‘করোনার চেয়ে ক্যান্সারে তিনগুণ বেশি মানুষের মৃত্যু’
প্রকাশিত : ১৭:১৭, ২ নভেম্বর ২০২২ | আপডেট: ১৭:১৮, ২ নভেম্বর ২০২২
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, দেশে করোনার চাইতে ক্যান্সারে তিনগুণ বেশি মানুষ মৃত্যুবরণ করে। ক্যান্সার নির্মূলে সচেতনার খুবই প্রয়োজন। নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন, ধূমপান না করা, তামাক সেবন না করা, ফ্যাটিফুড কম খাওয়া, ভেজাল খাবার না খাওয়াসহ কিছু বিধিনিষেধ মেনে চললে ক্যান্সার নির্মূল করা সম্ভব।
তিনি বলেন, দেশে বছরে দেড় লক্ষ মানুষ নতুন করে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয় এবং লক্ষাধিক মানুষ মারা যায়। ক্যান্সার চিকিৎসার ক্ষেত্রে দেশকে আরও এগিয়ে নিতে হবে। বিভাগীয় পর্যায়ে নির্মাণাধীন হাসপাতালগুলোতে ক্যান্সার সেন্টার থাকবে। ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির ব্যবস্থা করা হবে।
বুধবার (২ নভেম্বর) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) এক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা জানান। অনুষ্ঠানে জরায়ু-মুখ ও স্তন ক্যানসার স্ক্রিনিং কর্মসূচি সংক্রান্ত তথ্য ও ফলাফল প্রকাশ হয়।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ক্যানসার স্ক্রিনিংয়ের জন্য ৫৭০টি সেন্টার করা হয়েছে। যার মাধ্যমে প্রাথমিক স্ক্রিনিং করা হয়। এছাড়া ক্যানসার পজিটিভ রোগীর জন্য ৪৩টি কলোসকপি সেন্টার করা হয়েছে। আমাদের পরিকল্পনা এবং নির্দেশনা রয়েছে ৫০০টি উপজেলায় ইলেকট্রনিক ডাটা ট্রাকিং সেন্টার করার।
ডেঙ্গু প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে দেড় শত মানুষ মারা গেছেন এবং চল্লিশ হাজার মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। গত অক্টোবর মাসে সবচেয়ে বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছে এবং মারা গেছে। এ পর্যন্ত ৫০টি জেলায় ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়েছে। তবে চিকিৎসার জন্য সরকারের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি রয়েছে। তবে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে মশা নিধন কার্যক্রম আরো জোরদার করতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, স্তন ও জরায়ু মুখ ক্যান্সার প্রতিরোধে স্ক্রিনিং কার্যক্রম সফল করতে হবে। ক্যান্সারের আক্রান্ত অধিকাংশ রোগীরা তৃতীয় ও চতুর্থ ধাপে আসেন ফলে তাদেরকে বেশিরভাগ রোগীকেই বাঁচানো সম্ভব হয় না। কিন্তু শুরুতে ক্যান্সার নির্ণয় করা গেলে তাদেরকে বাঁচানো সম্ভব।
প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক ডা. আশরাফুন্নেসা জানান, এই কর্মসূচীর অধীনে গত পাঁচ বছরে ২০১৭ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ২৪ লক্ষ মহিলার স্ক্রিনিং করা হয়েছে। যাদের মধ্যে ৫.৭১ শতাংশ অর্থাৎ ১ লক্ষ ৪১ হাজার ৮ শত ৫৪ জনের ভায়া (জরায়ু মুখ ক্যান্সার) পজেটিভ ছিল এবং ১.৩৪ শতাংশ অর্থাৎ ৩২ হাজার ২ শত ৩৪ জনের সিবিই (স্তন ক্যান্সার) পজেটিভ ছিল। ভায়া পজেটিভ মহিলাদের মধ্যে ৪৯ হাজার ৯ শত ৫৩ জনের কল্পোসকপি, ১২ হাজার ৯ শত ৪৪ জনের হিস্টোপ্যাথলজি করা হয়েছে এবং ২০ হাজার ৩০ জনের চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়েছে।
তিনি জানান এই রোগের বিষয়ে গবেষণা কার্যক্রম শুরু করার লক্ষ্যে একটি এইচপিভি-ডিএনএ গবেষণাগার স্থাপন করা হয়েছে।
বাংলাদেশের মহিলাদের জরায়ু মুখ ও স্তন ক্যান্সারের হার সম্পর্কে অধ্যাপক ডা. আশরাফুন্নেসা জানান, জাতীয় জরায়ু-মুখ ও স্তন ক্যান্সার নির্ণয় ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে এর কার্যক্রমের ফলে ২০১২ সালে স্তন ক্যান্সারের হার ২৩.৯ শতাংশ থেকে ২০২২ সালে ১৯ শতাংশে নেমে এসেছে অর্থাৎ ৪.৯ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে এবং একই সময়ে জরায়ু মুখ স্তন ক্যান্সারের হার ১৯.৩ শতাংশ থেকে ১২ শতাংশে নেমে এসেছে অর্থাৎ ৭.৩ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। ২০১২ সালে ৬২ হাজার ১৯ জনের স্ক্রিনিং করে ১৪ হাজার ৮ শত ৩৬ জনের (২৩.৯ শতাংশ) সিবিই পজেটিভ পাওয়া যায় এবং ১১ হাজার ৯ শত ৫৬ জনের (১৯.৩ শতাংশ) ভায়া পজেটিভ পাওয়া যায়। ২০২২ সালে ৬৮ হাজার ৭ শত জনের স্ক্রিনিং করে ১৩ হাজার ২৮ জনের (১৯ শতাংশ) সিবিই পজেটিভ পাওয়া যায় এবং ৮ হাজার ২ শত ৬৮ জনের (১২ শতাংশ) ভায়া পজেটিভ পাওয়া যায়।
তিনি আরো জানান, এই কর্মসূচীর অধীনে স্ক্রিনিং করার জন্য ইতোমধ্যে ৭ লক্ষ মহিলাকে প্রি-রেজিস্ট্রেশনের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে।
এসি