কাঁঠাল বৃত্তান্ত
প্রকাশিত : ১৪:৪৭, ৩ আগস্ট ২০২৩ | আপডেট: ১৪:৪৯, ৩ আগস্ট ২০২৩
গিন্নী কাঁঠাল পছন্দ করে। করোনার কারণে এবার বাড়ির কাঁঠালের খুব একটা নাগাল পায়নি। বিষয়টা মাথায় রেখে চলতি মৌসুমে কয়েক দফা কাঁঠাল বাজারে গিয়েছি। কাঁঠাল ভেঙে কেনার অভ্যেস না থাকলেও বেশিরভাগ দিনই ভোক্তাকে খুশি করতে পেরেছি। যেহেতু ভেতর দেখে কেনার উপায় নেই তাই একটু আধটু এদিক সেদিক মেনে নিতেই হবে।
আম-কাঁঠালের মৌসুম এখন শেষের দিকে। আমাকে বাসায় থাকতে দেখে গিন্নী জানতে চাইলো এই সিজনে আর কোনো কাঁঠাল বাসায় আসবে কিনা। আমি চুপ থাকলাম। কারণ আম-কাঁঠালের দাম এখন পিক-সিজনের দ্বিগুণেরও বেশি।
বিকেলে বাজারে গেলাম অন্য কাজে। ছোটোর মধ্যে মাঝারি সাইজের একটি কাঁঠাল দেখে সাহস করে দাম জানতে চাইলাম। দোকানী দেড়শো টাকা চাইলো। সিজনে এটার দাম পঞ্চাশ থেকে ষাট টাকা হতে পারে। তাই মুখ ঘুরিয়ে চলে আসছিলাম। কিন্তু দাম না বলে চলে যাওয়া যে অভদ্রতা দোকানী সেটা কঠিন সুরে মনে করিয়ে দিল। কি আর করা, ভদ্র হতে আশি টাকা দাম বলে চলে আসছিলাম। পেছন থেকে দোকানীর ডাকে থামতে হলো। এক দামে জিনিস বিক্রি হয় না, আরেকটা দাম বলেন। বললাম, আমি এক দামেই কিনি। পারলে দেন। - ঠিকাছে একশো টাকা দেন। এই দামে কাঁঠাল পাবেন না।
বুঝে গেছি কাঁঠাল ধরিয়ে দিয়েছে। তাই নেবো না ভাব দেখিয়ে আবারও ঘুরে দাঁড়ালাম। কিন্তু দোকানী করোনাকে গালাগাল করে এবং আমাকে দয়া করে আশি টাকাতেই কাঁঠাল দিয়ে দিলেন। টাকা শোধ করে কাঁঠালে হাত দিলাম। সিজন শেষের ফল আবাত্তি (অপক্ব) হওয়ার কথা নয়। কিন্তু সাইজের তুলনায় অনেক হালকা মনে হচ্ছে। ভেতরে রোয়া আছে তো? আওয়াজ করেই বললাম কথাটা।
দোকানী বললো, অনেক বড় বড় রোয়া হবে।
অপেক্ষাকৃত অসমতল এবং সাইজের তুলনায় কম ওজনের কাঁঠালে যে রোয়া কম হবে এইটুকু বোঝার জন্য কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার দরকার নেই। আল্লাহর নামে কাঁঠাল নিয়ে বাসায় চলে আসলাম। রোয়া কয়টা কম হলেও ক্ষতি নেই, বউ খুশি হলেই হলো।
কাঁঠাল দেখে আসলেও বউ খুশি হলো। অন্য সদাই বের না করেই হাত ধুয়ে কাঁঠাল ভাঙতে শুরু করলো। ইয়াল্লা, কোষ তো খুইজ্জা পাওয়া যায় না। বিজ্ঞের মতো বললাম, কোষ কম হবে, কিন্তু বড় বড় হবে। কোষ বড়, কিন্তু এত্ত কম!
সে কাঁঠালের উপর থেকে ভেঙে বড় ছেলেকে দিয়েছে তিনটা কোষ; ছোটটাকে দুইটা এবং আমাকে দুইটা। তারপর নিজের জন্য তালাশ করতে লাগলো। কাঁঠালের এ মাথা থেকে সে মাথা পর্যন্ত একাধিকবার তালাশ চালিয়ে হয়রান হয়ে গেলো কিন্তু কাঁঠালের আর একটি রোয়াও সে পেলো না। ততক্ষণে আমাদের বাপবেটার কাঁঠাল খাওয়াও শেষ। বীচি গুনে দেখি সাতটা।
আহা রে বেচারির কপাল! তার জন্যই কাঁঠাল আনা। পুরো কাঁঠাল ঘেঁটে সাতটি কুসুম আবিষ্কার। অথচ একটিও তার কপালে জুটলো না।
এমএম//
"লেখাটি ফেসবুক থেকে সংগৃহীত"