করোনা অনেক কিছু শেখাচ্ছে
প্রকাশিত : ১৭:১৬, ১৫ জুন ২০২০ | আপডেট: ১৭:৩৭, ১৫ জুন ২০২০
মোহাম্মদ নাসিমের জানাজায় ডা. জাফরুল্লাহ।
জাতীয় চার নেতার একজন ক্যাপ্টেন এম মুনছুর আলীর সুযোগ্য পুত্র, সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের মৃত্যুতে দেশ একজন ত্যাগী নেতাকে হারিয়েছে, তাতে কোন সন্দেহ নেই। এর মধ্যদিয়ে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জাতীয় চার নেতার পরিবারের সামনে থেকে নেতৃত্ব দেয়ার সদস্যেরও বিদায় হলো।
মোহাম্মদ নাসিম চলে গেছেন না ফেরার দেশে। রোববার তাকে চির নিদ্রায় শায়িত করা হয়েছে। তার মৃত্যুতে দেশের সকল রাজনৈতিক দল শোক প্রকাশ করেছেন। কিন্তু মোহাম্মদ নাসিমের জানাজায় ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর অংশগ্রহণ অনেকের মতো আমার কাছেও ছিলো উল্লেখযোগ্য একটি দিক। একটি জাতীয় দৈনিকের অনলাইন ভার্সনের একটি খবর থেকে জানতে পারলাম সদ্যই করোনা নেগেটিভ হয়েছেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। নেগেটিভ প্রতিবেদন পাওয়ার পর পরই অনেকটা চাঙ্গা মুডে ছিলেন তিনি।
কিন্তু রোববার রাজধানীর ধানমন্ডির গণস্বাস্থ্য হাসপাতালের চার তলা থেকে কাউকে না জানিয়ে সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের জানাজায় উপস্থিত হন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। খবর পেয়ে তাঁর পেছনে পেছনে স্যালাইন ও চিকিৎসা সামগ্রী নিয়ে উপস্থিত হন চিকিৎসকেরা। পরে তাকে স্যালাইন দেওয়া হয়। খবরটি পড়ে জানা গেছে, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী কাউকে কিছু না বলেই বনানী কবরস্থানে চলে যান। সেখানে তিনি নাসিমের জানাজায় অংশ নেন। গার্ড অব অনার প্রদর্শনের সময় প্রয়াত নাসিমের শ্রদ্ধার্থে স্যালুট দেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। এর আগে ডা. জাফরুল্লাহ নাকি তার চিকিৎসককে বলেছেন, 'আমি যদি মোহাম্মদ নাসিমের জানাজায় গিয়ে মারাও যাই, তবুও আমি তার জানাজায় যেতে চাই।
তথ্যানুযায়ী, ডা. জাফরুল্লাহ ও মোহাম্মদ নাসিম একসময় দেশের স্বাস্থ্যখাত নিয়ে একসঙ্গে কাজ করেছেন। তাদের মধ্যে দীর্ঘদিনের সুসম্পর্ক ছিল। সেই সম্পর্কের তাগিদেই অসুস্থতা সত্ত্বেও তিনি মোহাম্মদ নাসিমের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ছুটে যান। মোহাম্মদ নাসিম যে ধারার রাজনীতি করতেন ডা. জাফরুল্লাহ তার বিপরীতধর্মী রাজনীতি করেন। মতাদর্শের কারণে একজন আরেকজনের পক্ষাবলম্বন করেননি কখনো। কিন্তু ভালো মানসিকতার পরিচয় দিয়ে অসুস্থ থাকা সত্ত্বেও ডা. জাফরুল্লাহ মোহাম্মদ নাসিমের জানাজায় অংশগ্রহণ করে প্রমাণ দিলেন রাজনীতিতে যতোই মতার্দশ থাকুক না কেন সর্ম্পকটাই হচ্ছে মূল।
মাঝে মাঝে আমরা সবকিছুর সাথে রাজনীতিকে গুলিয়ে ফেলি। আমরা যে যার আদর্শের রাজনীতিতে জড়িত থাকবো, রাজনীতির মঞ্চে দাঁড়িয়ে একে অপরের দোষ ত্রুটি তুলে ধরবো কিন্তু সেটা কখনোই সম্পর্কের অবনতি ঘটাবেনা। মোট কথা, আমরা যে দলেরই হইনা কেন যার যার সন্মানটুকু তা তাকে দিতে হবে। আজ লজ্জার সাথে বলতে হচ্ছে, জাতীয় নেতা মোহাম্মদ নাসিম ও ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মো. আবদুল্লাহর মারা যাওয়ার খবর নিয়েও কেউ কেউ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেছেন। একজন মানুষ মারা গেলে তাঁর আর কতোটুকু বিরোধিতা করা যায়? আর মোহাম্মদ নাসিম ও ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ আবদুল্লাহ এমন রাজনীতি করেননি যে তাঁরা মারা যাওয়ার পর তাঁদের নিয়ে বিরুপ মন্তব্য করার মতো ধৃষ্টতা আমরা দেখাবো। যারা এগুলো করছেন তাদেরকে শুধু ডা. জাফরুল্লাহ স্যারের থেকে শিক্ষা নিতে অনুরোধ করবো।
একজন অসুস্থ মানুষ মোহাম্মদ নাসিমের জানাযায় গিয়ে যে মহানুভবতার পরিচয় দিয়েছেন তা থেকে আমাদের অনেক শিক্ষা নেয়ার আছে। ডা. জাফরুল্লাহ স্যার জানতেন মোহাম্মদ নাসিম কে ছিলেন। তাইতো তিনি তাঁর ডাক্তারকে বলতে পেরেছিলেন জানাযায় গিয়ে তাঁর মৃত্যু হলেও তিনি জানাযায় যাবেন। যারা অতি উৎসাহী তাদের বলবো আগে ইতিহাস জানুন। গুণীজনদের সন্মান করতে শিখুন। মনে রাখবেন, বেশি চালাকের কিন্তু ভবিষ্যৎ ভালো হয়না।
লেখক- সাবেক সাধারণ সম্পাদক, বরিশাল সাংবাদিক ইউনিয়ন।
এনএস/
** লেখার মতামত লেখকের। একুশে টেলিভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে।