কর্নিয়া সংগ্রহ এবং সংস্থাপনে বড় বাধা আইনি জটিলতা
প্রকাশিত : ০৮:১৯, ২ নভেম্বর ২০২০ | আপডেট: ০৯:০৪, ২ নভেম্বর ২০২০
স্বেচ্ছায় রক্তদানে মানুষ এগিয়ে এলেও মরণোত্তর চক্ষুদানে তেমন সাড়া মিলছে না। অনেকে মরণোত্তর চক্ষুদান করার পরও স্বজনদের আপত্তিসহ বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার কারণে মৃত ব্যক্তির কর্নিয়া সংগ্রহ করা যায় না। আইনি জটিলতাও কর্নিয়া সংগ্রহ এবং সংস্থাপনের ক্ষেত্রে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব কারণে অবকাঠামো ও সামর্থ্য থাকার পরও দেশের প্রায় ১০ লাখ দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মানুষের চোখের আলো ফিরিয়ে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সন্ধানী জাতীয় চক্ষুদান সমিতি মরণোত্তর চক্ষুদানে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে আসছে। সংগঠনটির সূত্রে জানা গেছে, দেশে বর্তমানে ১৪ লাখের বেশি দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী রয়েছে। তাদের মধ্যে কর্নিয়াজনিত দৃষ্টিহীনের সংখ্যা পাঁচ লাখ ২৬ হাজার। এর বিপরীতে দেশে বছরে মাত্র ৫০টি কর্নিয়া সংগ্রহ করা সম্ভব হচ্ছে। বিশাল এই ঘাটতির কারণে অন্ধত্ব নির্মূলের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না।
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ডা. জয়নাল আবদীন বলেন, প্রতি বছর গড়ে ৫০টি কর্নিয়া তারা সংগ্রহ করতে পারছেন। বেওয়ারিশ লাশ থেকেই মূলত এসব কর্নিয়া সংগ্রহ করা হয়। সচেতনতার অভাবে মানুষ মরণোত্তর চক্ষুদানে তেমন আগ্রহী নয়।
কর্নিয়া সংগ্রহে বিড়ম্বনার কথা তুলে ধরে তিনি জানান, ব্যক্তির মৃত্যুর বিষয়টি অনেক সময় তারা সঠিক সময়ে জানতে পারেন না। ব্যক্তির স্বজনরাও অনেক সময় জানান না। অনেক সময় স্বজনরা চক্ষুদানে আপত্তিও করেন। এ ছাড়া মৃত্যুর ছয় ঘণ্টার মধ্যে কর্নিয়া সংগ্রহ করা না গেলে তা কোনো কাজে লাগে না। এসব কারণে কর্নিয়া সংগ্রহে অগ্রগতি কম।
‘আমার রক্ত শত ধমনিতে আনবে নতুন প্রাণ, অন্ধ আঁখিতে রশ্মি জ্বালাতে করব দৃষ্টিদান’- এই প্রতিপাদ্যে দিবসটি উপলক্ষে আজ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, উদ্বোধন করবেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
এদিকে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ মানুষের প্রয়োজনে রক্তদান ও মরণোত্তর চক্ষুদানে উদ্বুদ্ধ করতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে আহবান জানিয়েছেন। জাতীয় স্বেচ্ছায় রক্তদান ও মরণোত্তর চক্ষুদান দিবস উপলক্ষে দেয়া এক বাণীতে তিনি এ আহবান জানান।
রাষ্ট্রপতি সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান ‘সন্ধানী’ বিগত ৪৩ বছর যাবত আর্তমানবতার সেবায় নিয়োজিত থেকে জরুরি অস্ত্রোপচারসহ মুমূর্ষু রোগীকে বাঁচাতে স্বেচ্ছায় রক্তদানকে একটি জনপ্রিয় সামাজিক আন্দোলনে পরিণত করেছে। এর পাশাপাশি অন্ধত্ব দূরীকরণে জনগণকে মরণোত্তর চক্ষুদানে উদ্বুদ্ধকরণ, মানবচক্ষু সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও সংযোজনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, এ সব কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ এ প্রতিষ্ঠান সমাজ সেবায় ‘স্বাধীনতা পুরস্কার’সহ অনেক আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছে। তিনি সন্ধানীর সকল নিবেদিতপ্রাণ কর্মীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানান। একইসাথে স্বেচ্ছায় রক্তদানে যেসব সংগঠন ভূমিকা রাখছে তাদেরকেও শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান।
রাষ্ট্রপ্রধান বলেন, সৃষ্টির সেবাই স্রষ্টার সেবা। মানুষ তার অমূল্য রক্ত ও মরণোত্তর চক্ষু দান করে মানবতার সেবায় বিপুল অবদান রাখতে পারে। কারণ রক্ত ও কর্ণিয়ার কোন বিকল্প নেই। রক্তের অভাব পূরণে মানবদেহের রক্ত এবং কর্ণিয়াজনিত অন্ধত্ব দূরীকরণে মানব কর্ণিয়াই একমাত্র অবলম্বন। মানবদেহে রক্ত কয়েকমাস পর-পর এমনিতেই নষ্ট হয়ে যায়, আবার নতুন রক্ত জন্মায়। মৃত্যুর পর চোখসহ সকল অঙ্গই নষ্ট হয়ে যায়।
তিনি বলন, ‘মানুষের প্রয়োজনে মানুষ সব সময় রক্তদানে এগিয়ে আসুক, মরণোত্তর চক্ষুদান করুক এবং মৃত্যুর পর উত্তরাধিকাররা কর্ণিয়া সংগ্রহের উদ্যোগ গ্রহণ করুক-এ আশাবাদ ব্যক্ত করছি।’
এসএ/