ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২১ নভেম্বর ২০২৪

কাল্পনিক হেইদির বাস্তব জগৎ

প্রকাশিত : ১৬:১১, ৩০ এপ্রিল ২০১৮

হেইদিই সুইজারল্যান্ডের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল। হেইদির মাধ্যমে প্রথম জেনেছিলাম সুইজারল্যান্ডকে। বিশদভাবে নয় তবে মূল আকর্ষণ ছিল হেইদি। তখন আমার বয়েস দশ, আর হেইদির সাত। সাত বছরের মেয়েটি প্রচণ্ডভাবে আকর্ষণ করেছিল।

আল্পস পর্বতের কোলে মাইনফেল্ড গ্রামে হেইদির বাড়ি। পাহাড়ি ছাগল পশুপাখি হেইদির খেলার সাথী। মুক্ত জীবন। ওরকম মুক্ত জীবন আমার ছিলনা। স্কুল আর বাড়ি হোম টাস্ক, শিক্ষকের রক্তচক্ষু, স্কুলের টেবিলে বিছানো বাঁশের কঞ্চি জীবনটাকে আবদ্ধ করে রেখেছিল এক গণ্ডির ভেতর। সে জন্যই হয়তো প্রকৃতির পরিবেশে বেড়ে উঠা হেইদির জীবন আকর্ষণ করেছিল।

স্কুলের বাংলা স্যার পড়ার ফাঁকে ফাঁকে হেইদির কথা বলেছিলেন। প্রচুর বই পড়তেন স্যার। তার টেবিলের উপর চার পাঁচটি বইয়ে টিক মার্ক দেয়া থাকতো। সময় পেলেই কোন একটা বই উঠিয়ে নিয়ে পড়া শুরু করতেন। হেইদির মুক্ত জীবন হয়তো স্যারকেও দোলা দিয়েছিল।

হেইদিকে নিয়ে লিখা জোহানা স্প্রীর বইটি বাংলা স্যারই পড়তে দিয়েছিলেন। দেড়শত পৃষ্ঠার একটি বই, বইয়ের প্রতি পাতায় ছবি। ছবি দিয়েই সব বোঝানো হয়েছে, হেইদির ছবি, হেইদির গ্রাম, বৃদ্ধ আংকেল আল্প পাহাড়ের পাদদেশে হেইদির বাড়ি, বইটি পড়তে পড়তে সাদাকালো ছবিগুলোও মনে দাগ কেটেছিল। কেমন যেন একটা অতৃপ্তি থেকে গিয়েছিল বইটি শেষ করার পর। পরে জেনেছিলাম মূল বইটি সাড়ে তিনশ পৃষ্ঠার। এর অর্থ হেইদিকে পুরোপুরি জানা হয়নি। পুরোপুরি জানা না গেলেও মনজুড়ে ছিল হেইদি। হেইদির গ্রাম মাইনফেল্ড।

দুটি কারণে বিখ্যাত মাইনফেল্ড গ্রাম

প্রথমত হেইদি, দ্বিতীয়ত স্থানীয়ভাবে তৈরি পানীয় ‘হেরসেফলার’। ৮৩১ সালে মাইনফেল্ডের কথা প্রথম জানা যায়। তখন অবশ্য নাম মাইনফেল্ড ছিলো না, স্থানটি পরিচিত ছিল ‘লুপিনিস’ নামে। পরবর্তী সময়ে নামের বির্বতনের মধ্য দিয়ে মাইনফেল্ড নামে সমধিক পরিচিতি লাভ করে। মাইনফেল্ড পাহাড়ের কোলে ছোট শহর, গ্রাম বললেও অত্যুক্তি হয়না। পরিধি সাড়ে বার স্কোয়ার মাইল। আল্প পর্বতের পাদদেশে ছোট্ট শান্ত নীড়। হেইদি যখন খালা দিতির হাত ধরে মাইনফেল্ডে আসে তখন কোন রেলস্টেশন ছিলনা। ঘোড়ার পিঠে বা পায়ে হেটে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হতো। সে সময় মাইনফেল্ডের জনসংখ্যা ছিল মাত্র বারশ। ছোট গ্রাম ডরফ্লিতে পায়ে হেটে পোঁছাতে লাগতো একঘণ্টা। ডরফ্লি হতে আরো একঘণ্টা পায়ে হাটা পথে আঙ্কেল আল্পের বাড়ি। ওখানেই ঘটতে থাকে হেইদির জীবনের চমকপ্রদ ঘটনাগুলো।

রাইটার্স হাউসের আমন্ত্রণে দুবার জুরিখ গিয়েছি

কাজের ফাঁকে ফাঁকে প্রায় সমগ্র সুইজারল্যান্ড ঘুরে বেড়িয়েছি। মুগ্ধ হয়ে দেখেছি আল্পস পর্বতঘেরা অপরূপ সৌর্ন্দযে ভরা দেশটিকে। হেইদি বা মাইনফেল্ডের কথা ভুলে গিয়েছিলাম তা’নয়। মাইনফেল্ডের পাশ দিয়ে লিসটেনস্টাইনে গিয়েছি। সময়ের স্বল্পতায় মাইনফেল্ডে যাওয়া হয়নি। জুরিখ রাইটার্স হাউস হতে যখন চতুর্থবার আমন্ত্রণ এলো রাইর্টাস হাউসের প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর মনিকাকে জানালাম হেইদির কথা, মাইনফেল্ডের কথা। মনিকাই ব্যাবস্থা করেছিলেন। জুরিখ হতে মাইনফেল্ড খুব একটা দূরে নয়। ট্রেন, বাস  সব পথেই যাওয়া যায়। আর হেইদির জন্য মাইনফেল্ড তীর্থক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।  পর্যটকদেরও বিস্তর সুবিধে দিয়ে রেখেছে সরকার।

আঠারোই আগস্ট রোববার

উপত্যকায় সূর্যের আলো ছড়িয়ে পরেছে। রাইটার্স হাউজের কর্মব্যস্ততা কম। সকাল আটটায় বেড়িয়ে পরলাম, গন্তব্য মাইনফেল্ড। জুরিখ রেলস্টেশনে পর্যটন কেন্দ্রের অফিস। যেকোন তথ্য জানতে পাওয়া যায়। মাইনফেল্ড যাবার তথ্য জানতে গেলে ডেস্কে বসা ছেলেটি জানালেন, হেইদির বাড়ি খুঁজে বের করা সময় সাপেক্ষ, তাই গাইডেড ট্যুর সহজতর। সুইজারল্যান্ডের যে কোন জায়গায় যাবার টিকেট আগেই কাটা ছিল। তাই গাইডেড ট্যুরে জন্য অতিরিক্ত চুরাশি ফ্রান্কের টিকেট কাটা সঙ্গত মনে হলনা। উপরন্ত গাইডেড ট্যুরে সময় বাঁধা থাকে। নির্দিষ্ট স্পটে নামিয়ে দেবার পর সময় মত ফিরে আসতে হয়। দেখা শেষ হোক আর নাই হোক অতিরিক্ত সময় নেয়ার উপায় নেই। তবে মনে হয় কোন জিনিষ নিজে খোঁজে বের করার মধ্যে যে আনন্দ সে আনন্দ গাইডেড ট্যুরে নেই। হেইদিকে খোঁজার বাসনা নিয়ে একাই বের হলাম। জুরিখ হতে মাইনফেল্ড মাত্র এক ঘণ্টা বিশ মিনিটের পথ। জুরিখ হতে সারগাম এক্সপ্রেস ট্রেন। লেকের ধার দিয়ে রাস্তা। এর আগেও গিয়েছি। প্রাকৃতিক দৃশ্য অবলোকন করতে করতে কখন যে সময় কেটে যায় বোঝার উপায় নেই। তবে আপনার পাশের যাত্রী যদি মুখরা হন তো সমূহ বিপদ। সারগামগামী ট্রেনে জায়গা নিয়ে বসার পর সিয়স্ক হতে কেনা কফি শেষ হতে না হতেই পাশের খালি আসনে ‘ডাংকে’ বলে দুই বৃদ্ধা এসে বসলেন। ‘ডাংকে’ শব্দটা উচ্চারণগত দিক দিয়ে ‘ডাংকি’ শব্দের খুব কাছাকাছি হওয়ায় বিভ্রান্তিকর বইকি। হঠাৎ শুনলে ইংরেজি শব্দটাই কানে আসে। তাই হঠাৎ শব্দটা শুনে চমকে উঠলাম। বৃদ্ধার দিকে তাকাতেই মাথা নোয়ালেন, পাশে বসতে দেবার জন্য জার্মান ভাষায় ধন্যবাদ জানালেন। ধন্যবাদ পর্ব শেষ হতে না হতেই দু’জনায় গল্পে মেতে উঠলেন। দু’একটি শব্দ ছাড়া জার্মান ভাষার সঙ্গে পরিচিত নই। আর অনবরত বিরামহীন দূর্ভেদ্য ভাষার প্রচারণায় যাত্রা পথটা সুখকর মনে হলনা। তবে বিশেষ একটা বয়স মানুষকে অনবরত কথা বলায়। মনে হল বৃদ্ধা দুজন সে বয়সে এসে পৌঁছেছেন।

মাইনফেল্ড পাহাড়ের উপর ছোট স্টেশন

সারগাম হতে লোকাল ট্রেনে দু’স্টেশন পরই মাইনফেল্ড, মাত্র আট কিলোমিটার। সমুদ্রপৃষ্ঠ হতে ষোলশ ফিট উচ্চতায় হওয়ায় স্টেশনে পা দিয়েই প্রকৃতি চোখ কেড়ে নেয়। ছোট স্টেশনটির মাত্র দুটি প্লাটফর্ম। একটি আসার, অন্যটি যাবার। স্টেশনের বাইরে এসে দাঁড়ালাম। লোকজন নেই। স্টেশন হতে বের হয়ে একটি ছোট রাস্তা এঁকে বেঁকে শহরের দিকে চলে গেছে। রাস্তার দু’পাশে ছোট ছোট বাড়ি। স্টেশনের পাশেই ছোট সিয়স্ক। একজন মাত্র দোকানি। দোকানিকে প্রশ্ন করতেই জানালেন ‘হেইদি ওয়ে’ সাইন ধরে গেলেই পাহাড়ের উঁচুতে হেইদির বাড়ি পাওয়া যাবে। ছোট আঁকাবাঁকা পথ ধরে হেটেই যেতে হবে। লাগবে প্রায় পঁচিশ মিনিট। পায়ে হাঁটা সরু পথ। দু’পাশে ছোট বড় সবুজ আঙ্গুর বাগান। বাগানে উৎপাদিত আঙ্গুর হতেই স্থানীয়ভাবে তৈরি হচ্ছে বিশ্বজোড়া খ্যাতিসম্পন্ন পানীয় ‘হেরসেফলার’। রাস্তার পাশে এমনি কয়েকটি পানীয় তৈরির কারখানাতে দূর দূরান্ত হতে এসেছেন ক্রেতারা।  কারখানার ভেতর একজন দোকানীকে প্রশ্ন করতেই জার্মান ভাষায় হেইদির বাড়ির অবস্থান বুঝিয়ে দিলেন। ভাষা যদিও বোঝা গেলনা তবে এ’টুকু অনুমান করা গেল সরু পথ ধরে আরো কিছুটা উপরে উঠতে হবে। কিছু উপরে পাঁকা পথ শেষ হয়ে পাথর বিছানো কাঁচা পথ। দু’পাশে গাছগাছালী। নীচে তাঁকিয়ে দেখলাম মানুষগুলোকে ছোট দেখাচ্ছে। বুঝলাম অনেক উপরে উঠে এসেছি।

পথের শেষে ছোট সবুজ চত্বর

চত্বরের ওপাশে পাহাড়ি ছাগলের খোঁয়ার। হেইদি বন্ধু পিটারের সাথে এই ছাগল নিয়েই খেলা করতো। সবুজ চত্বরের এক পাশে বিশাল এক গাছ। গাছের চারদিক কাঠের পাটাতন দিয়ে ঘেরা। পাটাতনের উপর অনেকেই বসে। দীর্ঘ পথ পারি দিয়ে বিভিন্ন দেশের পর্যটক হেইদি দর্শনে এসেছেন। গাছের পাশেই পোস্ট অফিসের বিলবোর্ড আর স্যুভেনীর শপ। স্যুভেনীর শপের ভেতরই পোস্ট অফিস। এখান হতে অনেকেই চিঠি পোস্ট করেন শুধু স্মৃতি ধরে রাখার মানসে। চিঠি পোস্ট করার প্রধানতম আকর্ষণ ‘হেইদি সীল’। রাবারের সীলটি হেইদির ছবি দিয়ে তৈরি। সীলের মাঝে হেইদির মুখচ্ছবি, মাথার উপর গোল করে লিখা মায়ানফেল্ড-সুইজারল্যান্ড, নিচে বড় করে লিখা ‘হেইদির্ডফ’। ‘র্ডফ’ শব্দের অর্থ গ্রাম। এখান হতে সুইডেনের ঠিকানায় একটি স্যুভেনীর কার্ড পোস্ট করলাম। চিঠি পৃথিবীর যে কোন ঠিকানায় পোঁছাবে। স্যুভেনীর শপে হেইদির পছন্দ করা সামগ্রী বিক্রি হচ্ছে। এখান হতে টিকেট কেটে হেইদির বাড়ি প্রবেশ করতে হয়। প্রবেশ মূল্য সাত সুইস ফ্রাংক। দূর দূরান্ত হতে যারা আসেন তারা হেইদির বাড়ি দর্শন না করে ফেরেননা। স্যুভেনির শপকে পাশ কাটিয়ে একটু উপরে গেলেই পথের পাশেই কংক্রিটের ছোট দোতলা হেইদির বাড়ি। প্রবেশদ্বারে টিকেট পাঞ্চ করতেই দরজা খুলে গেল। নিচের তলায় রান্না ঘর, গুদাম ঘর। হেইদির পড়ার ঘর। ছোট ছোট চেয়ার টেবিল। পাশের জানালা দিয়ে রোদ এসে পড়ছে পড়ার টেবিলে। রান্না ঘরটি পুরানো থালাবাসন আসবাবপত্রে সাজানো। পাশেই দোতলায় উঠার কাঠের সিঁড়ি। সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে এলাম। কাঠের ছোট আঙ্গিনা। আঙ্গিনায় বসে আংকেল আল্প কাঠ কেটে কিছু তৈরি করছেন। আঙ্গিনা পেরিয়ে হেইদির শয়ন কক্ষ। ছোট কাঠের খাট। পাশেই ছোট একটি খাটে পুতুল শুয়ে। সম্মুখে আলনায় ঝোলানো হেইদির কাপড়। কাঠের বাক্সে আরো কিছু জামা সাজানো। হেইদির শোবার ঘর পেরিয়ে পাশের ঘরটি লম্বা। গৃহস্থ সামগ্রী দিয়ে সাজানো। ঘরের এক পাশে একটি হুইল চেয়ার। যে হুইল চেয়ারটি ক্লারা ব্যবহার করতো। বাড়ি হতে বের হবার পথ রান্নাঘরের ভেতর দিয়ে। ঘরের বাইরে সবুজ লন। লনে কাঠের স্তুপ। জল তোলার কপিকল। লন পেরিয়ে নিচে গাঁয়ের পায়ে চলা পথ। এই পথ দিয়েই শহর হতে এসেছিল ক্লারা। ডান দিকে হেইদি ট্রেইল। খুবই সরু আঁকাবাঁকা পথ পাহাড়ের উপর উঠে গিয়েছে। উঠা যেমন কষ্টকর, নামাও তেমনি। যে পথ ধরে ক্লারা এসেছিল সে পথ ধরে ফিরে চললাম। পথটি উঁচুনিচু হলেও আরামদায়ক। এই পথ ধরে দর্শনপ্রার্থী আসছেন কেউ বা এককভাবে, কেউ বা দলবদ্ধ হয়ে। ফিরে চলার পথে শুধু মনে হল, স্বর্গ হতে ফিরছি। স্বর্গ এর থেকে সুন্দর কিনা জানিনা। তবে স্বর্গ আর হেইদির বাড়ির আঙ্গিনার মধ্যে কোন একটি বেছে নিতে হলে আমি হেইদির বাড়ির আঙ্গিনাকেই বেছে নেব। না, হেইদির সঙ্গে দেখা হয়নি। কারণ জোহানা ¯প্রী হেইদির জন্ম দিয়েছিলেন আজ হতে একশত তেত্রিশ বছর আগে। বাস্তবে হেইদি বলে কেউ ছিলনা। হেইদি লেখিকা জোহানা ¯প্রীর সৃষ্ট কাল্পনিক চরিত্র। কাল্পনিক চরিত্র যে এতো বাস্তব হতে পারে, হেইদির্ডফ না দেখলে বোঝা যায়না।

পথের শেষ মাথায় হেইদি হোটেল

হেইদিকে উপলক্ষ করে এই এলাকায় বিশাল পর্যটন শিল্প গড়ে উঠেছে। বড় বড় লাক্সারি বাসে পর্যটকরা আসছেন। কেউ বা পায়ে হেঁটে কেউ বা প্রাইভেট কারে। হোটেলের কাছে এসে খোঁজ নিয়ে জানতে চাইলাম কোন বাস মাইনফেল্ড স্টেশন অবধি যায় কিনা! না, বাস যায় না তবে গাইডেড ট্যুরের একজন বাস ড্রাইভার জানালেন তিনি আমাকে স্টেশন অবধি ড্রপ দিতে পারবেন যদি পঁচিশ মিনিট অপেক্ষা করি। স্বর্গ কে ত্যাগ করতে চায়? আর হেঁটে গেলেওতো একই সময় লাগবে। তাই অপেক্ষার পর আল্পস হতে নেমে এলাম। ড্রাইভারকে পাঁচ ইউরো টিপস দিতেই মাইনফেল্ড স্টেশনের মোড়ে নামিয়ে দিয়ে চলে গেলেন। স্টেশনে কোন লোকজন নেই। সবকিছুই চলছে কম্পিউটারে। টিকেট ঘরেও কেউ নেই। অটমেট হতে টিকেট কেনার ব্যবস্থা আছে। এক নাম্বার প্লাটর্ফমে এসে নেমেছিলাম। নিশ্চয় দু’নাম্বার হতে গাড়ি যাবে। ব্রীজ পার হয়ে দু’নম্বরে এসে দাঁড়ালাম। দিক নির্দেশনা জার্মান ভাষায়, বোঝার উপায় নেই। প্লাটফর্মে মাত্র দু’জন যাত্রী। একজনকে প্রশ্ন করে জানতে চাইলাম, এই প্লাটফর্ম হতেই সারগামগামী ট্রেন যাবে কিনা?  ভদ্রলোক ভাঙ্গা ভাঙ্গা ইংরেজি আর আঙ্গুল গুনে জানালেন আর চার মিনিটের মধ্যেই ট্রেন আসবে। জানতে চাইলাম তিনি এখানেই থাকেন কিনা? জার্মান-ইংরেজি মিশ্রণে জানালেন, তিনি পাশের গ্রামে থাকেন। এক বছরেরর বড় ভাই হাসপাতালে তাকে দেখতে এসেছিলেন। ভাইয়ের বয়স হয়েছে, তাঁর নিজেরও বয়স হয়েছে আশির উপর। জানতে চাইলেন আমি কোথা থেকে এসেছি ! বললাম সুইডেন হতে, আর অরিজিন বাংলাদেশ। বাংলাদেশের নাম শুনেই পাঁকা দুটি ভ্রুতে ভাজ পড়লো। কিছু যেন মনে করতে চেষ্টা করলেন। মনের ভেতর হাতরে পেয়ে বললেন, ‘শেখ মুজিব?’, ‘ডঃ ইউনুস?’। স্মিত হাস্যে জানালাম,‘হাঁ’। বুঝলাম বাংলাদেশ সম্পর্কে জানেন। ট্রেন এলে মুখোমুখি বসার পর কথায় কথায় বললেন, ‘তোমরা খুব অসহিষ্ণু জাতি। তোমরা দু’জন মহৎ ব্যক্তি পেয়েছ, একজন তোমাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন, অন্যজন এনে দিয়েছেন নবেল প্রাইজ। প্রথমজনকে তোমরা পাখির মতো গুলি করে মেরেছ আর দ্বিতীয়জনকে মারার জন্য তাড়িয়ে বেড়াচ্ছো।’ ভদ্রলোকের কথার জবাব আমি দিতে পারিনি। বাস্তব সত্যের জবাব থাকেনা। ভদ্রলোক ধন্যবাদ জানিয়ে গন্তব্যে নেমে গেলেন।  

জুরিখ, সুইজারল্যান্ড,

লেখক: সুইডেন প্রবাসী লেখক


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি