ঢাকা, মঙ্গলবার   ১৪ জানুয়ারি ২০২৫

করোনায় কৃষির বদল

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১০:১৯, ২৭ জুন ২০২০

শিল্প থেকে শুরু করে গুরুত্বপূর্ণ যত খাত সবই বদলে যাচ্ছে এক মহামারির প্রকোপে। বাদ যাচ্ছে না কৃষিও। এতদিন ধরে যে উৎপাদন ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে তা নিয়ে এখন প্রশ্ন উঠেছে। কৃষির বড় ধরনের বদল ঘটার সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছে।

প্রাণিজ শিল্পের সংকট:
কোভিড ১৯ এর উৎপত্তি কিভাবে তা এখনও নিশ্চিত হতে পারেননি বিজ্ঞানীরা। কিন্তু এর আগে সোয়াইন ফ্লু আর বার্ড ফ্লুতে শুকর আর মুরগি খামারে বড় ধরনের বিপর্যয় নেমেছিল। বৃহদাকারে প্রাণীজ মাংস উৎপাদন শিল্পের সঙ্গে মহামরির ঝুঁকি বাড়ার একটি সম্পর্কের সন্দেহ অনেক আগে থেকেই তৈরি হয়েছে। এমন অবস্থায় এই ধরনের শিল্প নিয়ে নতুন করে ভাবনারও সময় এসেছে।

কসাইখানার পরিবেশে প্রশ্ন:
মাংস প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পের পরিবেশ আবারও নতুন করে আলোচনায় এসেছে এই মহামারিতে। জার্মানিতে এমন বেশ কয়েকটি কারখানা থেকে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়েছে। এমনকি দুইটি শহরকে এ কারণে নতুন করে লকডাউনের আওতায় আনতে হয়েছে। ট্যোনিস গ্রুপ এর একটি কসাইখানার ১৫৫০ জন আক্রান্ত হওয়ায় সব কর্মীদেরই কোয়ারান্টিনে পাঠানো হয়েছে। এই শিল্পটির জন্য নীতিমালা কঠোর করার প্রস্তাবও উঠছে।

বন্যপ্রাণীর খামারে কড়াকড়ি:
বিশেষজ্ঞদের ধারণা চীনের উহানের একটি বন্যপ্রাণীর বাজার থেকেই প্রথম করোনার সংক্রমণ ঘটেছিল। এর মধ্যে চীন বন্যপ্রাণী বেচাকেনায় কড়াকড়ি আরোপ করেছে, বন্যপ্রাণীর প্রায় ২০ হাজার খামার বন্ধ করে দিয়েছে। এর সঙ্গে যারা জড়িত তাদের পুনর্বাসনে ব্যবস্থা নিয়েছে সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থাগুলোও। বন্যপ্রাণীর বদলে তাদেরকে চাষাবাদ, মুরগী বা শুকর পালনে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।

কৃষি বদলের ডাক:
চলতি মহামারিতে খাদ্য সরবরাহ ব্যবস্থায় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। বৈশ্বিক কৃষি উৎপাদন শিল্পের বদলে স্থানীয় পর্যায়ে উৎপাদনে জোর দেয়ার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। শ্রমিক স্বল্পতাসহ নানা কারণে তৈরি হওয়া নতুন সংকটটির সঙ্গে কৃষকরা কিভাবে খাপ খাওয়াবেন তা নিয়ে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা।

নগর কৃষির সম্ভাবনা:
উন্নত দেশগুলোতে মানুষ বড় একটি সময় ঘরে থাকার কারণে সময় কাটানোর জন্য কৃষিতে ঝুঁকেছেন। ভবিষ্যতের জন্য যা ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। বলা হচ্ছে ২০৫০ সাল নাগাদ বিশ্বের দুই তৃতীয়াংশ মানুষই শহরে বসবাস করবেন। আর তখন নগর কৃষির গুরুত্ব আরও বাড়বে। এর ফলে প্রথাগত কৃষির উপর চাপ যেমন কমবে, তেমনি খাদ্য পরিবহনের পেছনে জীবাষ্ম জ্বালানির ব্যবহারও হ্রাস পাবে।

দাও ফিরিয়ে সে অরণ্য:
২০৫০ সাল নাগাদ বিশ্বের জনসংখ্যা এক হাজার কোটিতে পৌঁছাতে পারে। এজন্য খাদ্যের উৎপাদনও কয়েক গুণ বাড়াতে হবে, চাপ পড়বে ভূমির উপরে। এর একটি সমাধান হতে পারে নগর কৃষি। মানুষের বাঁচার জন্য খাদ্য যেমন দরকার, তেমনি দরকার প্রকৃতিও। সামনের দিনে অবশিষ্ট প্রকৃতি কিভাবে রক্ষা করা যাবে তা নিয়ে ভাবার সময়ও চলে এসেছে।

মাংসের বদলে নিরামিষ:
মাংসের বাজার ঘিরে স্বাস্থ্য ঝুঁকির উদ্বেগ বাড়ায় চীনে এখন উদ্ভিজ্জ পণ্যের চাহিদা বাড়ছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পশ্চিমা দেশগুলোতেও এই প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে। সামনের দিনে ভোক্তাদের খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তনটি অব্যাহত থাকবে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

মকিতে খাদ্য নিরাপত্তা:
কোভিড-১৯ এর মহামারি উন্নয়নশীল দেশগুলোর খাদ্য নিরাপত্তাকে হুমকিতে ফেলছে। জাতিসংঘও এই বিষয়ে সতর্কবার্তা দিয়েছে। জরুরি খাদ্য সহায়তার পাশাপাশি দুর্ভিক্ষ ঠেকাতে জমি সুরক্ষার উপরও জোর দিচ্ছে তারা। পাশাপাশি কৃষি পণ্য উৎপাদনে বৈচিত্র্য আনা এবং ঝুঁকিতে থাকা ক্ষুদ্র কৃষকদের জন্য সহায়তার সুপারিশ করছেন বিশেষজ্ঞরা। (ডয়চে ভেলে)

এমএস/


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি