কালের গদ্যচিত্র: ঘটমান সময়ের নির্মোহ বিশ্লেষণ
প্রকাশিত : ১৪:৩৫, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
মার্কিন প্রবাসী কম্পিউটার বিজ্ঞানী ড. জীবন বিশ্বাসের লেখা ‘কালের গদ্যচিত্র’ বইতে আমেরিকা এবং বাংলাদেশের ঘটমান ঘটনাগুলোকে সমসাময়িকভাবে নির্মোহ বিশ্লেষণ করা হয়েছে। প্রতিটি লেখা একজন চিন্তাশীল পাঠকের মনোজগতকে আরও প্রসারিত ও ঋদ্ধ করবে। অনেক তথ্য আর উপকরণ আছে প্রতিটি রচনায়। লেখাগুলো একজন পাঠককে ভাবতে শেখাবে।
ঘটমান সময়কে বন্দি করে রাখার প্রয়াস থাকে লেখকের। ‘কালের গদ্যচিত্র’ বইতে এমনই কিছু ঘটনার প্রবাহ ধরে রাখা হয়েছে সুবিন্যস্তভাবে। বাংলাদেশ, আমেরিকা এবং এর বাইরের বিশ্বে সংঘটিত চলমান ঘটনাগুলোকে সমসাময়িকভাবে বিশ্লেষণে বলার প্রয়াস পেয়েছেন লেখক। তাঁর চিন্তায় দেশের ভৌগলিক সীমানা ছাড়িয়ে দূর দেশ আমেরিকার আর্থ-সামাজিক অবস্থার বর্ণনাও ফুটে উঠেছে নির্মোহভাবে। সহজ ও সরল গদ্যে লেখা তাঁর উপস্থাপনা যে-কোনো বয়সী পাঠকের কাছে গ্রহণযোগ্য বিবেচিত হবে বলে মনে হয়। লেখাগুলোতে বিশ্ব রাজনীতি, সমাজ, অর্থনীতি, ব্যক্তি, প্রযুক্তি, দেশ, মহামারি ইত্যাদি অনেক বিষয়ই অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
এই বইয়ের লেখাগুলো শ্রেণিবদ্ধ হয়েছে বিভিন্ন অধ্যায়ে। হাজার মাইল দূরে থেকেও দেশ নিয়ে লেখকের বিস্তীর্ণ ভাবনা, রাজনীতি ও অর্থনীতির ক্রমবর্ধমান উন্নতির সূচকগুলো নিজস্ব বিশ্লেষণ ফুটে উঠেছে বিভিন্ন রচনায়। দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে তাঁর প্রত্যাশার কথা আছে। সারাবিশ্বের অধ্যায়ে আমেরিকার মত দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা নিয়ে তার তথ্যসমৃদ্ধ লেখাগুলো অনেক ভাবনার খোরাক যোগায়। এই দেশটি যেমন সভ্যতা আর উন্নতির চরম চূড়ায় উঠেছে তেমনি এর প্রদীপের নিচে কত অন্ধকার লুকিয়ে আছে তাও তথ্য এবং উপাত্ত দিয়ে লেখক তুলে ধরেছেন অবলীলায়। একইসাথে এসেছে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ঘটে যাওয়া অনেক অজানা অধ্যায়।
এসেছে করোনা, মাঙ্কি পক্স এবং ওমিক্রনপরবর্তী বিশ্ব নিয়ে কয়েকটি তথ্যসমৃদ্ধ ও বিশ্লেষণধর্মী লেখা। আমাদের যাপিত জীবনে প্রভাব বিস্তারকারী ও ভৌগলিক সীমা ছাড়িয়ে যেসব গুণীজন নিজস্ব আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে দ্যুতি ছড়িয়েছেন তাদের নিয়ে কয়েকটি লেখা আছে আলোকবর্তিকা অধ্যায়ে। লেখাগুলো পড়লে এই গুণীজনদের সম্পর্কে অনেক অজানা তথ্যই জানা যাবে।
পত্রিকার উপসম্পাদকীয় প্রধানত ঘটমান সময়কেই নির্দেশ করে এবং সেই ঘটমান সময়ের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলোকে সময়ের পঞ্জিতে ধরে রাখে। বইয়ে সন্নিবেশিত লেখাগুলো প্রধানত সেই সময়ের চিহ্ন বহন করলেও কিছু লেখা হয়তো সময়কে অতিক্রম করে মানব জীবনের পরতে পরতে লুকিয়ে থাকা আনন্দ-বেদনা এবং মোড় ঘোরানো ইতিহাসের সাক্ষ্য বহন করে। লেখাগুলোতে বিশ্ব রাজনীতি, সমাজ, অর্থনীতি, ব্যক্তি, প্রযুক্তি, দেশ, মহামারি ইত্যাদি অনেক বিষয়ই অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
তবে এগুলোকে বৃহত্তর অর্থে বাংলাদেশ, সারাবিশ্ব ও আলোকবর্তিকা এই তিনটি বিভাগে উপস্থাপন করা হয়েছে। প্রতিটি লেখারই রেফারেন্স বা তথ্য-নির্দেশিকা সংরক্ষণ করা আছে।
বইটিতে ভাষা নিয়েও একটি দীর্ঘ প্রবন্ধ আছে। যুগের প্রয়োজনে এবং সময়ের বিবর্তনে অনেক কিছুরই পরিবর্তন হয়। সে পরিবর্তন যদি অধিকাংশের কাছে প্রকৃতিগতভাবে গ্রহণযোগ্য হয় তাহলে তা স্থায়িত্ব পায়, আর গ্রহণযোগ্য না হলে হারিয়ে যায়। কোনো নামকরা স্থায়ী বিশ্ববিদ্যালয় নতুন কোনো কোর্স অফার করার আগে সে কোর্সের উপযোগিতা নিয়ে বিভিন্নভাবে গবেষণা করে। এর একটি পর্যায় হচ্ছে ফোকাস গ্রুপের মতামত নেয়া। ছয় মাস বা সর্বোচ্চ এক বছর সময়কালে ফোকাস গ্রুপের সংগে একটি নির্দিষ্ট সময় অন্তর অন্তর নিয়মিত মিটিং করে তাদের মতামত কাঠামোগতভাবে লিপিবদ্ধ করা হয়। যদি সে মতামত ওই কোর্সের পক্ষে যায় অর্থাৎ ফোকাস গ্রুপের অধিকাংশ অংশ্রগ্রহণকারি কোর্সের পক্ষে মতামত প্রদান করে, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সে কোর্স চালু করে।
একইভাবে বিখ্যাত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোও এই ধরণের প্রক্রিয়া অনুসরণ করে। যেমন, মাইক্রোসফট কর্পোরেশন তাদের জনপ্রিয় সফটওয়ারে (যেমন উইন্ডোজ, ওয়ার্ড, এসকিউএল, টিমস ইত্যাদি) কোনো পরিবর্তন বা পরিবর্ধনের আগে তা ফোকাস গ্রুপ এবং আরএফসি (রিকোয়েস্ট ফর কমেন্টস) পর্যায়ে কমপক্ষে ছয় মাস মতামতের জন্য উন্মুক্ত করে মন্তব্য ও মতামত সংগ্রহ করে।
সংগৃহীত মন্তব্য ও মতামত পর্যালোচনা করে মাইক্রোসফট সফটওয়ারে পরবিবর্তন বা পরিবর্ধনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ অথবা ত্যাগ করে। এ সবই যুগ ও সময়ের প্রয়োজনে দরকার হয়ে পড়ে। কিন্তু সর্বজনগ্রাহ্য একটি ভাষার ক্ষেত্রে এ ধরণের পরিবর্তন বা পরিবর্ধন কোনো গবেষণা বা ফোকাস গ্রুপ বা অন্য কোনো উপায়ে করা যায় কি না, বা করা গেলে, তা করা হচ্ছে কি না, সেরকম কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্য-উপাত্ত পাওয়া যায় না। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর্স বা বিখ্যাত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সেবা সবাইকে স্পর্শ নাও করতে পারে, কিন্তু একটি ভাষা ওই ভাষার সবাইকেই স্পর্শ করে। অর্থাৎ ভাষা সবার জন্য কিন্তু শিক্ষা বা সেবা সবার জন্য নাও হতে পারে। তাই ভাষার পরিবর্তন বা পরিবর্ধনে দীর্ঘ সময়ের যেমন প্রয়োজন হয়, তেমনি এর গ্রহণযোগ্যতাও সার্বজনীন হতে হয়। গুটিকয়েকের জন্য ভাষার পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী নয়।
একজন চিন্তাশীল পাঠকের মনোজগতের ব্যাপ্তিকে আরও প্রসারিত ও ঋদ্ধ করার মত অনেক উপকরণই আছে প্রতিটি রচনায়। লেখাগুলো একজন পাঠককে ভাবতে শেখাবে। অনেক তথ্যে সমৃদ্ধ করবে বলে বিশ্বাস করি।
এএইচ