কারখানা খোলার যুক্তিগুলো গ্রহণযোগ্য নয়
প্রকাশিত : ২০:৫৭, ২ মে ২০২০ | আপডেট: ২০:৫৯, ২ মে ২০২০
করোনাভাইরাসে একজন আক্রান্ত হলে তার থেকে অন্যের মধ্যে বিভিন্নভাবে ছড়ায়। একজন করোনারোগী অনেক মানুষের মধ্যে এই ভাইরাস ছড়িয়ে দিতে পারেন। কতজনের মধ্যে ছড়াবে তার ইয়াত্তা নেই। রোগীকে করোনা আক্রান্ত হওয়া মাত্র বিচ্ছিন্ন করে ফেলতে পারলে আর একজনের মধ্যেও এ রোগ ছড়ানোর সুযোগ পায় না। তবে সমস্যা হলো কেউ এ রোগে আক্রান্ত হলে তার লক্ষণ দেখা দেয় বেশ কয়েকদিন পরে। লক্ষণগুলো আবার প্রথম দিকে সাধারণ সর্দি-জ্বরের মত বলে অনেকে বুঝতে পারে না যে, সে করোনা আক্রান্ত হয়েছে। যখন বুঝতে পারে তখন অনেক দেরি হয়ে যায়; ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ে। অনেক ক্ষেত্রে কোন লক্ষণই দেখা দেয় না। কে আক্রান্ত হয়েছে তা সময়মত নির্ণয় করা যায় না বলে আক্রান্ত ব্যক্তি অনেকের মধ্যে এ রোগ ছড়িয়ে দিচ্ছে। আমরা সবাই যদি প্রত্যেকের থেকে আলাদা থাকতে পারতাম তা হলে এ রোগ কারো মধ্যে ছড়াতে পারত না। করোনাভাইরাসের টিকা এবং রোগ নির্মূলের কোন ঔষধ না থাকায় এর একমাত্র প্রতিরোধের হচ্ছে ঘরে থাকা; অন্যের সংস্পর্শে না আসা।
কিন্তু মানুষ সামাজিক জীব। অন্যের সঙ্গে যোগাযোগ না করে সে জীবন ধারণ করতে পারে না। শতভাগ মানুষ ঘরে থাকতে পারছে না বলে এ রোগ সম্পূর্ণ প্রতিরোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। যে যত বেশি অন্যদের সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকতে পারছে, সে তত বেশি করোনা থেকে সুরক্ষা পাচ্ছে। তিন মাসের বেশি সময় ধরে পৃথিবীতে করোনা ছড়িয়ে পড়েছে। এই সময়ের মধ্যে মানুষের অভিজ্ঞতা হচ্ছে- যে দেশ যত বেশি কঠোর নিয়মকানুনের মাধ্যমে তাদের নাগরিকদের ঘরে রাখতে পরেছে, বেশি বেশি পরীক্ষার মাধ্যমে করোনা আক্রান্ত মানুষ শনাক্ত করে তাদের এবং যোগাযোগ সন্ধান করার মাধ্যমে তাদের সংস্পর্শে আসা অন্যদের বিচ্ছিন্ন করতে পেরেছে সে দেশে তত কম মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছে; তত কম মৃত্যু হয়েছে। মানুষ থেকে মানুষকে বিচ্ছিন্ন করা ছাড়া করোনা থেকে রক্ষা পাবার উপায় নেই। চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যাণ্ড অত্যন্ত কঠোর নিয়মকানুন করে এবং তা বাস্তবায়ন করে নাগরিকদের ঘরে থাকতে এবং আক্রান্তদের বিচ্ছিন্ন করতে সক্ষম হয়েছে বলে তাদের দেশে প্রথম পর্যায়ে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা অনেক বেশি হলেও পরবর্তীতে তারা নতুন আক্রান্তের সংখ্যা কমিয়ে আনতে পেরেছে। তাদের দেশে মৃত্যুর সংখ্যাও কম হয়েছে।
পক্ষান্তরে ইতালি, স্পেন, ফ্রান্স, ইউকে, ইউএসএ রাজনৈতিক কারণে তাদের নাগরিকদের ঘরে রাখতে ততটা সমর্থ হয়নি বলে এই দেশগুলোতে আক্রান্ত হয়েছে অনেক বেশি মানুষ; মৃত্যুর সংখ্যাও বিরাট। যুক্তরাষ্ট্রে নাগরিকদের ঘরে রাখার বিষয়ে ব্যবসায়ী মহল অনেক জোরালোভাবে বিরোধিতা করায় সেখানে লকডাউন হয়েছে অনেক দেরীতে এবং নিয়মকানুন ও তার প্রয়োগও হয়েছে অনেক শিথিলভাবে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রে করোনা ছড়িয়েছে সবচেয়ে বেশি – সমগ্র পৃথিবীর তিন ভাগের একভাগ, মৃত্যুও সে রকম।
করোনা ছড়ায় একজন থেকে আরেক জনে বা অনেক জনে। তারপর সেই অনেক জন থেকে আরও অনেক জনে। বলা হয়, করোনার ছড়িয়ে পড়ার শক্তি জ্যামিতিক হারের মত। আসলে তার থেকেও অনেক বেশি। কোন দেশে প্রথম দিকে আক্রান্তের সংখ্যা কম থাকে বলে করোনা ছড়ানোর সুযোগ অনেক কম থাকে। আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এর ছড়িয়ে পরার গতিও বৃদ্ধি পেতে থাকে। তাই প্রথম দিকে অনেক দিন ধরে করোনা কম ছড়ালেও ৫/১০ হাজার আক্রান্ত হবার পর এ রোগে আক্রান্তের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে। এখন পর্যন্ত চীন, ইতালি, স্পেন, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, জার্মানী, তুর্কী, রাশিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি করোনা আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে। বাংলাদেশে এই লেখার সময় মোট আক্রান্তের সংখ্যা নয় হাজারের কাছাকাছি। ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র এবং দক্ষিণ কোরিয়ায় ঠিক বাংলাদেশের মত ৮ হাজার জনের বেশি আক্রান্ত ছাড়িয়েছে ৫৫তম দিনে। তারপর লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে। প্রথম শনাক্তের পর ৮ হাজার আক্রান্ত ছাড়িয়েছে; ইরানে ২১তম দিনে, তুর্কিতে ১৭তম দিনে, চীনে ৩২তম দিনে, ইতালিতে ৪০তম দিনে, স্পেনে ৪৬তম দিনে, জার্মানীতে ৫২তম দিনে, রাশিয়ায় ৬৯তম দিনে।
করোনা আক্রান্তের আন্তর্জাতিক তথ্যাবলী বিশ্লেষণ এবং পর্যালোচনা করলে দেখা যায়- বাংলাদেশে করোনা আক্রান্তের গতিবিধি ইউরোপ, আমেরিকার পরিস্থিতির অনুরূপ। সেসব দেশে প্রথম আক্রান্ত শনাক্ত হওয়ার ৪৫–৫৫ দিনের পর থেকে আক্রান্তের সংখ্যা অনেক দ্রুত গতিতে বেড়েছে। বাংলাদেশের মহাবিপদ এখনও শুরু হয়নি, সামনে। শুধু তথ্য বিশ্লেষণ থেকেই এমন পরিস্থিতির পূর্বাভাস মিলছে না, বিশেষজ্ঞগণও ভাইরাসটির চরিত্র, বৈশিষ্ট বিশ্লেষণ করে একই কথা বলছেন।
ভাইরাসটি অনেক বেশি মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা সামনে রেখেই গত ২৫ এপ্রিল থেকে খুলে দেওয়া হয়েছে তৈরি পোশাকসহ সকল রকমের কারখানা; বাড়ানো হয়েছে ব্যাংকিং করার সময়; জরুরী সেবাদানকারী দফতরগুলোসহ খুলে দেয়া হয়েছে ২৫টি মন্ত্রণালয়ের কাজকর্ম। বলা হয়েছিল যেসব কারখানাগুলোতে জরুরী রফতানী করার প্রয়োজন রয়েছে শুধু সেসব কারখানাই খোলা হবে করোনা বিধিগুলো কঠোরভাবে প্রতিপালন করে। বাস্তবতা সেখান থেকে অনেক দূরে। প্রতিদিন সংবাদ মাধ্যমে দেখা যাচ্ছে দুই/একটা ব্যতিক্রম বাদ দিলে, কারখানাগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা হচ্ছে না। বাংলাদেশে এমন নিয়মকানুন বাস্তবায়ন করা যায় না। নিয়ম না মানাই এখানকার সংস্কৃতি।
শ্রমিকেরা পেটের দায়ে, চাকরী বাঁচাতে বাধ্য হয়ে কারখানার কাজে যোগ দিচ্ছেন। বাড়তে শুরু করেছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। চরম করোনা ঝুঁকি নিয়ে এখন প্রায় সব কারখানাই খোলা রয়েছে। রাস্তাঘাটে বেড়ে গিয়েছে লোকজনের চলাচল। কোথাও কোথাও ট্রাফিক জ্যামও সৃষ্টি হচ্ছে। সামাজিক দূরত্বের নীতি সম্পূর্ণ পরাহত। ঘরে বসে কাজ করছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করা মধ্যবিত্ত। সরকারি চাকুরেদের সপ্তাহে ২/৩ দিন অফিসে যেতে হচ্ছে। করোনা আরও ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ার আতঙ্কে আছে দেশবাসী। এমন পরিস্থিতিতে ঈদ সামনে রেখে নগরের দোকান-পাট, শপিংমল খুলে দেয়ার পাঁয়তারা চলছে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোও তাদের অফিস খুলে দিতে উদগ্রীব; বিভিন্ন মহলে তারা চেষ্টা তদবির চালাচ্ছেন।
কারখানাগুলো খুলে দেয়ার পেছনে সরকারের উপর তৈরি পোশাক শিল্পের মালিকেরা অনেক চাপ সৃষ্টি করেছে বলে সংবাদ মাধ্যমে পাওয়া খবরগুলো থেকে প্রতীয়মান হয়। বেশ কয়েকজন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি এবং অর্থনীতিবিদ পত্রিকায় নিবন্ধ লিখে, টেলিভিশন টকশোতে অংশ নিয়ে কারখানা খুলে দেয়ার পক্ষে যুক্তি প্রদর্শন করেছেন। এ সকল নিবন্ধ এবং টকশো নীতিনির্ধারকদের উপর প্রভাব বিস্তার এবং চাপ প্রয়োগ করেছে নিঃসন্দেহে। তাঁদের প্রধান যুক্তিটি হচ্ছে- চীন এবং ভিয়েতনাম কারখানা খুলে দিয়েছে। এখন বাংলাদেশ না খুললে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়বে, বাংলাদেশ স্থায়ীভাবে বাজার হারাবে। কিন্তু চীন ও ভিয়েতনাম কারখানা খুলেছে তখনই, যখন তাদের দেশে করোনার আক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে; নতুন আক্রান্তের সংখ্যা শূন্যের কাছাকাছি আনতে পেরেছে। চীনে এখনও প্রতিদিন ২/৪ জন করোনা আক্রান্ত শনাক্ত হলেও ২৫ এপ্রিলের পর থেকে ভিয়েতনামে একজনও এ রোগে আক্রান্ত হয়নি। তারা ঝুঁকিমুক্ত হওয়ার পরেই কারখানা খুলে দিয়েছে।
বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত মোট আক্রান্তের সংখ্যা চীনের তুলনায় অনেক কম কিন্তু প্রতিদিনের করোনা শনাক্তের সংখ্যা অনেক বেশি। এখানে করোনার আক্রমণ চূড়ায় পৌঁছাতে এখনো অনেক বাকি। ভিয়েতনাম প্রথম থেকে অত্যন্ত সতর্কতার এবং দক্ষতার সঙ্গে করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলা করেছে। তারা অল্পদিনের মধ্যেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনে আক্রান্তের সংখ্যা শূন্যের কাছাকাছি নিয়ে আসতে পেরেছে। এমনকি ভিয়েতনামে একজনও করোনার কারণে মৃত্যুবরণ করেনি।
কারখানা খুলে দেয়ার দ্বিতীয় যুক্তি হচ্ছে- আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশ তৈরি পোশাকের স্থায়ীভাবে বাজারে হারানোর আশঙ্কা। বাংলাদেশ কেন সারাবিশ্বই অদেখা শত্রু করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করছে। সকল দেশই সকল দেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত। তাছাড়া বাংলাদেশের বাজার যেসব দেশে, সে দেশগুলো করোনায় সবচেয়ে বেশি আক্রন্তের তালিকায় একেবারেই উপরের দিকে। তাদের দেশে করোনা আক্রান্তের চূড়ান্ত পর্যায় অতিবাহিত হয়ে গিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। গতকয়েক দিনে তাদের নতুন আক্রান্তের হার ক্রমহ্রাসমান। এখনো সেসব দেশে প্রতিদিন ৫/৭ শত জন আক্রান্ত হচ্ছে। সেখানে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে আরও দুই/এক মাস সময় লাগবে। কিছু কিছু দোকানপাট খুলে দিলেও পুরো অর্থনীতি খুলে দিতে তারা অনেক সময় নেবে। আর তা না হলে তৈরি পোশাকের চাহিদা আন্তর্জাতিক বাজারে আগের অবস্থায় ফিরবে না। তাই মানুষের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তাড়াহুড়া করে পোশাক শিল্প খুলে দেয়ার দরকার ছিল না।
আমাদের তৈরি পোশাক খাদ্যের মতো অবশ্য প্রয়োজনীয় পণ্য নয়। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই মানুষ জামাকাপড় কিনতে দৌড়াবে না। সেরকম স্বাভাবিক হতে অনেক সময় দরকার। তাছাড়া ক্রেতা চাইলেই বাংলাদেশের মত শক্তিশালী একটা তৈরি পোশাক শিল্প ত্যাগ করা সম্ভব নয়। তারা চাইলেই বাংলাদেশ যতো জামাকাপড় যতো দক্ষতার সঙ্গে যতো কম দামে তৈরি করে দিতে পারে অন্য দেশ তা এখনই করে দিতে পারে এমন নয়। উৎপাদন ক্ষমতা, শ্রমিকের দক্ষতা রাতারাতি বাড়ানো যায় না। গার্মেন্টস সংশ্লিষ্ট কিছু ব্যক্তি এবং চিহ্নিত কয়েকজন অর্থনীতিবিদ শ্রমিকদের ঘরে বসিয়ে রেখে বেতন দিতে চায়নি। তাদের দিয়ে সামান্য হলেও কাজ করিয়ে নিয়ে বেতনের টাকা উসুল করতে চেয়েছে। শ্রমিকের তথা দেশবাসীর স্বাস্থ্য, জীবন-মৃত্যু তাদের বিবেচনার বিষয় নয়। করোনাকালে আর্থিক ক্ষতি কমিয়ে রাখাই তাদের প্রধান উদ্দেশ্য।
কারখানা খুলে দেয়া ছিল সরকারের ভুল সিদ্ধান্ত। এ সিদ্ধান্ত জাতিসঙ্ঘ এবং বাংলাদেশ সরকারের করোনাকালীন স্বাস্থ্য নীতির সঙ্গে সাঙ্ঘর্ষিক। বিভিন্ন পরিসংখ্যানের বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনা এবং বিশেষজ্ঞদের মতে, মে মাসের ১৫ তারিখের পরে বোঝা যাবে এখানে করোনা পরিস্থিতি কি হতে যাচ্ছে। তার আগে কোন রকম অফিস, আদালত, দোকান-পাট, কারখানা খুলে দেয়া উচিৎ নয়। তবে খাদ্যদ্রব্য এবং জরুরী কিছু সেবা সকল পরিস্থিতিতেই চালু রাখতে হয়। অনেক ঝুঁকি নিয়ে হলেও চিকিৎসা, বিদ্যুৎ, পানি, খাদ্য উৎপাদন চালু রাখতে হয়। সরকারের কিছু দফতর করোনা মোকাবেলায় কাজ করে চলছে তাদেরও চালু রাখতে হবে। এসব ছাড়া অন্য যা কিছু খুলে দেয়া হয়েছে তা আবার বন্ধ করতে হবে। এগুলো ছাড়া বাকি সকল কিছু অন্তত ১৫ মে পর্যন্ত বন্ধ রাখতে হবে। ১৫ তারিখের পর পরিস্থিতি দেখে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
লেখক: চার্টার্ড একাউন্টেন্ট (এফসিএ) এবং লিড কনসালট্যান্ট ও চেয়ারম্যান, ঢাকা কনসাল্টিং লিমিটেড।
এনএস/
** লেখার মতামত লেখকের। একুশে টেলিভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে।