করোনায় শ্রমজীবী মানুষের পাশে দাঁড়ানো সবার দায়িত্ব
প্রকাশিত : ১৬:৪৩, ৮ জুলাই ২০২০
বর্তমানে বিশ্বে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় করোনা। এই করোনায় পৃথিবীর প্রায় সব দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা দিনের পর দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের নাম উপরের দিকেই বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা এ রকম পরিস্থিতি থেকে কাটিয়ে উঠতে কিছু পরামর্শও দিচ্ছেন সেগুলো কতোটা কার্যকর হবে এটা নিয়ে দেখা দিয়েছে প্রশ্নও। তবে বাংলাদেশের শ্রমজীবী মানুষরা কেমন আছেন এই করোনা কালে, এটা এখন ভাববার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বাংলাদেশের সিংহভাগ মানুষ শ্রমজীবী। অনেকেই দিন আনে দিন খায়। করোনার এই সময়ে অনেকের কাজ বন্ধ হয়ে গেছে। বিশেষ করে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর বড় একটা শ্রমজীবী মানুষের অংশ এই সমস্যায় পড়েছেন। এই করোনার প্রথম দিকে সরকারসহ বিভিন্ন সংগঠন এই শ্রমজীবী মানুষের জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল। কিন্তু এখন অভিযোগ উঠছে এই অসহায় মানুষদের খোঁজ-খবর নিচ্ছে না তেমন কেউ। তাদের ত্রান সহায়তা নেই বললেই অভিযোগ করছেন অনেকেই। তবে, সরকারের পক্ষ থেকে বার বার বলা হচ্ছে ত্রান সহায়তা পর্যাপ্ত পরিমাণে দেওয়া হচ্ছে যাতে সাধারণ মানুষের কোনো ক্ষতি না হয়। কিন্তু শ্রমজীবী মানুষদের বক্তব্য ভিন্ন।
শুধু গ্রাম নয়, শহরেরও এর প্রভাব ভিন্ন নয়। শহরের অনেক শ্রমজীবী মানুষ এই সমস্যায় পড়ছেন। তারা সাধের শহর ছেড়ে গ্রামমুখী হচ্ছেন। এরাও গ্রামে গিয়ে কর্মসংস্থানের চেষ্টা করছেন, ফলে আগের শ্রমজীবী মানুষের সাথে নতুন করে শহরের এই মানুষগুলো যুক্ত হচ্ছেন। কিন্তু কাজ আর বেশি হচ্ছে না। ফলে গ্রামের ও শহরের শ্রমজীবী মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়ছেন। তাদের আয়ের পথ বন্ধ হওয়ায় মানবেতর জীবন-যাপন করতে বাধ্য হচ্ছেন অনেকেই।
কিছু দিন আগেই আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, বিশ্বব্যাপী যত মানুষ শ্রমবাজারে যুক্ত আছে, এই মহামারির কারণে তাদের প্রায় অর্ধেক মানুষ কর্মসংস্থান হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছেন। আর চাকরি হারানোর ঝুঁকিতে থাকা এ সংখ্যাটি প্রায় ১৫০ কোটি।আইএলও-এর এই সতর্কতা তুলে ধরেছে ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি এক প্রতিবেদনে।
আইএলও আরও জানায়, বিশ্বের যেসব মানুষ অনানুষ্ঠানিক ব্যবস্থার মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে তারাই বর্তমান পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মুখে রয়েছে।
এদিকে, বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের হিসাবে, করোনার কারণে বাংলাদেশে চাকরি হারানোর তালিকায় যুক্ত হতে পারেন অন্তত দেড় কোটি মানুষ। এ প্রসঙ্গে সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর গণমাধ্যমে জানান, করোনার কারণে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে অন্তত দেড় কোটি মানুষ কর্মচ্যুত হচ্ছে বা হতে যাচ্ছে। এটা বাংলাদেশের জন্য খুবই খারাপ খবর। এই দেড় কোটি মানুষ চাকরি হারালেও অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়বে অন্তত ৫ কোটি মানুষ (প্রতি পরিবারে গড়ে ৪ জন করে সদস্য)। এর প্রমাণ ইতোমধ্যে বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে দেখা যাচ্ছে। এই পরিস্থিতি তৈরি পোশাক খাতেও লক্ষ্য করা গেছে। এভাবে কর্মসংস্থান হারাতে থাকলে বাংলাদেশ কোথায় গিয়ে দাড়াবে এটাই এখন দেখার বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে।
গ্রামের শ্রমজীবী মানুষের সাথে শহর থেকে ফিরে যাওয়া শ্রমজীবী মানুষগুলোর পাশে দাড়ানো এখন সবার নৈতিক দায়িত্ব। সরকারি-বেসরকারিভাবে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া দরকার। তা না হলে গ্রামীণ অর্থনীতিতে ধস নামতে পারে বলে অনেকেই শঙ্কা প্রকাশ করছেন। জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে যে ত্রান সহায়তা দেওয়া হচ্ছে এটা নিয়ে বেশ অভিযোগ রয়েছে যে, তারা অর্থের বিনিময়ে বা নিজের লোক ছাড়া এ ত্রান দিচ্ছে না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে অভিযোগ রয়েছে, ত্রানের মাল আত্মাসাতেরও। করোনার এই খারাপ সময়ে এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। সরকারের মনিটরিং সেলকে আরও শক্তভাবে কাজ করার আহ্বান, যেন অনিয়মগুলো বন্ধ থাকে এই ক্রান্তিকালে। এর জন্য সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি ব্যক্তি উদ্যোগেও এগিয়ে আসা দরকার বলেই মনে হয়। করোনার এই ক্রান্তিকালীন আসুন সবাই মিলে শ্রমজীবী এই অসহায় মানুষগুলোর পাশে দাড়াই এটা কাম্য।
এসি
** লেখার মতামত লেখকের। একুশে টেলিভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে।