ঢাকা, রবিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট ও হার্ট অ্যাটাকের মধ্যে পার্থক্য

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২০:০৫, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ | আপডেট: ১৩:৩৬, ১২ মার্চ ২০১৮

Ekushey Television Ltd.

কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট এবং হার্ট অ্যাটাক। চিকিৎসাশাস্ত্রে বহুল ব্যবহৃত এই শব্দ দুইটি আমরা প্রায়ই শুনে থাকি। শব্দ দুইটির মধ্যে মিলও বেশ। চিকিৎসা বিজ্ঞান বিষয়ে জ্ঞান নেই অথবা খুবই অল্প পরিমাণে ধারণা আছে এমন ব্যক্তিদের কাছে শব্দ দুইটি একে অপরের প্রতিশব্দ। তবে বাস্তবতা হলো এই যে, শব্দ দুইটির অর্থ এবং সংজ্ঞা একেবারেই আলাদা।

সংজ্ঞা

কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট বা হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে যাওয়া বলতে বোঝায় এমন এক অবস্থাকে যখন হৃদযন্ত্র দেহের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে আর রক্ত সঞ্চালন করতে পারে না। এসময় হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া একেবারেই বন্ধ হয়ে যায়।

হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে গেলে আমাদের দেহের বিভিন্ন অংশে আর অক্সিজেন পৌছায় না। বিশেষ করে মস্তিষ্কে অক্সিজেন পৌছাতে পারে না। এমন অবস্থায় একজন ব্যক্তি শ্বাসকষ্টে ভোগে এবং অজ্ঞান হয়ে মৃত্যুবরণও করতে পারে।

অন্যদিকে হৃদযন্ত্রের কোন একটি অংশে যখন রক্ত প্রবেশে বাধা পায় বিশেষ করে এর নির্দিষ্ট কোন ধমনীতে যখন রক্ত প্রবেশ করতে পারে না সেই অবস্থাকে হার্ট অ্যাটাক বলে। হার্ট অ্যাটাককে মায়োকার্ডিয়াক ইনফার্কশন নামেও সংজ্ঞায়িত করা হয় অনেক সময়।

মূল পার্থক্য

কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট আর হার্ট অ্যাটাক এই দুইটি বিষয়ের মধ্যে মূল পার্থক্য হল এই বিষয়টিতে যে, কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া একেবারেই বন্ধ হয়ে যায়। পাশাপাশি হার্ট অ্যাটাকের সময় হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায় না। বরং তা কাজ করতে থাকে। কিন্তু তার একটি অংশের মধ্যে দিয়ে রক্ত চলাচল বাঁধা পায়। ধমনীতে রক্ত চলাচল বাধাগ্রস্ত হওয়ায় সেগুলো নিষ্ক্রিয় হতে শুরু করে।

লক্ষণ

কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট আর হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণগুলোর মধ্যে বেশকিছু পার্থক্য দেখা যায়। যেমন কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে আক্রান্ত ব্যক্তি হঠাত করে চেতনা হারিয়ে ফেলতে পারে। এর আগে কিছু পূর্ব সতর্ক বার্তাও দিতে পারে কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট। বুকে হালকা চিনচিনে ব্যথা হতে পারে, শ্বাস নিতে কষ্ট হতে পারে, অস্বস্তি অনুভব করা এবং ঘুম ঘুম ভাব হতে পারে।

অন্যদিকে হার্ট অ্যাটাকের সময়ও এ ধরনের সমস্যাগুলোই দেখা দিবে। তবে কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের মত এতটা তীব্র নাও হতে পারে হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণগুলো।

সহজ করে বললে, হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত ব্যক্তির হৃদযন্ত্র সক্রিয় থাকবে যা তিনি অনুভব করতে পারবেন। তবে কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে হদস্পন্দনই থেমে যাবে।

ফলাফল

কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের ফলে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়। ফলে দেহের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ন অঙ্গে রক্তা চলাচল বন্ধ হয়ে যাবে। খুব দ্রুত রোগীকে সিপিআর (কৃত্তিম উপায়ে অক্সিজেন দিয়ে শ্বাস-প্রশ্বাস চালু করা) না দিলে অথবা চিকিৎসকের শরণাপন্ন না হলেও রোগী মারাও যেতে পারে।

অন্যদিকে কার্ডিয়াক অ্যাটাক হলে দেশের মাঝে থাকা ধমণীগুলো নিষ্ক্রিয় হতে শুরু করে। শুরুতে প্রাথমিক অবস্থায় হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ না হলেও এর কার্যকারিতে কমে আসতে থাকে। দ্রুত চিকিৎসা সেবা দেওয়া না হলে মারা যেতে পারেন রোগী।

বেঁচে যাওয়ার সম্ভাবনা

কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট অথবা হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত রোগীর বেচে থাকার সম্ভাবনা কয়েকটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করে। রোগী আক্রান্ত হওয়ার পর তাকে কত দ্রুত চিকিৎসকের সামনে হাজির করা হয় অথবা তাকে কোন প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া যায় কী না তার ওপর নির্ভর করে।

কোন ব্যক্তির হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে গেলে তাকে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে। তবে সম্ভব হলে তারও আগে বিকল্প উপায়ে নিশ্বাস দিতে হবে। মুখের সাথে মুখ লাগিয়ে অথবা বুকের কাছে ঝাঁকি দিয়ে রোগীর হৃদযন্ত্রের ক্রীয়া স্বাভাবিক করতে কাজ করতে হবে।

একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, হৃদযন্ত্র থেমে যাওয়ার প্রথম কয়েক মুহুর্তের মধ্যে যদি আক্রান্ত ব্যক্তি সিপিআর দেওয়া যায় তাহলে তার বেঁচে যাওয়ার সম্ভাবনা দুই থেকে তিন গুণ পর্যন্ত বেড়ে যায়। হাসপাতালের বাইরে কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে আক্রান্ত হওয়া ৯০ শতাংশ রোগীরই পরিণতি হয় মৃত্যু।

অন্যদিকে হার্ট অ্যাটাক কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের মত ততটা গুরুত্ব না হলেও এক্ষেত্রে যদি আক্রান্ত ব্যক্তিকে বেশি সময় চিকিৎসকের সামনে হাজির করা না যায় তাহলে আক্রান্ত ব্যক্তির মৃত্যুও হতে পারে।

যোগসূত্র

কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট অথবা হার্ট অ্যাটাকের মধ্যে কোন মিল বা সাদৃশ্য না থাকলেও দুইটির মধ্যে যোগসূত্র আছে।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের অন্যতম কারণ হল হার্ট অ্যাটাক। অর্থ্যাত হৃদযন্ত্রের কোন একটি অংশে রক্ত প্রবাহে বাঁধা সৃষ্টি হলে করা করা থামিয়ে দিতে পারে খোদ হৃদযন্ত্রই।

সূত্রঃ এনডিটিভি

//এস এইচ এস//

 


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি