ঢাকা, বুধবার   ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

কবি সানাউল্লাহ সাগরের দশ কবিতা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৯:০০, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

সানাউল্লাহ সাগর দুই দশক ধরে বাংলাদেশ ও ভারতের প্রতিনিধিত্বশীল দৈনিক পত্রিকার সাহিত্য বিভাগ, সাহিত্য পত্রিকাসহ বিভিন্ন বাংলা ভাষাভাষী অঞ্চল থেকে প্রকাশিত লিটলম্যাগে লিখছেন। কবিতা লেখার পাশাপাশি গল্প-উপন্যাসও লিখছেন নিয়মিত।  দীর্ঘদিন ধরে ‘আড্ডা’ নামে একটি লিটলম্যাগ সম্পাদনা করছেন। প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ১৪টি। তার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থসমূহ: সাইরেন, কালো হাসির জার্নাল, মেঘের কার্তুজ, পৃথিবী সমান দূরত্ব আমাদের, গুহা, লাবণ্য দাশের সাথে দেখা হওয়ার পর, ভ্রমণ সংক্রান্ত, নির্বাচিত কবিতা। এছাড়াও তিনি সম্পাদনা করেছেন, এই সময়ের নির্বাচিত গল্প।
 

মঙ্গা

মৃত্যু এসে বসে আছে পাশে
আমাদের নিয়ে যাবে কোথাও;
সাথে নিয়ে যাবে 
তলিয়ে যাওয়া জীবনের জমানো দুঃখ-কষ্ট
তিলে তিলে অর্জিত অসহায়ত্ব, 
সকল অপারগতা আমাদের—

এমন অসুখ হলো তোমাদের
সুবহে সাদিকের দিকে এসে
নাক ফেলছো আবার,
দিকে দিকে পৌঁছে দিচ্ছো ক্ষুধার ঘ্রাণ।

খালি হাতে দাঁড়িয়ে আছি
ক্ষমার মতন চুইয়ে পড়ছে দিন।
বিদায়ের বাড়ি থেকে উড়ে এসো 
থরে থরে শুয়ে যাই— 
চোখ নিভে আসার পূর্ব পর্যন্ত অপেক্ষায় রাখি পেট,
আলো ভুলে যেতে যেতে
আমাদের ক্লান্ত হাতের তালুতে গজিয়ে উঠুক 
নতুন ফসলের রেখা।

আগুনের রঙ

উত্তপ্ত নগর, 
আগুন ছড়িয়েছে 
তাঁবুতে 
তাঁবুতে
যেন এতিম কোনো সুখ দৌড়ে পালাচ্ছে কোথাও,
পিছনে হাজারো চোখ
নিভুনিভু বেঁচে আছে আমিষের লোভে।

ফুটপাত, বাহারী দালান এবং শান দেয়া লাঙলও
ভয়ের ফোরাতে ডুবে যাচ্ছে দ্রুত,
বলেনি তবু; আমরা বেঁচে নেই।
...কোলাহল পৌঁছেনি কারো দরোজায়
শোকের তাপে পুড়ছে আমাদের ঈদ।

বল হে নগর,
মৃতদের অসুখ নেই কোনো;
ফসল পুড়লে পেট পোড়ার কি আর থাকে বাকি!

#

সন্ধ্যা

যে সূর্যটি অস্ত যাচ্ছে
আলোহীন
নগণ্য অতি
নি:সঙ্গ
ব্যর্থতার শোকে;

চেষ্টার কমতি ছিল না তার
এক চিলতে আলো বিলাবার—

জোছনার স্পর্শ বুকে হেঁটেছে অনেক
অন্যের ফসলে হেসেছে ব্যাকুল
আপ্লুত কান্নায় ভেসেছে তাথই।

অবশেষে জেনেছে সে
এই জন্ম অন্ধতার
ফেরারি কৃষকের
আবাদহীন জমিনে ডুবে যাওয়ার।
বিরাণ কালো হাতে অস্ত যাচ্ছে সে—

যে সূর্যটি অস্ত যাচ্ছে
জীবনের ঋণ তার শোধ হবে না কোনোদিন।

#

বরষা বৃত্তান্ত

এমন হতে পারতো
আমাদের দেখা হতো না কোনোদিন
তুমুল কোনো বৃষ্টি ছড়ানো দুপুরে
ভিন্ন ভিন্ন পাঠশালায় ভিজে যেতাম আমরা
গভীর ক্ষত নিয়ে নুয়ে যেতাম ক্ষুধার্তের শোভায়
অথবা নিজস্ব অসুখ সভায় 
একাকী দর্শক সেজে বসে থাকতাম শুধু
ক্লান্তি ক্ষয়ে বেজে ওঠা কান্নায় ভেসে যেতাম দূরে!

অথচ দেখা হলো আমাদের
সবুজ বরষা ছুঁয়ে যাওয়া ফুলের মতন
বেঁচে উঠলাম দুজনে
মুখোমুখি বসে বিনিময় হলো শোক
ব্যথাতুর গল্পে বয়ে গেলো ঘুমের সানাই,
যেন এমন আচমকা ঘ্রাণ নিয়ে দৌড়ানো দুপুরের 
খোঁজে ছুটছিলাম আমি
তুমিও তেমন হয়তো; 
নাকি বরষাই কাম্য ছিল আমাদের—

ভিজেছি; অথবা বৃষ্টি আসেনি কোনো
কেবল অজুহাত ছিল নাগরিক শোক উযযাপনের—
তবু অন্ধকার থেকে গেলো কিছু
মুখ ও মুখোশের বেশে।

#

নতুন সকাল

আহা এমন রোদ্দুর পকেটে এসেছিল কোন ভোর
দরোজায় দাঁড়িয়ে হাত বাড়িয়েছিল দুপুরের খাদে
সহজ নূপুর পায়ে এগিয়েছে আলো
অনাথ গল্পের পাজরজুড়ে মেখেছিল গোধূলি।

এভাবে আহত স্পর্শের গন্ধ মাথায় হেঁটে গেলো আলো
অদূর ছায়ায় তবুও তখন গাইছিল গান;

মনে পড়ে শখের তাঁবুতে সেবারও চেয়েছিল জাদু-মুখ
আঙুলের বাগানে উড়ছিল সবুজ
সরল কান্নারা ভুলেছিল বীরাঙ্গনার শোক।

তলিয়েছে সব; মুখ ও মায়ার আবাধ ছোঁয়াছুঁয়ি
ভিজেছে সানাই, অদূরের ঢেউ ওঠা সন্ধ্যাদি
তবু অপেক্ষা নিষেধ সভায় নতুন রোদ্দুর ফোটার।
আহা এমন রোদ্দুর পকেটে এসেছিল কোন ভোর...

#

ক্ষুধার্ত হাত

পথের কাঁধে পথ দাঁড়িয়েছে আজ
হাতের আড়ালে ক্ষুধার্ত হাত
রঙে রঙে ছয়লাব হয়ে আছে নাগরিক দিন;
দৌড়াবে কোথায়? অন্ধকার ঘনিয়ে আসছে ওই—

তবু এই যাত্রায় নিষেধ দেয়াল ছুঁয়ে দিবে হাত
মায়ার ওমে জড়িয়ে যাবে অলংকারহীন পুস্তিকায়;

এই মৃত্যুর মহরায় ভিন্নতা নেই কোনো
কেবল উষ্ণ বিশ্বাস রেখো
কোনো একদিন ফিরিয়ে আনবো সকাল
সবুজ ফসলের শরীরে পৌঁছে দিবে হারানো ঘ্রাণ।

দূরত্ব যতই হোক, থামবে না কেউ
বুক পকেটে রুগ্ন মায়ের স্নেহ রেখে 
ছুটে যাবো হাজার মাইল
এই বিশ্বাস জেনে রেখো; পরাজিত হয় না সৈনিক।

#

অপাঠ্য

আমার সামনে বসে আছে ক্লান্ত এক নৌবিহার 
অথবা তুমি,
থইথই হাহাকার যেন জাপটে ধরেছে কোনো
সবুজ, সতেজ ফুলেল বিকেল—
তুমি তেজি কুঠারের মতো কেটে যাচ্ছো
নিজের গুণাগুণ
আর পাঠের অপেক্ষায় থাকা বই ভাবছো নিজেকে—

আমাকেও পড়ো;
নিমগ্ন পাখির মতো তোমার গভীর ক্ষতে
নিমজ্জিত হই আমি,
ক্ষণে ক্ষণে
ভিজে উঠি দূরত্বের স্পর্শে।
তুমি নাই কাছাকাছি; তবুও থাকো খুব কাছে
একদম মাখামাখি কান্নার মতন দরদে
অনাদরে
আবদারে...

আর তুমি যেন অষ্ট ধাতুর বাতের আংটি
অতি যত্নে পুষে রাখি আঙুলের ফাঁদে,
নিয়ে ঘুরে বেড়াই মাঠ থেকে হাটে।
পরম বন্ধুর চরিত্রে তুমিও উপভোগ করো
আমার অস্থির, উম্মাদ অসহনীয় যাপন।

#

দুনিয়া

ইদানীং হাবিয়াহ দেখার ইচ্ছা হয়
আবার কখনো জান্নাতুল ফেরদৌসও—

সাত জীবন দূর থেকে তোমার ডাক আসে
—এদিকে তাকাও, এই যে আমি;
ঘুম ঘুম চোখে তোমার মুখে তাকাই
এবং বুঝতে পারি তুমিই সেই—
যার দিকে তাকালে বেহশত-দোজখ
সব দেখা হয়।

#

অভ্যাস

বিকেলের চোখ থেকে হেঁটে এলে তুমি
চারপাশে মিনমিনে রোদ্দুর—পোড়ার ইচ্ছায় হাসছে অবাধ;
আব্রুহীন ঠোঁট তোমার
সৌখিন মুগ্ধতায় নুয়ে ছিল খুব
আমিও কিছুটা ঝুঁকে; ফিরে এলাম—নিজের শরীরে।

হারিয়ে ফেলেছি সেসব, অসুখ—সুখ কাতর লাটাই;
এখন এমন—প্রায় রাতেই মনে হয় ডুবে যাই;
সকল অভাব মুছে—সেলফির ফাঁদে।

জেনেছো তুমিও—দেখতে দেখতে 
না দেখার অভ্যাস তৈরি হয়ে গেছে আমার।

#

আমিষ

এমন দ্বৈরথ মণ্ডিত শোভায় তলিয়ে গেলো দিন
যা হারানোর মতন জেগে ছিল প্রতিবেশীর ছায়ায়
করুণ সভায় দেখা দিত কভু, চোখ ছড়িয়ে বলে যেত
আমিষের অসুখ—
যদিও খিদের উঠোনে শুয়েছিল দুপুর; সন্ধ্যার অপেক্ষায়।

সেও এমন ছুটি যাওয়া মেঘের ঘরে লুকিয়েছে মগজ
দৃষ্টির ডালপালা জড়িয়েছে জ্বরে; 

...তালার সৌন্দর্য দেখে ভুলেছে সে চাবির তেজ
নাইওরের তৃষ্ণায় ক্ষতরাও জ্বলেছে তাথই;
এমন জুঁই ফুটেছিল ঘামে জানেনি কেউ
জেনেছে অসুখ, বিষাদ বিষয়ের দৈর্ঘ-প্রস্থ, আরো কিছু ঘুম—
বাকি পথ মইয়ের লোভ ভেঙে এসেছে এখন
ঘড়ির স্পর্শ নিভে গেছে নীরবে—এইসব শোকের শখ-পুস্তিকায়।

 

এসএস//


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি