ঢাকা, রবিবার   ২২ ডিসেম্বর ২০২৪

কাঠ দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর ভাস্কর্য তৈরি করলেন আদিবাসী দিনমজুর

বিকুল চক্রবর্তী, মৌলভীবাজার থেকে

প্রকাশিত : ১৫:৫০, ১৬ নভেম্বর ২০২২

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের প্রত্যন্ত এলাকা হরিণছড়া চা বাগানের দিনমজুর সবুজ তজু প্রধানমন্ত্রীর ঘর পেয়ে আনন্দে আত্মহারা। এ আনন্দে প্রধানমন্ত্রীকে কিছু উপহার দিতে বন থেকে কাঠ সংগ্রহ করে তৈরি করলেন প্রধানমন্ত্রীর চমৎকার ভাস্কর্য। আর এই ভাস্কর্য দেখতে প্রতিদিনই তার বাড়িতে ভিড় করছেন দর্শনার্থী।

শ্রীমঙ্গলের সীমান্তবর্তী হরিণছড়া চা বাগানে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর অধিবাসী দিনমজুর সবুজ তজু ছোটবেলা থেকেই কুটির শিল্প সামগ্রি তৈরিতে পারদর্শী। আঁকেন ছবিও। কিন্তু সংসারের টানাপোরণে সবসময় তা করতে পারেন না। নড়বড়ে এক ঘরে কোন রকমে তার বসবাস। এ খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে তাকে একটি ঘর উপহার দেন। 

আর এ পাকা ঘর পেয়ে তজু পরিবারের যেন আনন্দের সীমা নেই। সবুজ ইচ্ছা পোষণ করেন প্রধানমন্ত্রীকে একটি ভাস্কর্য উপহার দিবেন। বিষয়টি তিনি শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে আলোচনাও করেন। 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাকে উৎসাহ দেন এবং প্রধানমন্ত্রীর একটি ছবি উপহার দেন। সবুজ সেই ছবি দেখে প্রধানমন্ত্রীর চমৎকার একটি ভাস্কর্য তৈরি করেন।

সবুজ জানান, প্রায় দেড়মাস সময়ে একটি গাছ খোদাই করে ৪৩ ইঞ্চি লম্বা প্রধানমন্ত্রীর হাস্যোজ্জ্বল একটি নিখুঁত ভাস্কর্য তৈরি করেছেন। ভাস্কর্যটিতে ফুটিয়ে তুলেছেন প্রধানমন্ত্রীর বিশ্ব নেতৃত্বের ছাপ। দেশের মানুষের আস্থার একটি জায়গা। 

এখন তার ইচ্ছা ভাস্কর্যটি প্রধানমন্ত্রীর কাছে পৌঁছে দেওয়া। 

ভাস্কর্যটি দেখতে প্রতিদিনই তার বাড়িতে যাচ্ছেন নানান মানুষ। তার শিল্পকর্ম দেখতে আসা মো: রিপন আলী জানান, খবর পেয়ে তিনি দেখতে এসেছেন। এই ভাস্কর্যটি হুবহু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। 

সবুজরে স্ত্রী পুরবী রিচিল জানান, ভাঙ্গা ঘর থেকে তারা পাকা ঘরে উঠবেন, এমনটা তাদের ভাবনায়ও ছিল না। স্বামীর স্থায়ী কোন কাজ নেই। মানুষের ঘরে রং-এর কাজ করেন। কখনও লেবু বাগানে শ্রমিকের কাজ করেন। কখনও ঘর মেরামতের কাজ করেন। দুই ছেলে ও এক মেয়েকে ঢাকা ও শ্রীমঙ্গলে লেখাপড়া করাচ্ছেন। পরিবার ও সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ যোগান দিতে হিমশিম খেতে হয় তাদের। 

তিনি আরও বলেন, “ঘর পেয়ে আমার স্বামী এতোই খুশি যে তিনি মনে মনে চিন্তা করেন প্রধানমন্ত্রীকে নিজের হাতে তাঁর একটি ভাস্কর্য তৈরি করে দিবেন।  এমন ভাবনায় আসে এই ছোট উপহারটি কিভাবে প্রধানমন্ত্রীকে দিবেন।”

সবুজ তজু জানান, এই ভাবনার বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে আলোচনা করেন। তিনি তাকে উৎসাহ দেন। খুশি হয়ে তাকে দুই হাজার টাকা দিয়েও সহায়তা করেন। প্রধানমন্ত্রীর একটি ছবিও দেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আলী রাজিব মাহমুদ মিঠুন জানান, সবুজ তজুর অনন্য প্রতিভা রয়েছে। তার তৈরি চা-কন্যাসহ বিভিন্ন সামগ্রী আমরা সংগ্রহ করেছি। তার হাতের নিপুনতা অসাধারণ। তার অবস্থা বিবেচনায় তাকে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের একটি ঘর উপহার দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে ঘরের কাজ শেষ হয়েছে, এখন শুধু রংয়ের কাজ বাকী।

মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান বলেন, “আমাদের নির্ভরতার প্রতীক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে একেবারে তৃণমুল পর্যন্ত মানুষ ভালোবাসেন এই ভাস্কর্যটি তারই একটি নিদর্শন। প্রধানমন্ত্রীর এমন একটি ভাস্কর্য তৈরি করায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাকে ধন্যবাদ। কাঠের ভাস্কর্যটি প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে।”

সবুজের এই শিল্পকর্মটি প্রধানমন্ত্রীর কাছে পৌঁছাবে এমনটাই চাওয়া তজুর পরিবারসহ হরিণছড়া চা বাগানের শ্রমিকদের।

এএইচ


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি