ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৮ নভেম্বর ২০২৪

করোনায় এবার বেতন কমবে ব্যাংকারদের

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৫:০২, ১৩ মে ২০২০ | আপডেট: ১৫:২৫, ১৩ মে ২০২০

করোনায় কাঁপছে পুরো বিশ্ব। এমন পরিস্থিতিতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবচেয়ে ভয়াবহ মন্দার পথে বিশ্ব অর্থনীতি। এ অবস্থায় অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে ব্যয় সংকোচনের পথে হাঁটছে সরকারি-বেসরকারি সব ব্যাংক।

ব্যয় সংকোচনের প্রাথমিক পর্যায়ে নিয়ন্ত্রণ করা যায় এমন ব্যয় কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে ব্যাংকগুলো, যার মধ্যে রয়েছে নতুন কর্মী নিয়োগ না দেয়া, নতুন শাখা না খোলা, বিদ্যমান শাখার সংখ্যা ও পরিসর কমিয়ে আনা, স্টেশনারি ব্যয় কমানো, কর্মীদের টিএ-ডিএ বিলে কাটছাঁট, বিদ্যুৎসহ অন্যান্য ইউটিলিটি বিল কমিয়ে আনা। একই সঙ্গে বিদ্যমান কর্মীদের বেতন-ভাতা কর্তন, কর্মী ছাঁটাইয়ের মতো কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার বিষয়েও ভাবছেন ব্যাংক নির্বাহীরা। ব্যয় কমানোর উদ্যোগে এগিয়ে বেসরকারি ব্যাংকগুলো।

তবে ব্যয় সংকোচনে সবার আগে ব্যাংক কর্মকর্তাদের বেতন কর্তন জরুরি বলে মনে করছেন পরিচালকরা। আর শীর্ষ নির্বাহীরা বলছেন, কর্মীদের বেতনে হাত দেয়াটি হবে সর্বশেষ ধাপ।

ব্যাংক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম মজুমদার বলেন, ব্যাংকগুলোর ব্যয়ের প্রধান খাতই হলো কর্মীদের বেতন-ভাতা। দেশের মাঝারি মানের একটি বেসরকারি ব্যাংককেও মাসে ২৫-৩০ কোটি টাকা বেতন-ভাতা দিতে হয়। আমেরিকাসহ বিশ্বের বহু দেশেই ব্যাংকারদের বেতন-ভাতা ১০ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে। দেশের ব্যাংকগুলোকেও টিকে থাকতে হলে সবার আগে কর্মীদের বেতন-ভাতা কমাতে হবে। অন্তত ১০ শতাংশ হলেও বেতন কমানো দরকার। ব্যাংকাররা উৎসব ভাতার বাইরেও বছরে চার-পাঁচটি বোনাস ইনসেনটিভ নেন। এ বছর থেকেই এটি বন্ধ করতে হবে। তাহলে ব্যাংকের ব্যয় ১৫ থেকে ২০ শতাংশ কমে আসবে।

ব্যবসা-বাণিজ্যসহ অর্থনীতির প্রতিটি শাখায়ই বিপর্যয় নামিয়েছে মহামারি নভেল করোনা ভাইরাস। বিশ্বব্যাপী চালানো তাণ্ডবের অর্থনৈতিক ক্ষত শুকাতে এক দশকও লেগে যেতে পারে বলে পূর্বাভাস দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। করোনা আঘাতের আগে থেকেই খেলাপি ঋণের ভারে বিধ্বস্ত ছিল দেশের ব্যাংকিং খাত। মূলধন ঘাটতি, সঞ্চিতি ঘাটতি, তারল্য সংকটসহ বহুমুখী সংকটের আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছিল দেশের অর্ধেকের বেশি ব্যাংক। এখন করোনা মহামারিতে ব্যাংকগুলোর এ সংকট কতটা গভীর হবে, তা নিয়েই উদ্বিগ্ন সংশ্লিষ্টরা।

ঋণের কিস্তি পরিশোধ না করলেও ৩০ জুন পর্যন্ত গ্রাহকদের খেলাপি না করার নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। একই সঙ্গে এপ্রিল ও মে মাসের ঋণের সুদও স্থগিত করা হয়েছে। আমদানি-রফতানিসহ দেশের অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে স্থবিরতা নেমে আসায় প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে ব্যাংকের কমিশন আয়ও।


বিদ্যমান পরিস্থিতিতে ব্যয় সংকোচনে যাওয়ার কোনো বিকল্প নেই বলে মনে করেন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক চেয়ারম্যান ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান। তিনি বলেন, আমরা চাইলে এখনই কমাতে পারি এমন একটি খাত হলো কর্মীদের বেতন-ভাতা। এছাড়া স্টেশনারি ব্যয়, ইউটিলিটি ব্যয়, কর্মীদের টিএ-ডিএ, বড় অনুষ্ঠান আয়োজনের ব্যয়সহ কিছু খাতের ব্যয় আমরা চাইলেই কমাতে পারি। ব্যয় সংকোচনের জন্য কর্মীদের বেতনে হাত দেয়াটি হলো সর্বশেষ ধাপ। আপাতত আমরা অন্য ব্যয়গুলো কমানোর উদ্যোগ নিয়েছি।

বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রত্যেক কর্মীকে দিয়ে দ্বিগুণ কাজ করানোর নীতি নিয়েছেন ব্যাংক এশিয়ার শীর্ষ নির্বাহী মো. আরফান আলী। তার মতে, অস্তিত্ব টিকাতে হলে ব্যয় সংকোচন করতে হবে। আবার কোনো সিদ্ধান্তই যাতে অমানবিক পর্যায়ে চলে না যায়, সেটিও খেয়াল রাখতে হবে। প্রাথমিকভাবে আমরা অফিস ব্যবস্থাপনার খরচগুলো কমানোর উদ্যোগ নিয়েছি। কর্মীদের প্রতি আমার বার্তা হলো পরিশ্রমী হও। আগের তুলনায় দ্বিগুণ কাজ করো। তাহলে অল্প কর্মী দিয়ে আমরা কাজ করতে পারব।

ব্যয় সংকোচনে কম কর্মী দিয়ে বেশি কাজ করার উদ্যোগ নিয়েছে এনআরবি ব্যাংকও। চতুর্থ প্রজন্মের ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মেহমুদ হোসেন বলেন, ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আমাদের ব্যাংক থেকে যেসব কর্মী অন্য ব্যাংকে চলে গেছেন, তাদের স্থলে নতুন নিয়োগ দেয়া হয়নি। বিদ্যমান কর্মী দিয়েই শাখার কার্যক্রম পরিচালনার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ব্যয় কমাতে অপেক্ষাকৃত কম মুনাফা হয়, এমন শাখায় কাটছাঁট করা হবে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও দীর্ঘ মেয়াদে ক্রেডিট কার্ডসহ রিটেইল সেবাগুলোতে ধস নামবে। ফলে ব্যাংকগুলোর রিটেইল বিভাগে কাজ করা কর্মীদের ছাঁটাইয়ের মুখে পড়তে হতে পারে।

বিদ্যমান পরিস্থিতিতে এরই মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকে ব্যয় সংকোচনের নির্দেশ দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। তার পরিপ্রেক্ষিতে ব্যয় কমাতে এসব ব্যাংক উদ্যোগ নিয়েছে। 

একে//


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি