ঢাকা, রবিবার   ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪

কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী আর নেই

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৮:০৪, ২৫ মে ২০২১ | আপডেট: ০৮:০৬, ২৫ মে ২০২১

বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক এবং একুশে পদকপ্রাপ্ত কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী আর নেই (ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিউন)। এ সময় তার বয়স হয়েছিল ৭২ বছর। তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাংলা একাডেমির সচিব এ এইচ এম লোকমান।

সোমবার (২৪ মে) রাত ১১টার দিকে রাজধানীর শ্যামলীর বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

গেল কয়েক মাস ধরে তিনি শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছিলেন। গত ২৫ এপ্রিল পাকস্থলীর সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন হাবীবুল্লাহ সিরাজী। পরে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে ভ্যান্টিলেশনে নেয়া হয় এ কবিকে।

আজ মঙ্গলবার (২৫ মে) হাবীবুল্লাহ সিরাজীর মরদেহ সর্বস্তরের শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের জন্য বাংলা একাডেমিতে আনা হবে। এছাড়াও ধানমন্ডিতে তার বাসভবন সংলগ্ন মসজিদে একটি জানাজা হওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এরপর আজিমপুর কবরস্থানে দ্বিতীয় জানাজা শেষে সেখানে তাকে দাফন করা হবে।

২০০৭-২০১৫ মেয়াদে জাতীয় কবিতা পরিষদের সভাপতি পদে থাকা হাবীবুল্লাহ সিরাজী ২০১৮ সাল থেকে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।

তিনি ১৯৪৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর ফরিদপুর জেলার রসুলপুর গ্রামে আবুল হোসেন সিরাজী ও জাহানারা বেগম দম্পতির ঘরে জন্মগ্রহণ করেন। ফরিদপুর জিলা স্কুল থেকে মাধ্যমিক, ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিকের পর বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে স্নাতক (১৯৭০) ডিগ্রি লাভ করেন তিনি।

শিক্ষাজীবন থেকেই সাহিত্যচর্চায় মনোযোগী হওয়া হাবীবুল্লাহ সিরাজী আশির দশকে জাতীয় কবিতা পরিষদ গঠনে অগ্রণী ভূমিকা রাখেন। বাংলা সাহিত্যাঙ্গনে তিনি ভূমিকা রেখে গেছেন কবিতা, শিশু সাহিত্যিক, গদ্যকার, অনুবাদক, ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক, ছড়াকার প্রভৃতি পরিচয়ে।

বাংলা সাহিত্যাঙ্গনে অনন্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে হাবীবুল্লাহ সিরাজী বিভিন্ন পুরস্কার-সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—একুশে পদক (২০১৬), বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার (১৯৯১), আলাওল সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৯), সংহতি গুণীজন সম্মাননা পদক (যুক্তরাজ্য, ২০০৯), রূপসী বাংলা পুরস্কার (ভারত, ২০১০), মহাদিগন্ত পুরস্কার (ভারত, ২০১১), নলতা মিতালী কচিকাঁচার মেলা সম্মাননা (২০১১), বঙ্গবন্ধু স্মারক পুরস্কার (ভারত, ২০১৩), ফজল শাহাবুদ্দিন কবিতা পুরস্কার (২০১৬), জাতীয় কবিতা পরিষদ পুরস্কার (২০১৮)।

হাবীবুল্লাহ সিরাজী ৩৩টি কাব্যগ্রন্থ, ১০টি ছড়ার সংকলনসহ লিখেছেন দুটি উপন্যাস, স্মৃতিকথা ও অসংখ্য প্রবন্ধ।

তার উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ হলো- ‘দাও বৃক্ষ দাও দিন’, ‘মোমশিল্পের ক্ষয়ক্ষতি’, ‘মধ্যরাতে দুলে ওঠে গ্লাশ’, ‘স্বপ্নহীনতার পক্ষে’, ‘আমার একজনই বন্ধু’, ‘পোশাক বদলের পালা’, ‘প্রেমের কবিতা’, ‘কৃষ্ণ কৃপাণ ও অন্যান্য কবিতা’, ‘সিংহদরজা’, ‘জয় বাংলা বলোরে ভাই’, ‘সারিবদ্ধ জ্যোৎস্না’, ‘কতো কাছে জলছত্র’, ‘কতোদূর চেরাপুঞ্জি’ ‘ভুলের কোনো শুদ্ধ বানান নেই’ ইত্যাদি।

কবিতা সংকলনের মধ্যে রয়েছে—প্রেমের কবিতা (১৯৮৯), বেদনার চল্লিশ আঙুল (১৯৯০), জয় বাংলা বলো রে ভাই (২০০০), নির্বাচিত কবিতা (২০০১), তুচ্ছ (২০০৩), স্বনির্বাচিত প্রেমের কবিতা (২০০৪), কবিতাসমগ্র (২০১১) এবং হাবীবুল্লাহ সিরাজীর প্রেমের কবিতা (২০১৬)।

এছাড়া তার গদ্যগ্রন্থ—দ্বিতীয় পাঠ (২০১০), মিশ্রমিল (২০১২), গদ্যের গন্ধগোকুল (২০১৮), পায়ে উর্বর পলি (২০১৮); শিশুসাহিত্য—ইল্লিবিল্লি (১৯৮০), নাইপাই (১৯৮৪), রাজা হটপট (১৯৯৯), ফুঁ (২০০১), ফুড়–ৎ (২০০৪), মেঘভ্রমণ (২০০৯), রে রে (২০১০), ছয় লাইনের ভূত (২০১১), একে শূন্য (২০১৫), কানাকানি (২০১৩), ছড়াছড়ি (২০১৮), মিলটিল (২০১৯); ছড়া সংকলন—এই আছি মৌমাছি (২০০৮), ছড়াপদ্য (২০১২) রয়েছে। তিনি ‘আমার কুমার’ (২০১০) নামে আত্মজৈবনিক বইও লিখেছেন।

এএইচ/


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি