ঢাকা, বুধবার   ১৫ জানুয়ারি ২০২৫

করোনা মানসিক ও মনস্তাত্ত্বিক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে: গবেষণা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২০:১৭, ১৪ মে ২০২০

বেরোবি ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মেজর নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ।

বেরোবি ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মেজর নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ।

নভেল করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারীটি দেশজুড়ে ক্রমবর্ধমান হারে ছড়িয়ে পড়ার কারণে এটি সাধারণ জনগণ তথা প্রাপ্তবয়স্ক, পেশাদার ও সম্মুখে সেবা প্রদানকারী ব্যক্তিবর্গ এবং দেশে বিদ্যমান অন্যান্য রোগাক্রান্ত মানুষের মাঝে এক ধরনের আশঙ্কা ও উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর ও ওয়েস্টার্ন সিডনি ইউনিভার্সিটি, অস্ট্রেলিয়ার এক গবেষণামূলক সমীক্ষায় এমনই তথ্য উঠে এসেছে।

আজ বৃহস্পতিবার (১৪ মে) সকালে রংপুরস্থ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি)-এর ঢাকাস্থ শ্যামলী লিঁয়াজো অফিসে মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে এসব তথ্য তুলে ধরেন সমীক্ষাটির চিফ ইনভেস্টিগেটর এবং বেরোবি ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মেজর নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ, বিএনসিসিও।  

প্রতিষ্ঠান দুটির এবারের গবেষণার মূল উদ্দেশ্য ছিলো করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) কালীন বাংলাদেশের মানুষের মানসিক স্বাস্থ্য এবং মনস্তাত্ত্বিক প্রভাবের বিভিন্ন স্তর অনুসন্ধান করা। গবেষণালব্ধ সমীক্ষায় দেখা গেছে, ক্রমবর্ধমান লকডাউন-এর ফলে মানুষের মধ্যে নানা ধরনের মানসিক সমস্যা দেখা দিচ্ছে। যার মধ্যে অনিদ্রা, ও মানসিকভাবে ভেঙে পড়া ইত্যাদি বিষয় উল্লেখযোগ্য। 

এ গবেষণাটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করার মাধ্যমে একটি ক্রস সেকশনাল সমীক্ষা পরিচালনা করে, যা ড. ওয়াজেদ রিসার্চ এন্ড ট্রেনিংইন্সটিটিউট, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর এবং স্কুল অব সায়েন্স এন্ড হেলথ, ওয়েস্টার্ন সিডনি ইউনিভার্সিটি, অস্ট্রেলিয়া দ্বারা পরিচালিত হয়। ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে লকডাউন চলাকালীন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে সংমিশ্রিত এবং স্বপ্রণোদিত অনলাইন জরিপ পরিচালনা করা হয়, যেখানে ১০ হাজার ৯০০ জন উত্তর দাতাদের মধ্যে ১০ হাজার ৬৬০ জন উত্তরদাতা প্রশ্নপত্র যথাযথ ভাবে সম্পন্ন করেন।

গবেষণা ফলাফলে দেখা যায় যে, ১০ হাজার ৬৬০ জন উত্তরদাতার মধ্যে পুরুষ ৪৯.১%, নারী ৫০.৪% এবং অন্যান্য ০.৫%। ৬১.৬% অংশগ্রহণকারীর বয়স ১৮ থেকে ২৮ বছর এবং ৫৬.৪% উত্তরদাতা পূর্ণকালীন বা খণ্ডকালীন কর্মে নিযুক্ত ছিলেন। বেশিরভাগ উত্তরদাতা (৩৩.৯%) ছিলেন ঢাকার বাসিন্দা। সামগ্রিকভাবে দেখা গেছে যে, উত্তরদাতাদের ৮০.২% পরিবারের সাথে থাকছেন এবং তাদের মতে, সংকটকালে পরিবারের সাথে বসবাস করার কারণে তারা কিছুটা হলেও স্বস্তিবোধ করছেন। 

উত্তরদাতাদের মধ্যে, ১ হাজার ১৮৫ জন উত্তরদাতা জানিয়েছেন যে, তারা ইতোমধ্যে কোভিড-১৯ পরীক্ষা করাতে সক্ষম হয়েছেন এবং এরমধ্যে ২৯.২০% এ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন। 

এ গবেষণায় দেখা গেছে যে, উত্তরদাতাদের ৯১.৪% এ মহামারী পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন। তাদের মধ্যে ৭২.৮% উত্তরদাতা অনিদ্রায় ভুগছেন, ৭১.৬% উত্তরদাতা এ মহামারী পরিস্থিতিতে বিরক্ত ও ক্ষুব্ধ এবং ৬৩.৫% উত্তরদাতা ভবিষ্যৎ নিয়ে হতাশা ও শঙ্কার কথা উল্লেখ করেন। ৬৮.২% উত্তরদাতার মতে, এ মহামারী পরিস্থিতিতে সামগ্রিকভাবে তারা আতঙ্কিত এবং বেশিরভাগ (৫৯.৪%) উত্তরদাতা বলেছেন যে, তাদের কাছে জীবন অর্থহীন হয়ে পড়েছে। 

উল্লেখ্য অনিদ্রা, বিরক্তি, বিমলতা, উদ্বিগ্ন অবস্থা, নেতিবাচক চিন্তা, আতঙ্ক এবং উত্তরদাতাদের হতাশা থেকে সহজেই দাবি করা যায় যে, করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারীটি বাংলাদেশের মানুষের মানসিক অবস্থার উপর ব্যাপকভাবে প্রভাব ফেলেছে। 

এ গবেষণাটির সহযোগী ইনভেস্টিগেটর ছিলেন ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এগ্রিকালচার এন্ড টেকনোলজির সহযোগী অধ্যাপক ড. তানভীর আবির এবং অস্ট্রেলিয়ার ওয়েস্টার্ন সিডনি ইউনিভার্সিটির স্কুলঅবসায়েন্স এন্ড হেলথ বিভাগের সিনিয়র লেকচারার ড. কিংসলে এগো। এতে সহকারী গবেষক হিসেবে ছিলেন যথাক্রমে ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এগ্রিকালচার এন্ড টেকনোলজির সহকারী অধ্যাপক দেওয়ান মুহাম্মদ নূর-এ ইয়াজদানি, বেরোবির জেন্ডার এন্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজবিভাগের প্রভাষক ত্বহা হুসাইন এবং বেরোবির ড. ওয়াজেদ রিসার্চ এন্ড ট্রেনিংইন্সটিটিউটের এমফিল রিসার্চ ফেলো মোঃ হাবিবুর রহমানসহ অন্যান্যরা।

এনএস/


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি