ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪

করোনা রোগীর লাশ দাফনে কী ভয়?

নজরুল ইসলাম নাহিদ

প্রকাশিত : ১৫:৩৬, ৪ মে ২০২০ | আপডেট: ১৬:১২, ৪ মে ২০২০

১ দিন হতে ১০০ বছরের বৃদ্ধ পর্যন্ত কেউ রক্ষা পাচ্ছে না করোনার থাবা থেকে। তার যেন নেই বিন্দু মাত্র মায়া, মমতা, মানছে না কোনো নিয়ম। রক্ষা পাচ্ছে না ডাক্তার, নার্স, মেডিকেল টেকনোলজিস্টসহ মেডিকেল প্রফেশন এর কোনো ব্যাক্তি। নিস্তার নেই পার্লামেন্টের সদস্য, মন্ত্রী, রাজনীতিবিদরাও। বিশ্বের পরাশক্তি চীন, রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কোরিয়াসহ সবারই যেন এক নীরব আত্মসমর্পণ করেছে এ করোনাতে। এ যেন এক অঘোষিত তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ।

পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বন্ধন পিতামাতার সঙ্গে তার সন্তানের। করোনা যেন এই পবিত্র বন্ধনটাও চিনতে সহজ করে দিয়েছে, করোনার ভয়ে সন্তান তার মাকে জঙ্গলের মধ্যে ফেলে আসতেও যেন দুইবার চিন্তা করে না। ছেলে তার বাবার লাশ হাসপাতালে রেখে চলে যাওয়ার নজিরও কম নয়। কিন্তু করোনা কাবু করতে পারেনি ঐসব নোংরা মন মানসিকতার কিছু মানুষকে যারা নূন্যতম লোভ সামলাতে পারে না এই বিপর্যয়ের মধ্যেও অসহায় মানুষের হক আত্মসাৎ না করতে তাদের বিবেক একটি বারের জন্যও যেন নাড়া দেয়নি। এটি অতি ক্ষুত্র একটি জীবাণু যা কিনা খালি চোখে দেখা যায় না এমনকি সাধারণ মাইক্রোস্কোপ এর মাধ্যমে দেখা যায় না যাকে দেখার জন্য ইলেক্ট্রন মাইক্রোস্কোপ যন্ত্রের  প্রয়োজন হয়। যেহেতু খালি চোখে দেখা যায় না তাই ভয়টা আমাদের সেখানেই, আর এই ভাইরাসটি আমাদের দেহে নাক, মুখ, চোখের মাধ্যমে প্রবেশ করে। একজনের কাছে থেকে আরেকজনের কাছে এটা হাঁচি, কাশি, থুথু এর মাধ্যমে ছড়াতে পারে। আর এই জন্যই আমাদের প্রটেকশন নেওয়াটা জরুরি। কথায় আছে prevention is better than  cure, তার মানে করোনার হাত থেকে বাঁচতে প্রটেকশন নাও, অন্যের থেকে দূরে থাকো, এ যেন এক একলা চলো নীতি অবলম্বন করা।

মৃত্য ভয় মানুষকে এমনভাবে তাড়া করছে আমরা যেন মানবিক কাজটুকুও করতেও কার্পণ্য বোধ করছি। এখন কোনো মানুষ মারা গেলেই হউক সেটা করোনার কোনো লক্ষণ নিয়ে নতুবা না, হউক কোনো নিকটাত্মীয় অথবা নিজের কোনো আপনজন আমরা তার জানাজা, সৎকারটুকুও করতে চাইছি না। ধরেই নেই জানাজাতে অংশগ্রহণ করলেই বুঝি ভাইরাস আমার মধ্যে চলে আসবে। কিন্তু ভাইরোলজিতে তার সুন্দর সমাধান আছে, ব্যাকটেরিয়া থেকে ভাইরাস এর মধ্যে একটা অন্যতম পার্থক্য হলো ব্যাকটেরিয়া যেমন নোংরা আবর্জনা পঁচা বাসি খাবার ও পানির মধ্যে এরা জন্ম নিতে পারে ও বেঁচে থাকতে পারে এবং সেখান থেকে মানব দেহে প্রবেশ করে বোগী তৈরী করে কিন্তু ভাইরাস এর বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী ভাইরাসকে বাঁচতে হলে জীবিত কোনো কোষ বা মাংস পিন্ডের দরকার হয়। সেটা হতে পারে মানব কোষ অথবা পশু পাখি, আর তাই ভাইরাস মৃত কোনো কোষ বা মাংস পিন্ডের মধ্যে একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। 

তবে বিশ্ব  স্বাস্থ্য সংস্থা তাদের সর্বশেষ রিপোর্টে জানিয়েছেন, মারা যাওয়ার পর মানুষের শরীরে জীবাণু বেশির ভাগই দীর্ঘ সময় জীবিত থাকে না। থাইল্যান্ড এর মেডিকেল সার্ভিসের মহাপরিচালক স্যামসাক আকাসিলিফ ব্যাংকক পোস্টকে বলেন, কোন ব্যক্তি ভাইরাসে মারা যাওয়ার সাথে সাথে জীবাণুও মরে যায়। ভাইরোলজির মতে সেই নির্দিষ্ট সময় কাল সময়টা ৬ ঘণ্টার বেশি নয়। আর এই নিৰ্দিষ্ট সময় পরে ওই মৃত কোষ বা মাংস পিন্ড থেকে সংক্রামক হওয়ার সম্ভবনা নেই বললেই তাই অন্য ব্যক্তির শরীরে সংক্রমণের সুযোগ কম। কিন্তু এই সময়টা নিয়েও আছে মতপার্থক্য আর বিভ্রান্তিটা সেখানেই। এছাড়া মৃত ব্যক্তি যেহেতু শ্বাস প্রশ্বাস নিবে না বা কাঁশিও দিবে না তাহলে ভয়টা কোথায়? কিন্তু এই ভাইরাসটি অন্য সব ভাইরাস থেকে অপেক্ষাকৃত ভারী প্রকৃতির হওয়ায় হাঁসি বা কাশি দেওয়ার পর এটা বেশি দূর পর্যন্ত যেতে পারে না সেই দূরত্বটা হচ্ছে ৩ ফুট অথবা ১ মিটার। আর আমরা যদি এই দূরত্বটা মেনে কার্য সম্পাদন করি তাহলে নিজেদের মধ্যে থেকেও ক্রস ইনফেকশন হওয়ার সম্ভবনা ও নেই বললেই চলে, আর আমরাও এই সমস্যা সমাধানের অনেকটা কাছেই চলে যেতে পারি।

করোনাতে ভয়ের ব্যাপারটা হলো এই ভাইরাসের জন্য এখন পর্যন্ত কোনো দেশ বা বিজ্ঞানী সুনির্দিষ্ট কোনো এন্টি ভাইরাল ড্রাগ আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়নি। তাই কোনো দেশেই সুনির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা ব্যবস্থা নেই। এক, এক দেশ তার নিজস্ব টেকনিক নিজস্ব চিকিৎসা পদ্ধতি অবলম্বন করে রোগীদের বাঁচানোর জন্য প্রাণপন চেষ্টা করে যাচ্ছে। তাই ভাইরাস থেকে নিজেকে বাঁচানোর উপায় একটাই ঘরে থাকুন, ঘরে থাকুন আর ঘরে থাকুন।

ভাইরাস এর জেনোম সিকোয়েন্স বার বার পরিবর্তনের মাধ্যমে ভাইরাস এর প্যাথোজেনিসিটির প্রকারটাও কমতে থাকে হয়তো একটা সময় এফেক্টেড এর হার কমতে শুরু করবে। তাই আমরা নিরাশ না হই। রাত যত গভীর হয় ভোর তত নিকটে আসে। আমরা আমাদের সরকারের দেওয়া নিয়ম কানুন মেনে চলবো নিজেকে করোনার হাত থেকে বাঁচাবো। আর নিজে বাচঁলেই বাঁচবে পরিবার বাঁচবে দেশ।

লেখক: নজরুল ইসলাম নাহিদ (মাইক্রোবায়োলোজিস্ট ), ল্যাব ইনচার্জ, লিন্নাস মেডিকেল সেন্টার, মানামা, কিংডম অফ বাহরাইন।

এমবি//


** লেখার মতামত লেখকের। একুশে টেলিভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে।
Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি