কম খরচে মালয়েশিয়ায় উচ্চ শিক্ষার সুযোগ
প্রকাশিত : ২২:৩৭, ২৭ নভেম্বর ২০১৭ | আপডেট: ১৩:৫০, ২৮ নভেম্বর ২০১৭
মানসম্মত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিবেচনায় মালয়েশিয়া গুরুত্বপূর্ণ একটি দেশ। উচ্চশিক্ষায় বিভিন্ন কোর্সের পাশাপাশি বিভিন্ন পেশাগত কোর্সের সুযোগ আছে এখানে। কম খরচে মানসম্পন্ন কোর্সের সুযোগ তৈরি হওয়ায় পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীদের পছন্দের গন্তব্য এখন মালয়েশিয়া।
উচ্চ শিক্ষা অর্জনের স্বপ্ন থাকে অনেকেরই থাকে । সে স্বপ্ন পূরণের জন্য কেউ কেউ বিদেশেও পাড়ি জমান। বিদেশে গিয়ে উচ্চশিক্ষা অর্জনের বিষয়টি অনেকের কাছে স্বপ্নের মতো। এ স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে প্রয়োজন সঠিক প্রস্তুতির।
মালয়েশিয়ার সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কম খরচে পড়তে ভর্তির সুযোগ দিয়েছে বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের জন্য। প্রতিবছর বাংলাদেশে দেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে লাখো শিক্ষার্থী। এদের একটা অংশ দেশের বাহিরে উচ্চ শিক্ষার জন্য চলে যাচ্ছে।
রাজধানীর ডেইলি স্টার সেন্টরে এইমস এডুকেশন সলিউয়েশন এন্ড এসিই যৌথ আয়োজনে এডুকেশন ফেয়ার এন্ড স্পট এডমিশন শুরু হয় শনিবার। ২ দিন ব্যাপি এ মেলা শেষ হয়েছে রবিবার।
মালয়েশিয়ার ৪টি বিশ্ববিদ্যালয় IIUM,UPM,UTM,MMU থেকে প্রতিনিধিদল এসে সরাসরি শিক্ষার্থীদের ভর্তি ও ভিসা পদ্ধতি সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের তথ্য দিচ্ছেন।
মেলায় হাজারো শিক্ষার্থী ও অবিভাবকগণ তথ্যের জন্য এসেছেন।এদের মধ্যে অনেকে বিভিন্ন বিষয়ে স্পর্ট এডমিশন নিয়েছেন। যে কেউ অনার্স,মাস্টার্স,পিএইচডি এই তিন কোর্সে ভর্তির সুযোগ রয়েছে।
আগামি ফেব্রুয়ারি স্প্রিং সেমিস্টারের জন্য কম্পিউটার সায়েন্সে ভর্তি হতে আসা মুছায়াব ইবনে আহমাদ বলেন, যদি আমাকে দেশে টাকা দিয়ে পড়তে হয়,তবে একটু বাড়িয়ে দিয়ে রেংকিকে এগিয়ে নামি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাবো সেজন্য এটা একটা সুযোগ।`
শাজনীন তাসনিম বৃষ্টি জানান, উচ্চ শিক্ষার জন্য দেশের বাহিরে পড়তে যাওয়ার আগ্রহ ছিলো। এছাড়া টিউশন ফী ভিসার পরে দেয়ার সুযোগ আছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে কম খরচে মালয়েশিয়ার সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ।
ভর্তির যোগ্যতাঃ
মালয়েশিয়ার এ্যডমিশন এবং ভিসা সিস্টেম অন্যান্য দেশের এ্যডমিশন এবং ভিসা সিস্টেম থেকে অনেক বেশী সহজ। এর নিয়ম অনুযায়ী বর্তমানে অনেক দ্রুত ভিসা প্রসেস করা স্বম্ভব। কলেজ এবং ইউনিভার্সিটি থেকে অফার লেটার চলে আসলে পরবর্তীতে ভিসা হতে তেমন কোন বাঁধা থাকে না। মালয়েশিয়ার ভিসা প্রসেসিং এ আরো একটি সুবিধা হচ্ছে ভিসা হওয়ার পরে টিউশন ফি ইউনিভার্সিটিকে দিতে হয়। এর কারনে মালয়েশিয়াতে স্টুডেন্ট ভিসা প্রসেস করা খুবই নিরাপদ।
মালয়েশিয়াতে লেখাপড়া করার জন্য নূন্যতম এইচ এস সি পাশের পরে আবেদন করতে পারবে।
মালয়েশিয়াতে বর্তমানে অল্পকিছু বিষয়ে মাস্টার্স লেভেলে যেতে IELTS এর প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। ফান্ডেশন, ডিপ্লোমা / ব্যচেলর লেভেলে IELTS বাধ্যতামূলক নয়। তবে IELTS থাকলে অবশ্যই ছাত্রছাত্রী অনেক বেশী সূযোগ সুবিধা পাবে।
Foundation / Pre University Program/ Diploma/ Bachelor/ Masters Ph.D
টিউশন ফি:
মালয়েশিয়ায় লেখাপড়া করার সব থেকে সুবিধা হচ্ছে, এখানে টিউশন ফি অন্যান্য উন্নত দেশের ইউনিভার্সিটি/কলেজ থেকে অনেক কম। ইউরোপ/অস্ট্রেলিয়া/কানাডা তে এক/দুই বছরে টিউশন ফি দিয়ে মালয়েশিয়াতে সম্পুর্ণ কোর্স শেষ করা যাবে। কিন্তু সার্টিফিকেট এবং লেখাপড়ার মান কোন অংশেই ঐসব ইউনিভার্সিটি থেকে কম হবে না।
চার বছরের অনার্সের জন্য খরচ পড়বে ছয় থেকে পনের লাখ টাকা (আনুমানিক)
দেড় বছরের মাস্টার্স-কোর্সে - সারে তিন লাখ থেকে ৬ লাখ টাকা।
তিন বছরের পিএইচডি কোর্সে - পাঁচ থেকে সাত লাখ টাকা।
আবেদনকারীদের মধ্যে বেশির ভাগ ইন্জিনিয়ারিং,কম্পিউটার সায়েন্স,আইটি বিষয়ে পড়তে আগ্রহী শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বেশি।এরপর রয়েছে ব্যবসায় প্রশাসনে আগ্রহীরা।বিশ্ব রেংকিংয়ে ৩০০ ভেতরে রয়েছে এ বিশ্ববিদ্যালয়গুলি।আইএলটিএস ছাড়া ভর্তি ও ভিসার সুযোগ রয়েছে। পছন্দের বিষয়ে পড়ার সুযোগ থাকছে।
মালয়েশিয়ায় বিশ্বের প্রায় ৪০টি দেশ থেকে শিক্ষার্থীরা আসছে। এদের বেশির ভাগই আসেন উচ্চশিক্ষার জন্য। বাংলাদেশ থেকেও অনেক শিক্ষার্থী মালয়েশিয়ায় যান। যে কোনো দেশে উচ্চ শিক্ষার জন্য যাওয়ার আগে অবশ্যই জেনে নিতে হবে সেই দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা কেমন, কলেজ অথবা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিউশন ফি কত, থাকা-খাওয়া ও যাতায়াত খরচ কেমন, পার্ট-টাইম চাকরির কোনো সুযোগ আছে কি না ইত্যাদি।
এ ছাড়া নিজের সামর্থ্যের কথাও ভাবতে হবে। এর পর হিসাব কষে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’ মালয়েশিয়ায় সরকারি ও উচ্চ মানের কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া প্রায় বেশির ভাগ কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে সহজেই ভর্তি হওয়া যায়। এ ক্ষেত্রে আইইএলটিএস প্রয়োজন হয় না। মালয়েশিয়ার বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে টিউশন ফিও কম। মূলত এই কয়টি কারণেই বিশ্বের অনেক উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশ থেকে অনেক শিক্ষার্থী উচ্চ শিক্ষার জন্য মালয়েশিয়ায় যান।
উচ্চশিক্ষার জন্য মালয়েশিয়ায় যাওয়ার আগে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের কয়েকটি বিষয় জেনে রাখা ভালো। শিক্ষার্থীদের কয়েকটি ভাগে ভাগ করা গেলে বিষয়টি বুঝতে সুবিধা হবে। সেসব শিক্ষার্থীর এসএসসি ও এইচএসসি জিপিএ ৫.০০ কিন্তু বাংলাদেশের সরকারি ও বেরসকারি ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাননি তারা মালয়েশিয়ার কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারে। ইউএম, আইআইইউএম, ইউপিএম, ইউআইটিএম, ইউইউএম, এমইডিআইইউ, টেইলর্স, সেগি, মাল্টিমিডিয়া, সানওয়ে, আইএনটিআই, নীলাই, আইআইসি, এফটিএমএস ইত্যাদিতে পড়তে আসতে পারে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে আগে জেনে নিতে হবে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের খরচ কেমন।
যেমন- মালয়েশিয়ার বেশির ভাগ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও এমইডিআইইউ ইত্যাদির খরচ বিষয় ও ক্রেডিট অনুসারে (শুধু টিউশন ফি, থাকা-খাওয়া ও যাতায়াত খরচ বাদে) বছরে ৫ থেকে ১০ হাজার রিংগিত (এক লাখ ১০ হাজার থেকে দুই লাখ ২০ হাজার টাকা), আবার টেইলর্স, সেগি, মাল্টিমিডিয়া ইত্যাদির খরচ বছরে ২০ থেকে ২৫ হাজার রিংগিত (চার লাখ ৪০ হাজার থেকে পাঁচ লাখ ৫০ হাজার টাকা)।
বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে আসার পর পরবর্তী সেমিস্টারগুলোর টাকা জোগাড় করতে সমস্যা হলে সেই বিশ্ববিদ্যালয় পরিবর্তন করতে পারবেন, এ ক্ষেত্রে তাকে বর্তমান বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিত থাকতে হবে এবং পর্যাপ্ত সময় (দুই-তিন মাস) হাতে থাকতে প্রস্তুতি নিতে হবে। তাহলে তাকে দেশে ফিরে যেতে হবে না। আর কেউ যদি অপছন্দের বিশ্ববিদ্যালয় অথবা কলেজ পরিবর্তন করতে চায়, সেটাও তাকে করতে হবে বর্তমান বিশ্ববিদ্যালয় অথবা কলেজে নিয়মিত থেকে এবং পর্যাপ্ত সময় আগে।
ফলাফল ও আর্থিক অবস্থা ভালো হলে বিদেশি শিক্ষার্থীরা মালয়েশিয়ার যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পারেন। কিন্ত ফলাফল ও আর্থিক অবস্থা মোটামুটি হলে তারা ইউইউএম, এমইডিআইইউ ইত্যাদি কম খরচের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পারেন। ফলাফল ও আর্থিক অবস্থা ভালো নয় এমন শিক্ষার্থীদের মালয়েশিয়ায় পড়াশোনা করতে আসা ঠিক নয়। তবে বাংলাদেশ থেকে এমন অনেক শিক্ষার্থী আসেন, পড়ার নামে কাজ করাই যাদের উদ্দেশ্যে। মালয়েশিয়ায় ফুল টাইম কাজের পাশাপাশি পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়।
মালয়েশিয়ার বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ কিংবা ইনস্টিটিউটগুলোতে তুলনামূলক অনেক কম খরচে উন্নত পড়াশোনা করা যায়। এখানে পড়ার খরচ বাংলাদেশি অনেক প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়েও কম।
আর তাই প্রতিবছর অনেক গুলি শিক্ষার্থী পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে জায়গা না পেয়ে অনেকে পারি জামান দেশের বাহিরে।
কে আই/
আরও পড়ুন