করোনায় আদর্শ নাগরিকের ভূমিকা
প্রকাশিত : ১৭:২৭, ৭ মে ২০২০ | আপডেট: ১৭:২৯, ৭ মে ২০২০
আমার আগে কী মনে হতো জানেন, যেই মানুষগুলো এতো বড় বড় ক্রাইম করে ওদের জেলখানায় কেন রাখে, জেলে থাকলে তো আরামেই থাকবে, খাওয়া পরার কোন চিন্তা নাই। দেড় মাস হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার পর আমি এখন বুঝতে পারছি এর থেকে কঠিন শাস্তি আর কিছুই নাই। এখন বুঝতে পারছি খাঁচায় বন্দি পাখি আর চিড়িয়াখানায় বন্দি প্রাণীগুলোর কষ্ট। হোম কোয়ারেন্টিনে থাকা কোনো আনন্দের ব্যাপার না, অনেক কষ্টের। কিন্তু এই সুন্দর ধরণীতে বেঁচে থাকা তো আনন্দের। আমরা জানি না ভবিষ্যতে আমাদের জন্য কী অপেক্ষা করছে? আমার কত দিন বেঁচে থাকব? আমরা ভবিষ্যত বলতে পারি না! আমরা যেটা পারি সেটা হচ্ছে চেষ্টা। বেঁচে থাকার চেষ্টা, বাঁচার জন্য ঘরে থাকার চেষ্টা।
আপনি যদি পানিতে পড়ে যান, যদি দেখেন আপনি অতল পানিতে তলিয়ে যাচ্ছেন, অক্সিজেন পাচ্ছেন না আপনি ডুবে মারা যাচ্ছেন! কি করবেন হাল ছেড়ে দিবেন? না, আপনি কাউকে খামচে ধরে হলেও বাঁচার চেষ্টা করবেন, হাত পা ছুড়ে দিয়ে সাঁতার কাটার চেষ্টা করবেন। এক কথায় আপনি বাঁচার চেষ্টা করবেন।
কারো ঘরে যখন আগুন লাগে দেখবেন ঘরের সমস্ত দামি জিনিসপত্র ফেলে রেখে শুধু প্রাণটা নিয়ে পালানোর চেষ্টা করে, ছিনতাই কারীর কবলে পড়লে টাকা পয়সা সব দিয়ে প্রাণ ভিক্ষাটা চায়। ঝড় তুফান হলে কোথাও শেল্টার নেয় মানুষ। সুনামি হলে সমুদ্র উপকূল ছেড়ে নিরাপদ স্থানে চলে যাবে এটাই স্বাভাবিক। তবে এখন কেন তা করছেন না আপনি? কি ভাবছেন কোভিড-১৯ এগুলির থেকে কম শক্তিশালী? মোটেই না। উপরের লিখিত বিপদগুলো হয়ত কোনো এলাকাজুড়ে আপনাকে সর্বশ্রান্ত করে দিবে। কিন্তু কোভিড-১৯ নিরব ঘাতক ধীরে ধীরে আপনাকে নিঃশেষ করে দিবে। আপনি বাঁচলে আপনার পরিবার বাঁচবে, আপনার প্রতিবেশী বাঁচাবে, আপনার দেশ বাঁচবে।
প্রশাসনের ভুল ছিল? না বেসরকারি খাতের নীতিনির্ধারকদের ভুল নীতি, না আমাদের বিলেত ফেরত ভাইবোনদের ভুল ছিল? সেসব নিয়ে কথা বলা বা অভিযোগ করার সময় এখন না। আর যদি ভুল বের করতেই হয় তবে খুঁজে বের করুন আপনার কী ভুল ছিল। কারণ এই মুহূর্তে আপনি অন্যের ভুল বের করে তাকে সংশোধন করতে পারবেন না। সেটা আপনার হাতেও নেই। আপনি যদি সংশোধন করতে চান তবে নিজেকে সংশোধন করতে পারেন। সেটা আপনার হাতে আছে। সময় থাকতে এখনই আসুন নিজেদের বদলাই। এই কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য সরকারের নির্দেশ মান্য করি আসুন ঘরে থাকি নিজে নিরাপদে থাকি অন্যকেও নিরাপদে রাখি।
মানুষকে সচেতন করার দায়িত্ব শুধুমাত্র সরকারেরই দায়ভার না, একজন দায়িত্বশীল নাগরিক হিসাবে আমাদের প্রত্যেকেরই উচিত এই সময়ে দেশের প্রশাসন ও অন্য নাগরিকদের সহায়তা করা, অনাহারী ও দুঃস্থ মানুষের সাহায্যে এগিয়ে আসার পাশাপাশি কোভিড-১৯ সম্পর্কে সচেতন করা, আর এটা আপনি খুব সহজেই বাইরে বের হওয়া ছাড়াই বিভিন্ন উপায়েই করতে পারেন। বর্তমান সময়ে ঘরে বসে থাকার কারণে সবাই অনলাইনে প্রচুর সময় ব্যয় করে সুতরাং অনলাইন থ্রোও সতর্কতামূলক মেসেজ দিয়ে আপনি সেটা করতে পারেন। এছাড়া আপনার নিকট আত্মীয় বা পরিচিতজনদের মেসেঞ্জার বা সেল ফোন থ্রো আলাপচারিতার মাধ্যমে সচেতন করতে পারেন।
চলমান সময়ে আমরা সবাই আতংকিত, শঙ্কিত এবং চিন্তিত, জানা অজানা অনেক ভয় ও শঙ্কা আমাদের ঘিরে ধরেছে ভবিষ্যতের কথা ভেবে, কি হবে? এই যাত্রায় বাঁচবো না মরে যাব আর বেঁচে গেলেও চাকুরিজিবীরা ভাবছে চাকুরি থাকবে কিনা? ব্যবসায়ীরা ভাবছে ব্যবসা কিভাবে টিকিয়ে রাখব! ধরেন এমন হতে পারতো করোনা ছাড়াও কোনো কারণে আপনার চাকরি চলে গেল বা আপনার ব্যাবসার কোনো ক্ষতি হলো, হতে পারে ভাইরাসে না আপনি অন্য কোনো রোগে মারা গেলেন। এসব কিছুই আন্সার্টেন গ্যারান্টি দিয়ে কেউ কিছু ভবিষ্যৎ নিয়ে বলতে পারে না।
তাই এই সময়টাতে আমাদের চিন্তায় বিশ্রাম দিতে হবে, কয়টাদিন আগে ও যেমন আমরা জানতাম না আমাদের জীবনে করোনা নামে ছোট্ট একটা জীবাণু সব কিছু ওলোট পালট করে দিতে পারে! ঠিক তেমনি আমরা জানি না সামনের পরিস্থিতি কি হতে পারে, সৃষ্টিকর্তা চাইলে সবকিছু আবার স্বাভাবিক হয়ে যেতে পারে। তাই সবার আগে প্রথমেই আমাদের মনে রাখতে হবে আগে বর্তমান পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে হবে। অকারণে ভবিষ্যতের দুশ্চিন্তায় অসুস্থ না হয়ে কোভিড-১৯ এর সাথে ফাইট করার জন্য শারীরিক ও মানুষিকভাবে সুস্থ থাকাটা জরুরি। সুতরাং নিজেদের বাঁচাতে হবে আর বেঁচে থাকলে চাকুরি বা ব্যবসা নিয়ে ভাবা যাবে। মহান রাব্বুল আলামিন আমাদের সবাইকে ভালো রাখুক। সুস্থ রাখুক।
লেখক: হেড অফ এইচআর, স্টার সিনেপ্লেক্স।
এমবি//