কম সংখ্যক মানুষই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে
প্রকাশিত : ১৯:৪১, ২৪ জুন ২০২০ | আপডেট: ২০:১২, ২৪ জুন ২০২০
দোয়া ইসলামের অন্যতম ইবাদত। হাদিস শরিফে দোয়াকে ইবাদতের মগজ আখ্যায়িত করা হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) যেকোনো প্রতিকূল পরিস্থিতির সম্মুখীন হলে দোয়ায় মত্ত হয়ে যেতেন। দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়। কিন্তু কম সংখ্যক মানুষই আছে যারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। অথচ এই কম সংখ্যক লোকই আল্লাহর নৈকট্য লাভ করবে। আমাদের চেষ্টা করতে হবে এই কম সংখ্যকদের তালিকায় থাকা।
একদিন হযরত উমর (রা.) বাজারে একজন লোকের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। সে সময় ওই লোক এই বলে দোয়া করছিল যে, ‘ও আল্লাহ, আমাদের আপনার ‘কম সংখ্যক’ বান্দাদের মাঝে কবুল করে নিন। ও আল্লাহ, আমাদের আপনার ‘কম সংখ্যক’ দাসদের মধ্যে কবুল করে নিন।’
উমার (রা.) তাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তুমি এমন দোয়া কোথা থেকে পেলে?’
লোকটি বলল, ‘আল্লাহ তার কিতাবে বলেন, এবং আমার কম সংখ্যক বান্দাই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে।’ [আস সাবা, আয়াত: ১৩]
এ কথা শোনার পর উমর (রা.) কেঁদে দিলেন এবং নিজেকে নিজেই এই বলে তিরষ্কার করলেন যে, ‘হে ওমর, লোকেরা তোমার চাইতে বেশি জ্ঞানী এবং দোয়া করলেন, ‘ আল্লাহ! আমাদের আপনার ‘কমসংখ্যক’ বান্দাদের মধ্যে কবুল করে নিন।’
মাঝে মাঝে এমন হয় যে আপনি কোনো একজনকে উপদেশ দিলেন একটি পাপকর্ম হতে বিরত থাকতে। তখন সে রেফারেন্স টেনে বলে, ‘ভাই অধিকাংশ লোকই তো এমন করে।’ কিন্তু আপনি যদি কুরআনে ‘অধিকাংশ লোক’ শব্দটির ব্যবহার দেখেন তবে দেখবেন; অধিকাংশ লোকই, - জানেনা’ [আল-আরাফ: ১৮৭]
‘কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না।’ [বাকারা: ২৪৩]
‘বিশ্বাস করে না।’ [হুদ : ১৭]
‘আর আপনি যদি ‘তাদের অধিকাংশ’-এর অবস্থা দেখেন তবে দেখবেন যে তাদের অধিকাংশই, অবাধ্য।’ [আল-মায়েদাহ: ৫৯]
‘মূর্খ্য।’ [আল-আন’আম : ১১১]
‘মুখ ফিরিয়ে নেয়।’ [আল-আম্বিয়া : ২৪]
‘চিন্তা করে না।’ [আল-আনকাবূত: ২৪]
‘এবং শোনে না।’ [আল-আনফাল: ২১]
সুতরাং ‘কম সংখ্যকদের’ মাঝে শামিল হয়ে যান যাদের ব্যাপারে আল্লাহ বলেন : ‘এবং আমার কম সংখ্যক বান্দাই কৃতজ্ঞ।’ [আস-সাবা: ১৩]
‘কিন্তু অধিকাংশই অবিশ্বাস করেছে, অল্প কিছু ব্যতীত।’ [হুদ : ৪০]
‘তারা নিয়ামতেভরা জান্নাতে থাকবে। পূর্ববর্তীদের মধ্য থেকে হবে বেশী। এবং পরবর্তীদের মধ্য থেকে হবে কম।’ [ওয়াকিয়া : ১২-১৪]
পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘যখন তোমার কাছে আমার বান্দা আমার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে (তখন বলে দাও যে) নিশ্চয়ই আমি তাদের কাছে। প্রার্থনাকারী যখন আমাকে ডাকে, তখন আমি তার ডাকে সাড়া দিই। সুতরাং তারাও যেন আমার ডাকে সাড়া দেয় ও ঈমান আনয়ন করে, আশা করা যায় তারা সফলকাম হবে।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৬)
‘সকল প্রশংসা মহাবিশ্বের প্রতিপালক হে আল্লাহ তোমারই জন্যে। ২. তুমি দয়াময়! মেহেরবান! ৩. কর্মফল দিবসের মালিক! ৪. আমরা শুধু তোমারই ইবাদত করি- শুধু তোমারই সাহায্য চাই। ৫-৬. (প্রভু হে!) সাফল্যের সরলপথে, তোমার প্রিয়জনদের পথে আমাদের পরিচালিত করো। ৭. (প্রভু হে!) বিভ্রান্ত ও অভিশপ্তদের অন্ধকার পথ থেকে তুমি আমাদের রক্ষা করো। (আমিন!)’ [সূরা আল ফাতিহার মর্মকথা]
সূরা ফাতেহা আমরা তো প্রায় প্রতিদিনই পড়ে থাকি। প্রতি নামাজে উচ্চারণ করি। এ সূরা আমাদের কী শিক্ষা দেয়?
আমাদের নামাজের ব্যাপারে বলা হয় যে, এটা একটা টেপ রেকর্ডার বা ঘড়ির মতো সুইচ দিলেই এলার্ম বেজে ওঠে। নামাজে আমাদের এ সূরার তিলাওয়াতও এমনই। অথচ কখনও কি ভেবেছি যে, আমি আহকামুল হাকিমীন এর দরবারে এসে দাঁড়িয়েছি; তাঁর কাছে আমার জরুরত ও চাহিদা পেশ করছি, সেগুলো কবুল করাতে হবে?
আমাদের তো এটাই জানা থাকে না যে, আমরা বলছি কি? আবার কেউ হয়তো জানে, কিন্তু খেয়াল করে না যে, মহান আল্লাহর সামনে দাঁড়িয়ে সে কি বলছে?
‘আর-রাহমানুর রহীম’ কেন বারবার বলা হয়? প্রত্যেক রাকাতেই কেন বারবার ‘আর-রাহমানুর রহীম’, ‘আর-রাহমানুর রহীম’, ‘আর-রাহমানুর রহীম’ পড়তে হয়? হে আল্লাহ, আপনি অত্যন্ত মেহেরবান ও দয়ালু সত্তা। প্রত্যেকের ওপর আপনি দয়া ও করুণার চাদর বিছিয়ে রেখেছেন। এর মাধ্যমে আমাদের প্রস্তুত করা হয় যেন আমাদের ভেতরেও দয়ামায়ার আবেগ তৈরি হয়ে যায়। আমরাও যেন মহান আল্লাহ তায়ালার ‘রহমান’ গুণের এমন অধিকারী হতে পারি, যেমন অধিকারী হয়েছেন হজরত রাসূলে করিম (সা.)। এক্ষেত্রে তিনিই আমাদের মাপকাঠি।
মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ বলেছেন, ‘তোমাদের জন্য রাসূলুল্লাহর মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ।’
এসএ/