কাজের চাপে সুস্থ থাকার উপায়
প্রকাশিত : ১১:১৫, ২৪ জুন ২০১৯
একটানা অনেকক্ষণ বসে থাকার ফল খুব একটা সুখকর হয় না। সেটা অফিসে হোক বা বাসায় হোক। কাজের মধ্যে হোক কিংবা কম্পিউটারের পর্দায় হোক তার প্রভাব শরীরে পড়বেই। প্রথমদিকে সমস্যাটা বোঝা না গেলেও সাধারণত টের পাওয়া যায় পরে। ঘাড়, কাঁধ ও কোমর জুড়ে ব্যথা দেখা দেয়। কিন্তু সামান্য চেষ্টা করলেই এই ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
কাজের ফাঁকে অবশ্যই কিছু বিরতি পাওয়া যায়। আর সেই সময়ে চেয়ারে বসেই খুব সহজে কয়েকটি ব্যায়াম করতে পারেন। ব্যায়ামগুলো সাধারণ মনে হলেও ব্যথা থেকে আরাম পাওয়া যায়। এ ব্যাপারে ফিটনেস বিশেষজ্ঞরা যা বলছেন-
ঘাড়ের ব্যায়াম
সাধারণত ঘাড়েই ব্যথা বেশি দেখা দেয়। একটানা অফিসের ডেস্কে, কম্পিউটারে চোখ রেখে এবং ঘাড় নিচু করে অবিরাম লেখাপড়ায় বাড়ে যন্ত্রণা। এই ব্যথা থেকে মুক্তি দিতে পারে স্ট্রেচিং ও চিন টাক।
স্ট্রেচ- চেয়ারে বসেই ঘাড় ডান দিকে কাত করুন। তার পরে ডান হাত দিয়ে মাথাটা আলতো করে ডান দিকে চাপ দিতে হবে বা টানতে হবে। এই একই পদ্ধতিতে দু’দিকেই তিন বার করে স্ট্রেচ করতে হবে। এতে ঘাড়ের কাছের পেশি দীর্ঘায়িত হয় এবং আরাম মেলে।
চিন টাক- থুতনিতে চাপ দিয়ে ঘাড় আস্তে আস্তে পেছন দিকে হেলাতে হবে। সবচেয়ে ভাল হয় যদি ব্যায়ামের জন্য দেওয়ালের সাহায্য পাওয়া যায়। ধরা যাক, দেওয়ালে হেলান দিয়ে চেয়ারের উপরে বসলেন। এবার থুতনিতে চাপ দিয়ে মাথা ধীরে ধীরে দেওয়ালে ঠেকানোর চেষ্টা করতে হবে। তবে হাত দিয়ে থুতনিতে চাপ দিলে চলবে না। ব্যায়ামটি করতে হবে তিন বার।
কাঁধের ব্যায়াম
ঘাড়ের ব্যথা ছড়ায় কাঁধেও। শুধু একটানা বসে কাজই নয়, ভারী ব্যাগ বহনেও কাঁধে ব্যথা হয়। আবার ভুল ভঙ্গিমায় বসে ঝুঁকে কাজ করার জন্যও কাঁধের রোটেটর কাফ বা পেশিতে সমস্যা হয়। কনকনে ব্যথা হয়। অনেকের ক্ষেত্রে কাঁধের মুভমেন্ট রেঞ্জ অর্থাৎ হাত যতটা পর্যন্ত ঘুরতে পারে, সেই পরিসর কমে যায়। একে বলে ফ্রোজেন শোল্ডার। ভাল থাকার জন্য রোটেটর পেশির স্ট্রেচ ও এক্সটার্নাল রোটেশন করতে হবে।
রোটেটর স্ট্রেচ- ডান হাত বুকের কাছে আড়াআড়ি নিয়ে আসতে হবে। এর পরে বাঁ হাত দিয়ে ডান হাতের কনুইয়ে চাপ দিতে হবে। এর ফলে কাঁধের পেছন দিকের পেশিতে চাপ পড়ে। দশ সেকেন্ড করে দু’হাতে তিন বার করে এই স্ট্রেচ করতে হবে।
এক্সটার্নাল রোটেশন- এটি আসলে রোটেটর পেশির জোর বাড়ানোর ব্যায়াম। এর জন্য হাতে পানিভর্তি এক লিটারের বোতল নিন। ডান হাতে পানির বোতল ধরে হাতটাকে আর্মপিটের কাছে চেপে রাখতে হবে। এবার কনুইটা ভেঙে হাতটাকে বাইরের দিকে ঘোরাতে হবে। দশ সেকেন্ড করে দু’হাতে তিন বার করে করতে হবে এই ব্যায়াম।
কোমরের ব্যায়াম
ডেস্কে বসে কাজের সময়ে পিঠ টানটান করে রেখে কাজ করার সতর্কবাণী আমরা প্রায়শই ভুলে যাই। কিন্তু মেরুদণ্ড গোলাকার হলেই কোমরের সমস্যা আসতে বাধ্য। এই ভুল ভঙ্গির সমস্যা বিপদ ডেকে আনে। হিপে থাকে গ্লুটিয়াস ও হ্যামস্ট্রিং পেশি। স্ট্রেচিং করলে সেই পেশিতে ব্যথায় আরাম মেলে।
ফিগার ফোর স্ট্রেচ- চেয়ারে বসে এক পা আর একটি পায়ের উপরে তুলে দিলে ইংরেজি 4-এর মতো দেখতে হয়। সেই অবস্থায় বসে শরীরটাকে সামনের দিকে ঝোঁকাতে হবে। লক্ষ্য রাখতে হবে, মেরুদণ্ড যেন টানটান থাকে। এতে হিপের অংশে টান পড়বে। হিপের পেশি স্ট্রেচও হবে। দুই পায়ে দশ সেকেন্ড করে তিন বার করে করতে হবে।
হ্যামস্ট্রিং স্ট্রেচ- চেয়ারে বসে একটি হাঁটু ভাঁজ রাখতে হবে। আর একটি পা সামনের দিকে সোজা করে ছড়াতে হবে। অর্থাৎ বাঁ হাটু ভাঁজ থাকলে ডান পা ছড়াতে হবে। এতে হিপের হ্যামস্ট্রিং পেশিতে টান পড়বে। দু’পায়ে তিন বার করতে হবে এই ব্যায়াম। এর ফলে কোমরে আরাম পাবেন। এর সঙ্গে জোর বাড়ানোর ব্যায়াম করতে পারেন। সেটা চেয়ারে বসে করা সম্ভব নয়।
হাঁটুর ব্যায়াম
হাঁটুর ব্যায়ামের জন্য কোমরের স্ট্রেচিং দু’টি অবশ্যই করতে হবে। তার পাশাপাশি করতে হবে সিটেড লেগ এক্সটেনশন।
সিটেড লেগ এক্সটেনশন- চেয়ারে বসে একটা পা মেঝের উপরে রাখতে হবে। আর একটি পা টানটান করে সামনের দিকে ছড়াতে হবে। মেরুদণ্ড থাকবে সোজা। এভাবে দশ অবধি গুণে পা পরিবর্তন করতে হবে। দুই পায়েই এই ব্যায়াম মোট দশ-বারো বার করতে পারেন। এতে থাইয়ের পেশির জোর বাড়ে।
কাজের ফাঁকে যেটুকু সময় কেটে যায় সহকর্মীর সঙ্গে আড্ডায়, সেই সময়টাকে কাজে লাগাতে পারেন। রোজ অল্প সময় ধরে এসব ব্যায়ামের নিয়মিত অভ্যেস শুধু ব্যথা কমায় না, শরীরও ভাল রাখে। টিভি দেখার ফাঁকেও করে নিতে পারেন এই শরীর চর্চা।
আনন্দবাজার পত্রিকা অবলম্বনে
এএইচ/