‘কাঁদছি... হায় ঈশ্বর, সবাইকে বাঁচানোর সামর্থ্য আমাদের নেই!’
প্রকাশিত : ১৯:৩০, ১৮ মার্চ ২০২০
নিজ হাঁসপাতালে চিকিৎসক ড. ড্যানিয়েল ম্যাককিনি
সময় যতই গড়াচ্ছে ততোই ভয়াবহ হয়ে উঠছে করোনা ভাইরাসের থাবা। বিশ্বব্যাপী ক্রমেই বেড়ে চলেছে এ ভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। বিশ্বজুড়ে করোনা মহামারিতে এখন সবচেয়ে খারাপ অবস্থা ইতালিতে। সেখানে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা।
গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে মৃত্যু হয়েছে আরও ৩৪৯ জনের। এ নিয়ে দেশটিতে ভাইরাস সংক্রমণের মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো ২১৫৮ জনে। আর নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ২৩৭৩ জন। সবমিলিয়ে ইতালিতে ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৪৭ হাজার ৮২০। সুস্থ হয়েছেন ২৭৪৯ জন।
এমন পরিস্থিতিতে দেশটির এক চিকিৎসক তার ফেসবুকে করোনা ভাইরাসে রোগীদের মৃত্যুর ঘটনার এবং পরিস্থিতির এক হৃদয়বিদারক বর্ণনা দিয়েছেন। যা থেকে সহজেই অনুমেয় হচ্ছে ইতালির পরিস্থিতির ভয়াবহতা। খবর ।
স্কাই নিউজ ও নিউজওয়ানের খবর অনুযায়ী, নতুন করে করুণ আর্তি ঝরে পড়ল ইতালির চিকিৎসক ড. ড্যানিয়েল ম্যাককিনির কণ্ঠে। করোনা তাণ্ডবে বিধ্বস্ত ইতালির এই চিকিৎসক তার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে ফেসবুকে হৃদয়বিদারক একটি পোস্ট দেন, যা মুহূর্তেই ভাইরাল হয়।
ড. ম্যাককিনি লিখেছেন, ‘আমাদের দেশে (ইতালি) চলছে ভয়াবহ ট্রাজেডি। বৃদ্ধ রোগীরা মৃত্যুর আগে তাদের স্বজনের হাতটা পর্যন্ত ছুঁয়ে দেখার সুযোগ পাচ্ছেন না। তারা তো কেউ এভাবে একা একা মরতে চাননি। সজ্ঞানে, সীমাহীন কষ্ট সহ্য করে তারা নিঃশব্দে চোখের পানি ফেলতে ফেলতে মারা যাচ্ছেন। মৃত্যুর আগে স্বামী তার স্ত্রীকে দেখতে পারছেন না। বাবা-মা দেখতে পারছেন না সন্তানকে, বৃদ্ধ দাদা দেখতে পারছেন না আদরের নাতিকে। তারা নিজেদের বিদায় জানাচ্ছেন ক্যামেরার সামনে, কল্পনা করুন, কী ভয়াবহ পরিস্থিতি!’
চিকিৎসক হিসেবে নিজেদের অক্ষমতার কথা বলতে গিয়ে যেন কান্না ঝরে পড়ছে ড. ম্যাককিনির লেখার প্রতিটি শব্দে। তিনি লেখেন, ‘আমরা কেউ থামছি না, দিনরাত কাজ করে চলেছি। এতকিছুর পরও চোখের সামনে এমন অনেকেই মারা যাচ্ছেন যাদের চিকিৎসাই শুরু করতে পারিনি। দুই সপ্তাহ ধরে আমি বাসায় যাই না। সন্তানদের সঙ্গে কথা বলছি ক্যামেরায়, মাঝে মাঝে স্ত্রীর ছবির দিকে তাকিয়ে কাঁদছি। বিশ্বাস করুন, আমাদের কোনও দোষ নেই!’
রোগীর সংখ্যা বাড়ছে জ্যামিতিক হারে। ম্যাককিনি লিখেছেন, আক্ষরিক অর্থেই করোনার বিরুদ্ধে আমরা সবাই যুদ্ধ করছি। ঘণ্টায় ঘণ্টায় লাফিয়ে বাড়ছে রোগীর সংখ্যা। নমুনা পরীক্ষার রেজাল্ট আসছে, সব পজিটিভ। পজিটিভ। পজিটিভ!
ইতালির গাভাটেসনি হাসপাতালের এই চিকিৎসক লিখেছেন, ‘হাসপাতালে এই ভাইরাসের সঙ্গে বৃদ্ধদের যুদ্ধ দেখে আমরা নিজেদের ধরে রাখতে পারছি না। আমরা কাঁদছি, আমাদের নার্সরা কাঁদছে। হায় ঈশ্বর, সবাইকে বাঁচিয়ে তোলার সামর্থ্য যে আমাদের নেই!’ সূত্র- ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম ইন্ডিপেন্ডেন্ট।
এনএস/