ওষুধ শিল্পে তৈরি হচ্ছে বিশাল চাকরির বাজার
প্রকাশিত : ১২:৩২, ২৭ নভেম্বর ২০১৭ | আপডেট: ১৫:৪১, ২৯ নভেম্বর ২০১৭
প্রফেসর ড. হাসান মাহমুদ রেজা
ওষুধ শিল্পে বাংলাদেশের জন্য নতুন সম্ভাবনার দরজা খুলছে। বর্তমানে দেশে ২৬৮টি ওষুধ কোম্পানি রয়েছে। এর মধ্যে অধিকাংশ কোম্পানি বিদেশেও ওষুধ রফতানি করছে। বর্তমানে এই শিল্পে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার দক্ষ জনবল কাজ করছে। এখানে আরও অনেক কর্মসংস্থানের সুযোগও রয়েছে। দিন দিন কর্মসংস্থানের সুযোগ আরও বাড়ছে। ওষুধ শিল্পের বর্তমান অবস্থা ও আগামীর সম্ভাবনা নিয়ে একুশে টিভি অনলাইনের সঙ্গে কথা বলেছেন নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাসিউটিক্যাল সায়েন্স বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. হাসান মাহমুদ রেজা। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ইটিভি অনলাইনের প্রতিবেদক তবিবুর রহমান ।
একুশে টিভি অনলাইন : বর্তমানে ওষুধ শিল্পে কর্মসংস্থানের সুযোগ কেমন?
ড. হাসান মাহমুদ রেজা : বাংলাদেশে ওষুধ শিল্প ক্রমবর্ধমান একটি সম্ভাবনার জায়গা। সত্তরের দশকে দেশে হাতেগোনা কয়েকটি ওষুধ কোম্পনী ছিলো। স্বাধীনতার পরও দীর্ঘ সময় ওষুধ শিল্পে তেমন উত্তরণ ঘটেনি। ১৯৮২ সালে ওষুধনীতি প্রণয়নের পর দেশের ওষুধ শিল্প বিকাশ লাভ করে। বর্তমানে এই শিল্পকে ঘিরে ব্যাপক সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। দেশীয় কোম্পানিগুলো অভ্যন্তরীণ ওষুধের চাহিদার ৯৮ শতাংশ সরবরাহ করছে। পাশাপাশি বিদেশেও ওষুধ রফতানি হচ্ছে। তাই ওষুধ শিল্পের পরিধি দিন দিন বাড়ছে। সমানতালে বাড়ছে কর্মসংস্থানের সুযোগও। ওষুধ শিল্পে যেমন ফার্মাসিস্টদের চাহিদা রয়েছে, তেমনি ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে অন্যান্য বিষয়ে জ্ঞানসম্পন্ন দক্ষ জনবলেরও প্রয়োজন রয়েছে। আগামীতে ওষুধ শিল্পের উত্তরণের মাধ্যমে অনেক কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে।
একুশে টিভি অনলাইন : ওষুধ শিল্পে বাংলাদেশের সম্ভাবনা কেমন?
ড. হাসান মাহমুদ রেজা : ওষুধ শিল্পে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম। এদেশে প্রয়োজনীয় আবকাঠামো এবংদক্ষ জনবল রয়েছে। গত ৩৫ বছরে দেশে ওষুধ শিল্পের বাজার ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে । ১৯৮২ সালে যেখানে ওষুধ শিল্পের বাজার ছিল ১৭৩ কোটি টাকা, সেখানে বর্তমানে প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকায় এসেছে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, জার্মানি, ফ্রান্সসহ বিশ্বের ১৪৩টি দেশে ওষুধ রফতানি আরও অনেকগুণ বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেটি হলে বাংলাদেশের ওষুধ শিল্প দ্বিতীয় বৃহত্তম রফতানিকারক শিল্প হিসাবে বিকাশ লাভ করবে। সুতরাং নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের ওষুধ শিল্পের সম্ভাবনা অতি উজ্জ্বল।
একুশে টিভি অনলাইন : বাংলাদেশের ওষুধের বিশ্ববাজারে কতটা চাহিদা রয়েছে?
ড. হাসান মাহমুদ রেজা : ইতোমধ্যে বাংলাদেশের উৎপাদিত ওষুধ বিশ্ববাজারে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে। এর মধ্যে রফতানির পরিমাণ হিসেব করলে সবচেয়ে বড় বাজার হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। কঠিন মানদণ্ডের ভিত্তিতেই কেবল যুক্তরাষ্ট্রে ওষুধ রফতানি করা যায়। বেক্সিমকো ও স্কয়ার এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। আরও ১০টি কোম্পানি দ্রুত যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রবেশের প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে ওষুধের রেগুলেটেড মার্কেটে প্রবেশ করতে হলে bioequivalence study করা প্রয়োজন। সেটি এখানো আমাদের দেশে চালু হয়নি। ফলে বিদেশ থেকে এটি করিয়ে আনতে অনেক বেশি সময় ও টাকার প্রয়োজন হয়। এখন দেশে একটা bioequivalence lab স্থাপন করা অতি জরুরি। এছাড়া ওষুধ প্রশাসন USFDA কর্তৃক স্বীকৃতিপ্রাপ্ত হলে বিশ্ববাজারে ওষুধ রফতানির পরিমাণ অতি অল্প সময়ে ৫ থেকে ১০ গুণ বৃদ্ধি করা সম্ভব। তবে অনেক মুনাফা লাভের আশায় ওষুধের গুণগত মান ক্ষুন্ন হলে রফতানি রাজারে এ শিল্পের ধ্বস নেমে আসবে।
একুশে টিভি অনলাইন : ফার্মাসিস্টরা ওষুধ শিল্পের উন্নয়নে কতটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন?
ড. হাসান মাহমুদ রেজা : দেশে ওষুধ শিল্পের শক্ত ভিত্তি হলো দক্ষ জনবল। বাংলাদেশের ফার্মাসিস্টরা এ শিল্পের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। আগে শুধুমাত্র পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্বল্প সংখ্যক ফার্মাসিস্ট বের হতেন। বর্তমানে সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনেক বেশি ফার্মাসিস্ট বের হচ্ছেন। এটি ওষুধ শিল্পের জন্য খুবই ইতিবাচক দিক। তাই আগামীতে এই শিল্পের সম্ভাবনা আরও বেড়ে যাবে বলে মনে করছি।
একুশে টিভি অনলাইন : দেশের বাইরে বাংলাদেশের ফার্মাসিস্টদের কেমন চাহিদা রয়েছে?
ড. হাসান মাহমুদ রেজা : বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের ফার্মাফিস্টরা সফলতার সঙ্গে কাজ করছেন। বর্তমানে বাংলাদেশের মেধাবী ফার্মাসিস্টরা চাইলে বিদেশে তাদের ক্যারিয়ার গড়তে পারেন। এক্ষেত্রে যারা আমেরিকাতে ফার্মাসিস্ট হিসেবে কাজ করতে আগ্রহী, তাদেরকে পাঁচ বছরের কারিকুলামে গ্রাজুয়েশন করতে হবে। অন্যথায় রেজিস্ট্রেশন পরীক্ষায় অংশ নেওয়া সম্ভব না। শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে এ ধরনের কারিকুলাম চালু আছে। আমার জানা মতে, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি-ফার্ম ডিগ্রী নিয়ে প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ শিক্ষার্থী বিদেশে ফার্মাসিস্ট হিসেবে বা উচ্চতর শিক্ষার সুযোগ লাভ করছে।
একুশে টিভি অনলাইন : ওষুধ ব্যবহারের ক্ষেত্রে সাধারণ জনগণ যেন প্রতারিত না হয়, এর জন্য কী করা প্রয়োজন বলে মনে করেন?
ড. হাসান মাহমুদ রেজা : ওষুধ শিল্পের সঙ্গে জড়িত মালিক কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং ওষুধ প্রশাসনকে সততা ও ন্যায়নীতির ভিত্তিতে কাজ করতে হবে। বাজারে ওষুধ বিক্রির ক্ষেত্রে ডাক্তারদের কোম্পানির পক্ষ থেকে কমিশন ও লোভনীয় উপহার দেওয়ার প্রথা বন্ধ করতে হবে। মানহীন ওষুধ কোম্পানিকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। ওষুধ প্রশাসনকে আরও কঠোর হতে হবে। এছাড়া প্রত্যেককে ওষুধ কেনার আগে অবশ্যই মোড়কে খুচরা মূল্য ও মেয়াদ উত্তীর্ণ কিনা, তা দেখে নিতে হবে।
একুশে টিভি অনলাইন : এ শিল্পের প্রসারে সরকারের কী কী করণীয় আছে বলে আপনি মনে করেন?
ড. হাসান মাহমুদ রেজা : ওষুধের মূল কাঁচামালের ৯০ ভাগ বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়। ফলে এই শিল্প অন্যদের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। যা মোটেও কাম্য নয়। এ সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য ওষুধের কাঁচামাল উৎপাদন করা জরুরি। এক্ষেত্রে সরকার ও শিল্প উদ্যোক্তাদের সম্মিলিতভাবে কাজ করা প্রয়োজন। অন্যদিকে উৎপাদিত ওষুধের রফতানি বৃদ্ধির লক্ষ্যে bioequivalence lab প্রতিষ্ঠা করাও জরুরি। পাশাপাশি সহজ শর্তে ওষুধ শিল্পে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি আমদানির সুযোগ বাড়াতে হবে।
একুশে টিভি অনলাইন : আপনার শত ব্যস্ততার মধ্যে মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
ড. হাসান মাহমুদ রেজা : ইটিভি অনলাইনকেও ধন্যবাদ। আশা করি, আপনাদের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে।
/ডিডি/এআর
আরও পড়ুন