কবি বেলাল মোহাম্মদের চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী আজ
প্রকাশিত : ১৮:১৬, ৩০ জুলাই ২০১৭ | আপডেট: ১৬:৪১, ৮ আগস্ট ২০১৭
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও শব্দ সৈনিক কবি বেলাল মোহাম্মদের চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ২০১০ সালে তাঁকে স্বাধীনতা পদকে ভূষিত করা হয়।
২০১৩ সালের এদিনে তিনি ঢাকার একটি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর আগে তিনি চিকিৎসা বিজ্ঞানের অগ্রগতির জন্য নিজ দেহটি দান করে যান। তাঁর মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীসহ দেশের বিশিষ্টজনেরা গভীর শোক প্রকাশ করেছিলেন।
বেলাল মোহাম্মদ সর্ম্পকে বিশিষ্টজনরা বলেছেন, বেলাল মোহাম্মদ যা বিশ্বাস করতেন তার জন্য আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন। তারা বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধবিরোধী কোনো শক্তিকে এ দেশে কোনোদিন মাথাচারা দিয়ে উঠতে না দিলেই, তার প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধা জানানো হবে এবং তার আত্মা শান্তি পাবে।
লেখক, সাংবাদিক ও স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রেরকর্মী কামাল লোহানী বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করে তিনি ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেন। তার হাতে গড়া এই বেতার কেন্দ্র সে সময় যে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছে। এজন্য মুক্তিযুদ্ধে বিশ্বাসী প্রত্যেক মানুষ তাকে আজীবন মনে রাখবে।
বিশিষ্ট অভিনেতা ও স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কর্মী সৈয়দ হাসান ইমাম বলেন, বেলাল মোহাম্মদ যা বিশ্বাস করতেন তার জন্য আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীনতার ঘোষণা পাল্টে দেওয়ার জন্য তাকে যেমন প্রলোভন দেওয়া হয়েছিল, তেমনি চাপও প্রয়োগ করা হয়েছিল তার উপর। তিনি এতটাই দৃঢ়চেতা মানুষ ছিলেন যে, কোনো প্রলোভন বা চাপ তাকে দমাতে পারেনি। অবশ্য এজন্য তাকে বহু বছর বিদেশে থাকতে হয়েছে।
বেলাল মোহাম্মদের জন্ম ১৯৩৬ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি সন্দ্বীপের মুসাপুর গ্রামে। তার পিতা মোহাম্মদ ইয়াকুব (১৮৯৯-১৯৬২) এবং মাতা মাহমুদা খানম (১৯১০-১৯৯৮)। তিনি ছয় ভাই ও চার বোনের মধ্যে ছিলেন পঞ্চম।
১৯৬৪ সালে বেলাল মোহাম্মদ কর্মজীবন শুরু করেছিলেন রেডিও পাকিস্তান চট্টগ্রাম কেন্দ্রে। বেতারে চাকরির আগে তিনি চট্টগ্রামের ‘দৈনিক আজাদী’ পত্রিকায় উপ-সম্পাদক হিসেবে কিছুদিন কাজ করেন। মার্চ ১৯৭১-এর শেষ সপ্তাহে বাঙালি জাতি যখন চরম বিভীষিকার মুখোমুখি তখন চট্টগ্রাম বেতারের কালুরঘাট বেতার যন্ত্র থেকে মানুষ শুনতে পায় আশার বাণী। এর আগে শব্দসৈনিক আবুল কাসেম সন্দ্বীপিসহ কয়েকজন বেতার কর্মী নিয়ে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন। এ কেন্দ্র থেকেই বঙ্গবন্ধুর দেওয়া স্বাধীনতার ঘোষণা প্রচার করে পৃথিবীব্যাপী বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ শুরুর কথা জানিয়ে দেওয়া হয়।
এছাড়া তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা বিতর্কের একমাত্র সাক্ষী ।
যখনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস বিকৃত করার চেষ্টা করা হয়েছে, ঠিক তখনি তাঁর কলম প্রতিবাদে, দ্রোহে গর্জে উঠেছিল।
চিকিৎসা বিজ্ঞানের অগ্রগতির জন্য নিজ দেহ দান করা ছাড়াও ২০১০ সালে অর্জিত স্বাধীনতা পদকটি তিনি উৎসর্গ করেছেন বাংলাদেশ বেতারকে। পাওয়া নগদ অর্থ দিয়ে তার জন্মস্থান সন্দ্বীপে গণশিক্ষা এবং বেকার যুবকদের কারিগরি প্রশিক্ষণের জন্য গঠন করেছিলেন লালমোহন-মোজাফফর কল্যাণ ট্রাস্ট। ভিক্ষুকের হাত কিভাবে কর্মজীবীর হাতে পরিণত করা যায় তার পথ তৈরি করার চেষ্টা করেছেন এই প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। বাংলা একাডেমির পুরুস্কারসহ একাধিক পদকে তিনি ভূষিত হয়েছেন তিনি। তাঁর লেখা প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ৭৬ টি। এই মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল - কতো ঘরে ঠাই, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র, জয় বাংলা রেডিও একাত্তরসহ শিশুদের জন্য লিখেছেন মুক্তিযুদ্ধের গল্পের বই।
কেআই/ডব্লিউএন
আরও পড়ুন