯, ৩ সেপ্টেম্বর ২০২০
খুব অল্প সময়ের ব্যবধানে আবার আসতে হলো আমার এই পেইজে। গতকালের লেখাটির এত ব্যাপক পজেটিভ প্রতিক্রিয়া হবে ভাবিনি। লেখাটি ছিল ভাসা ভাসা, খুবই সংক্ষিপ্ত। কিন্তু এতে অনেকেই তৃপ্তি পাননি, খুশি হননি! আরো বিস্তারিত ও আরও লুকায়িত ঘটনা জানতে চেয়েছেন অনেকেই।
রাজনৈতিক পরিবেশ নিয়ে জানতে চেয়েছেন এক প্রিয়ভাজন। কিন্তু তখন রাজনীতি কোথায়? রাজনৈতিক ডামাডোল প্রায় ছিলই না। তবে সবক্ষেত্রেই একটা গুমোর ভাব পরিলক্ষিত হচ্ছিল। তবে গোপনে গোপনে চীন পন্থি একটা রাজনৈতিক দল খুব সীমিত আকারে আন্ডারগ্রাউন্ড এ সক্রিয় ছিল। সম্ভবতঃ প্রতিবেশী পশ্চিমবঙ্গের বাকশাল আন্দোলনের প্রভাব এতে থাকতে পারে। আমি কখনো সক্রিয় রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলাম না বলে সুনির্দিষ্টভাবে বলতে পারবো না।
তখন আমাদের ব্যাচ এ কেউ রাজনীতিতে খুব সক্রিয় ছিল এমন মনে পড়ে না। তবে প্রাক্তন ছাত্রলীগের স্থানীয় নেতা জনাব খাইরুল ইসলাম ’দা তখনো বেশ চৌকস নেতা ছিলেন, সাদা প্যান্ট শার্টের কেতাদুরস্ত এই নেতা ছিলেন ব্যবহারে খুবই অমায়িক। অনেক ছাত্র নেতাই তার আশেপাশে ঘুরাঘুরি করতো সবসময়। কলেজ রোডের কালীপদ ডাক্তারের অপজিটে তাঁর একটা ফার্মেসির দোকান ছিল। সেখানেই তার বৈঠকখানা, রাজনৈতিক আড্ডা সব হতো। তাঁর দু’জন ভিআইপি শিষ্য ছিলেন, গোলাবাড়ীয়ার জনাব জসিম উদ্দিন (বর্তমানে ডিরেক্টর, মুহাম্মদী গ্রুপ) এবং একিউএম রাশেদ (বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী)।
এরা আমাদের এক ব্যাচ সিনিয়র ছিলেন কলেজে। তাদের একটা প্রভাব ছিল খাইরুল ইসলাম দার কাছে। এছাড়া অন্যকোনো প্রকাশ্য রাজনীতি ছিল না তখন। এখন কোথায় সেই খাইরুল ইসলাম ’দা? কেমন আছেন তিনি?
কলেজ রোড়ের মাথায় ছোট্ট চিপা একটা দোকান ছিল রেডিও ম্যাকানিক্সের, মালিক তপন ’দা, আগাগোড়া বামপন্থী রাজনৈতিক ব্যক্তি। কিন্তু সবকিছুতেই জ্ঞান ছিল অসীম। সাহিত্য, রাজনীতি, পরিপার্শ্বিক অবস্থার অবজারভেশনে ছিল তার অদম্য কৌতূহল। আমরা কয়েকজন অবসরে তার সেখানে প্রায় নিয়মিত আড্ডা দিতাম। তাঁর আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ ছিল, কিন্তু এ নিয়ে কোন টেনশন ছিল না। অনেকদিন তিনি, তার পরিবার অভুক্ত ছিলেন, তিনি এগুলো অবলিলায় বলে যেতেন, কিন্তু প্রতিকারের কোন উদ্দ্যোগ তিনি নেননি।
একটা সিগারেটকে দুবার তো বটে তিনি তিন চার বারও টানতে চেষ্টা করতেন। দু/তিন টান দিয়েই নিভিয়ে দিতেন, কয়েক মিনিট পর আবার সেটা জ্বালাতেন। কিন্তু মুখের হাসি বা আমাদেরকে দেখলে অভ্যর্থনা জানানোতে তার কখনো কার্পণ্য ছিল না। অত বড় দিল খোলা অথচ নির্লিপ্ত মানুষ আমি খুব কম দেখেছি।। তিনি আজ কোথায়? বেঁচে আছেন কি?
আমাদের সময়ে সীতাকুণ্ড ডিগ্রী কলেজে সীতাকুণ্ড আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়, সীতাকুণ্ড বালিকা বিদ্যালয়, জাফর নগর অপর্ণাচরণ উচ্চ বিদ্যালয়, মসজিদ্দা ও কুমিরা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা ভর্তি হয়েছিল। বাড়বকুণ্ড উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী কেন জানি খুব কম ছিল। জাফর নগর অপর্ণাচরণ উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র আমাদের সতীর্থ মোঃ আবদুল মুবিন আমাদের সময়ের সেরা ছাত্র ছিল। বাংলা ইংরেজি হাতের লেখাও ছিল খুবই চমৎকার। হ্যাঁ, সে কলেজের মুখ উজ্জ্বল করে এইচএসসিতে কুমিল্লা বোর্ডে কমার্স থেকে ষ্টান্ড করেছে। পরে বিশ্ববিদ্যালয়েও আমরা একসাথে লেখাপড়া করেছি।
প্রথম জীবনে সে সোনালী ব্যাংক কর্মকর্তার চাকরিছেড়ে কমার্স কলেজে শিক্ষকতা শুরু করে, সেখান থেকেই প্রফেসর হয়ে শেষ পর্যায়ে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড়ের সচিব হয়ে বর্তমানে সরকারিভাবে অবসর জীবনযাপন করছেন। কিন্তু ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও ধান ভানে, এই প্রবাদ মেনে তিনি এখন আবারও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন কলেজের প্রিন্সিপাল হয়ে বসেছেন। সাফল্য ভালো ছাত্রদের পিছনে এভাবেই দোঁড়ায়, আবারও বুঝা গেল।
আরেক কৃতি শিক্ষার্থী সুলতান মাহমুদ, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অতিরিক্ত সচিব হয়ে সম্প্রতি রিটায়ারম্যান্টে গেছে। সেও আমাদের সতীর্থ ছিল, ভাবতেই রোমাঞ্চিত হই। বন্ধু বৎসল ও ন্যায়পরায়ণ হিসেবে তার খ্যাতি আমরা ঢাকায় অনুভব করি প্রতি পরতে পরতে।
আমাদের মেয়ে সতীর্থদের মধ্যে সালেহা আকতার সানুর কৃতিত্ব সবচেয়ে বেশি। সে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের উপসচিব থেকেই পদ ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবাসী হয়ে গেছে, না হয় সেও আজকে পরিপূর্ণ সচিব হয়েই রিটায়ারম্যান্টে যেতো। আমরা এই গৌরব ধরে রাখতে পারিনি।
আবু জাফর, কর্ণফুলী গ্যাস এর প্রাক্তন জি এম (হিসাব)। তার কৃতিত্বের চেয়ে তার পরোপকারীতার সীমানা অনেক দূর অতিক্রম করে গেছে। সে আমার প্রতিদ্বন্দ্বী, প্রতিযোগী, সমালোচক। এ জন্য সবার প্রিয় ‘জাফর সাহেব’ আমার আবাল্য বন্ধু এটা আমার জন্য অনেক গর্বের বিষয়। তার পরোপকারীতার ঘটনা সর্বজনবিদিত, এটাই তার কৃতিত্ব ও মহত্ব। আরও অনেকেই আছে নিজস্ব সীমানায় সুপ্রতিষ্ঠিত। সবার নাম উল্লেখ এখানে সম্ভব নয়। তাই মার্জনা চাই।
এবার কিছু অন্য প্রসঙ্গ আগেই বলেছি আমাদের মেয়ে ক্লাসমেট ছিলই মোটে আট জন, তাও আবার সায়েন্স এ চার, আর্টস এ চার, কমার্স এ ঘোড়ার ডিম।
বড়ো মনোযাতনার বিষয়! কিন্তু কিসসু করার নেই। সায়েন্স, আর্টও কি ঘোড়ার ডিম করতে পারতেছে! এগুলো বলে আমরা শান্ত্বনা খুঁজতাম। ক্লাস শেষ হলে আমরা ক্লাস ছেড়ে সবাই বের হয়ে যেতাম, মাঠে বিচরণ করতাম, মেয়েদের কমনরুমের দিকে তাকাতো কেউ কেউ। কিন্তু সেখানে পর্দার নড়াছড়া ছাড়া আর কিছু দেখার কোন সুযোগ ছিল না। এর মধ্যেও কিন্তু কারো কারো প্রেম জেগে উঠে, সেটা আবার একপক্ষ, দু পক্ষ হবার সুযোগই পাওয়া যাচ্ছে না। তবে খুব গোপনে। একান্ত নিকটজনেই সেটা জানে।
আমাদের মিনু রানী খুবই ভালো এবং স্বল্পভাষী একটা মেয়ে। নিরবে কলেজে আসে, শেষে নিরবেই চলে যায়। কারো সাতেপাঁচে থাকে না। তার প্রতি দুর্বল হয়ে গেল আমাদের একজন। সে ক্লাস শেষে বাজারের আমগাছ তল থেকে ধুম শুভপুরের বাস ধরে মসজিদ্দাই তার বাড়ি যেত। একদিন ওই বন্ধুসহ মসজিদ্দার কয়েকজন সহপাঠী হঠাৎ প্লান করলো আজ মিনুদের বাড়ি যাবে তারা। মসজিদ্দার ছাত্ররা মিনুর স্কুল জীবনের বন্ধু। তাই তারা সম্মত হলো। মিনুকে কিসসু বলা হয়নি।
একসাথে বাসে করে সবাই মসজিদ্দা নামলাম, তারপর মিনুকে আনুষ্ঠানিক বিদায় দিয়ে আমরা কিছুক্ষণ ঘুরাফিরা করে সন্ধ্যা নাগাদ মিনুদের বাড়িতে হানা। মিনু কলেজ থেকে এসে সম্ভবতঃ ভাত খেয়ে ঘুম দিসে, সে আমাদেরকে দেখে একেবারেই ছানাবড়া, হতভম্বঃ, কী করবে কী করবে ভেবে পাচ্ছে না। যা হউক, তার পরিবার আমাদেরকে খুবই চমৎকার একটা আপ্যায়ন করেছে, যা এখনো মনে আছে। মিনুকেও এখনো আমার মনে আছে বেশ। খুবই শান্ত প্রকৃতির ছিল সে। আজ কোথায় মিনু? তার ছেলেমেয়ে কয়জন গো?
ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে, বেলা প্রায় দু’টো। ক্লাস বাতিল। কলেজ ফাঁকা। ছাত্রছাত্রীদের উপস্থিতিও অনেক কম। ছাত্রছাত্রীদের অনেকে চলে গেছে। আমিও আমার ছোট্ট সিঙ্গেল ছাতা মেলে পা বাড়াতেই একজন মেয়ে সতীর্থ এসে বলে আমাকে নিয়ে যাও, আমি ছোট্ট সিঙ্গেল ছাতার দোহায় দিলাম, বললাম, তাতে দু জনেই ভিজে যাব, কিন্তু কে শুনে কার কথা! কোন ধরনের জবাব দেবার আগেই সে দৌঁড়ে লাফিয়ে একদম ছাতার তলে, ঢুকেই বলে-চলো। হ্যাঁ, চলা শুরু হলো বটে কিন্তু তাকে সেইফ করতে আমার বারোটা। কাঁধে কাঁধে ধাক্কাধাক্কিতে যতটুকু পারা যায় তাকে নিরাপদে তাদের কলেজ রোড়ের বাসার বারান্দায় উঠিয়ে দিয়ে দেখি তার মহান প্রেমিক প্রবর তার জন্য উদগ্রীব হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন।
তিনি মুরাদপুর ক্যাপ্টেন শামসুল হুদা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন, আমাকে খুব ভালো করে চিনতেন। আমাকে দেখে মুচকি হেসে একটা ধন্যবাদ দিলেন, (তাঁর মুছকি হাসিটা দেখার মতো ছিল), আমিও একটু হাসলাম। কি প্রেমে ছিল তাদের! কিন্তু সব বিফলে গেছে। হিন্দুদের জাতপাত এত কঠিন জিনিস, সীতাকুণ্ডে এরকম অনেক প্রেমই ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে শুধু জাতপাতের কারণে।
আমরা কলেজে যেতাম, ক্লাস শেষে দোকানে দাঁড়িয়ে সিগারেট ফুকতাম। কলেজ রোডে আড্ডা দিতাম, কিন্তু সামনে বা পিছনে কলেজের কোন ছাত্রী আসতে দেখলে দোকানের ভিতরে বা অন্য কোথাও লুকিয়ে যেতাম, কোন ধরনের খারাপ কথা, মন্তব্য বা সিটি দেয়া তো দূরের কথা। কোন অবস্থাতেই কোন ছাত্রী যেন রাস্তা-ঘাটে নাজেহাল না হয় সেই ব্যাপারটি আমরা খুব যত্নের সাথে চেষ্টা করে যেতাম। অন্ততঃ কলেজ রোড ছিল ছাত্রীদের জন্য সম্পূর্ণ নিরাপদ। এ জন্যই তখনকার দিনে সীতাকুণ্ডের সবচেয়ে সুন্দর মেয়ে তালহা আফরোজ হিলালী নির্ভিঘ্নে কলেজ রোড দিয়ে হেটে আসতো। গোলাবাড়ীয়া থেকে হেটে বা রিক্সায় আসতো রেজিয়া আকতার, গোপ্তাখালী থেকে সালেহা আকতার সানু। সানুর অধ্যয়ন প্রচেষ্টা ছিল রূপকথার মতো।
সেই গোপ্তাখালীর শেষ মাথায় ভোংগা খানের বাড়ি থেকে সে আসতো, প্রায় চার মাইলের অধিক পথ। তখন মুরাদপুর থেকে গোপ্তাখালীর কোন রাস্তাও ছিল না। শুষ্ক মৌসুমে বিলের কোনাকুনি আর বর্ষায় জমির আইল দিয়ে যাওয়া আসা করতে হতো। মাঝপথে কোমর সমান পানি! অবিশ্বাস্য। শুনেছি এ জন্যই তাকে একটা এক্সট্রা ড্রেস নিয়ে এসে চৌধুরী বাড়িতে ভিজা কাপড় পাল্টিয়ে তারপর কলেজে যেতে হতো। আমি জানি না আজকাল লেখাপড়ার জন্য কোন মেয়ে এত কষ্ট করবে কিনা! তার ফলও সে পেয়েছে, সরকারি প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা এবং পরে প্রবাসে শেটল্ড। ভালোই আছে সে, কথা হয় নিয়মিত। তার জন্য শুভ কামনা।
এবার একান্তই ব্যক্তিগত একটা দুঃখ ও মনোবেদনার কথা জানাবো। নীলু, মোয়াজ্জেম হোসেন নীলু। একদিন কলেজের নীচতলার একটা ফাঁকা রুমের ভিতরে একমনে একটা ছেলে বই পড়ছে, কাছে গিয়ে দেখলাম শরৎচন্দ্রের গৃহদাহ। তখন আমরা অত্যন্ত বই প্রেমিক, কাউকে এ রকম পেলেই খুশি হয়ে ভাবতাম, যাক, বই পাওয়ার আরেকটা উৎস পাওয়া গেল। তার সাথে পরিচিত হলাম, তার বাবা প্রগতি ইন্ড্রাষ্ট্রিজ এর এক কর্মচারী, সে তাঁর সাথে মিলের মেসে থাকে। বাড়ি ঢাকার নবাবগঞ্জের দোহারে। কয়েকদিনে তার সাথে খুব ঘনিষ্ঠতা হলো, তার অনুরোধে মুরাদপুরে রুহুল আমিন সেরাং এর বাড়ীতে তার লজিং এর ব্যবস্থা করা হলো।
সে লজিং ডিউটির পর সারাক্ষণ আমাদের কাছারীতে আমার সাথে সময় কাটাতো। কবিতা ও গানের ব্যাপারে তার ইন্টারেষ্ট ছিল প্রচুর, এ জন্য আমার সাথে তার ভালো সংযোগ হলো। পরে সে মুরাদপুরের লজিং ছেড়ে সীতাকুণ্ড শামসুদ্দিন চেয়ারম্যানের বাড়িতে লজিং নিল, সেখানেও আমার যাতায়াত ছিল। মোট কথা তার সাথে সম্পর্কটা বুঝানো যাবে না। ইন্টারমেডিয়েট ফাইনাল পরীক্ষা চলছে। একদিন পরীক্ষার হলে পাশের রুম থেকে বিকট কান্নার আওয়াজ পেয়ে আমি হলের বাইরে এসে দেখি নীলু একাউন্টিং এর হাসান স্যারের পা জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে কাঁদছে। হাসান স্যার তাকে নকলের দায়ে এক্সফেল্ড করেছে। হাসান স্যার তখন ছিলেন কলেজের আতংক।
নকল ধরলে আর ছাড় নেই। নীলুর ছাড়ও হলো না। সে এত গরীব ছিল যে, বলে বুঝানো যাবে না। কেন জানি না হাসান স্যার আমাকে অত্যধিক স্নেহ করতেন। পরীক্ষার পর আমি স্যারের সাথে দেখা করলাম। নীলুর অবস্থা স্যারকে জানালাম। স্যার বিস্মিত হলেন, চিন্তায় পড়লেন, তিনি সিদ্ধান্ত দিলেন, নীলু চট্টগ্রাম শহরে তাঁর বাসায় থাকবে, সেখান থেকে পরবর্তী পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নেবে। কেমন কঠিন আর কেমন মহৎ ছিলেন হাসান স্যার!
তাই হলো, নিলু স্যারের বাসায় থেকে পরীক্ষা দিলো, পাস করলো, তাঁর বদান্যতায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্বে ভর্তি হলো, পাস করলো। তারপর কোথায় গেল সেটা আর জানলাম না। অথচ তার এই পুরো জার্নিতে আমি সক্রিয়ভাবে সবকিছুতে তার সাথে ছিলাম। মানুষ কত অকৃতজ্ঞ হতে পারে নীলু তার একটা বড় দৃষ্টান্ত আমার কাছে! সে এ পর্যন্ত আমার সাথে আর কোন যোগাযোগই করেনি। বছর তিনেক আগে ফেসবুকে তাকে আমি দেখে নক দিই, ম্যাসেজ পাঠাই, কিন্তু সে আজ পর্যন্ত কোন রিপ্লাই দেয়নি। তার জন্য আমি কত কি করলাম, আমার কেমন মন পোঁড়ে তার জন্য, তাকে তা কখনো বুঝাতে পারিনি। এদেরকে মনে হয় বলে নিমক হারাম। (দুঃখিত, এই শব্দ ব্যবহার করার জন্য)।
এটাই আমার সাদামাটা কলেজ জীবন। অনেক সতীর্থকে হারিয়েছি ইতোমধ্যে, অনেককে ভুলে গেছি। অনেকের সাথে আবার ভালো যোগাযোগ আছে। আমি, জাফরসহ আরও দু একজন গত মার্চে সীতাকুণ্ড আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের ’৭৪ ব্যাচ এর একটা পুনর্মিলনীর আয়োজন করার স্বপ্ন দেখেছিলাম, কিছু কার্যক্রম শুরুও হয়েছিল, কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে বিঘ্ন ঘটেছে। ইনশাআল্লাহ, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে কলেজেও আমরা ’৭৬ ব্যাচ এর একটা পুনর্মিলনীর আয়োজন করা যায় কিনা ভেবে দেখা যাবে।
সবাইকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি ও দোয়ার প্রার্থনা করছি।
এমবি//
** লেখার মতামত লেখকের। একুশে টেলিভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে।