কলাপাড়ায় ফসলি জমি রক্ষার দাবিতে মানববন্ধন
প্রকাশিত : ১৯:৩৪, ৮ নভেম্বর ২০১৮ | আপডেট: ২১:৪৩, ৮ নভেম্বর ২০১৮
জাতির জনকের কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণা অনুযায়ী তিন ফসলি জমি অধিগ্রহণ করা যাবে না। আর এই তিন ফসলি জমি রক্ষার দাবিতে পটুয়াখালীর কলাপাড়ার ধানখালী ইউনিয়নের পাঁচ গ্রামের হাজারো নারী-পুরুষ ও শিশুরা মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে। মানববন্ধন কর্মসূচিতে এলাকার জনগণ প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুল আবেদন জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানিয়ে তারা বলেন, আমাদের শেষ সম্বল রক্ষা করেন।
ধানখালী ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন সোমবাড়িয়া কালু মিয়ার বাজার সড়ক শোয়ে পটুয়াখালী জেলা প্রশাসকের পথ রোধ করে পৈত্রিক ভিটা ও বেঁচে থাকার শেষ সম্বল রক্ষার দাবি জানায়। তারা প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেছেন, যাতে তাদের জমি অধিগ্রহণ না করা হয়।
১৮ অক্টোবর পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক বরাবরে ধানখালী ও চম্পাপুর ইউনিয়নের চার গ্রামের মানুষ তিন ফসলী জমি রক্ষার দাবিতে স্মারকলিপি প্রদান করেন। এলাকাবাসীর দাবি সেনাকল্যান সংস্থা ও আশুগঞ্জ কোম্পানি প্রায় এক হাজার একর জমি অধিগ্রহণের জন্য গ্রামবাসীদের তিন ও ছয় ধারা নোটিশ প্রদান করেছে। বৃহস্পতিবার পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক মতিউল ইসলাম চেীধুরী সরেজমিনে তথ্য যাচাইয়ের জন্য ধানখালী ইউনিয়নে আসলে হাজার হাজার নারী-পুরুষ ও স্কুল-কলেজগামী ছাত্র-ছাত্রীরা এ জমি অধিগ্রহণ বন্ধের দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। সেই সঙ্গে তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে জমি রক্ষার জন্য আকুল আবেদন করেছে।
জেলা প্রশাসক ধানখালী ইউনিয়ন পরিষদ মিলনায়তনে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের বক্তব্য শোনেন। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পক্ষে বক্তব্য রাখেন কৃষক ফরিদ তালুকদার (৬০), আবদুল মান্নান (৩৫), আফজাল হোসেন (৪৫), আনসার উদ্দীন মোল্লা (৫৫) ও আতাউর রহমান মিলন মিয়া।
তারা বলেন, কলাপাড়া উপজেলার প্রায় দুই লাখ হেক্টর জমির মধ্যে ২৫ একর জমি তিন ফসলী। এই ২৫ হাজার একর জমির মধ্যে ১৬ হাজার একর জমি ধানখালী ও চম্পাপুরে। এখানের উৎপাদিত তরমুজ, মুগ ডাল, আমন ধান সারা দেশে রপ্তানী হয়। এখানের মাটি সোনার চেয়েও খাটি। এই তিন ফসলী জমি অধিগ্রহণ করে ইতিমধ্যে সরকার দুটি বিদুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করেছে।
কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মধ্যস্ততায় জেলা প্রশাসক উপস্থিত কৃষকদের আর কোন তিন ফসলি জমি অধিগ্রহন করা হবে না বলে আশ্বস্ত করেন। পরে তিনি ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স চত্বরে বের হলে উপস্থিত হাজার হাজার কৃষক তাকে ঘিরে স্রোগান দিতে থাকে।
পরে তিন ফসলী জমি রক্ষার দাবিতে অন্দোলনরত গ্রামবাসীদের সঙ্গে দুপুরে ধানখালী ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তানভীর রহমানের সভাপতিত্বে ও সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. মামুনুর রশিদ, কলাপাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল মোতালেব তালুকদার, ধানখালী ইউপি চেয়ারম্যান রিয়াজ তালুকদার, চম্পাপুর ইউপি চেয়ারম্যান রিন্টু তালুকদার, শিক্ষানুরাগী আনসার উদ্দিন মোল্লা, সমাজকর্মী মো. আতাউর রহমান মিলন মিয়া, গ্রামবাসী মো. মোস্তফা মেহেদী, ফরিদ তালুকদার, আফজাল হোসেন ও আবদুল মন্নান।
গ্রামবাসীর পক্ষে ফরিদ উদ্দিন তালুকদার বলেন, কৃষি নির্ভর ৮৫ ভাগ মানুষের বেঁচে থাকার শেষ সম্বল এ জমি অধিগ্রহণ করা হলে ৯৫ ভাগ ছেলে-মেয়ের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যাবে। মুজিবনগর খ্যাত ধানখালী ও চম্পাপুরের নৌকা পাগল মানুষকে ভিটেমাটি না ছাড়া করার দাবি জানাই প্রধানমন্ত্রীর কাছে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. মামুনুর রশিদ বলেন, জমি অধিগ্রহণে জনগণের যাতে কোন ক্ষতি না হয় সে বিষয়টি সরকারকে অবহিত করবেন।
সভায় জেলা প্রশাসক মতিউল ইসলাম চেীধুরী বলেন, বর্তমান সরকার হলো কৃষি, শিল্প ও উন্নয়নবান্ধব সরকার। তাই তিন ফসলী জমিতে যাতে আবার কোন বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ না হয় এ বিয়য়টি তিনি সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলে অবহিত করবেন এবং হাজারো গ্রামবাসীর দাবি তুলে ধরবেন। তিন ফষলী জমির ক্ষতি যাতে না হয় এ বিষয়টি তিনি দেখবেন বলে গ্রামবাসীদের আশ্বস্ত করেন।
এসএইচ/
আরও পড়ুন