ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪

কিডনি সংযোজিত রোগীরাও রোজা রাখতে পারবেন (ভিডিও)

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৬:৫০, ১২ জুন ২০১৮ | আপডেট: ১১:১৫, ১৩ জুন ২০১৮

ডা. শামীম আহমেদ

ডা. শামীম আহমেদ

দেশে দুই কোটি লোক কোন না কোনভাবে কিডনির নানা সমস্যায় আক্রান্ত। রমজান মাসে কিডনি রোগীরা খাদ্যাবাসসহ নানা বিষয়ে কিছু নিয়মকানুন মেনে চলা দরকার। তাই নিয়ে লিখেছেন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট (কিডনী ডিজিজ অ্যান্ড ইউরোলজী) সাবেক পরিচালক ও বিভাগীয় প্রধান ডা. শামীম আহমেদ

কিডনি রোগীরা যা করা উচিৎ নয়-

মানবদেহের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোর মধ্যে দুই কিডনির ভূমিকা অপরিসীম। রমজান মাসে যারা ইতিমধ্যেই ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপজনিত কিডনি রোগে ভুগছেন তারা অবশ্যই ব্লাড সুগার এবং ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে রাখবেন।

কিডনি রোগীরা রমজান মাসে খাবারের ব্যাপারেও একটু অনিয়ম করেন, কারণ বিভিন্ন ধরনের রসালো ফল যেমন আম, কলাসহ বেশি পটাশিয়ামযুক্ত ফল খেয়ে থাকেন কিন্তু আপনারা অনেকেই জানেন না রক্তে পটাশিয়ামের পরিমাণ বেশি হলে হাইপারক্যালেমিয়া থেকে রোগীর আকস্মিক মৃত্যু হতে পারে। তাই বেশি পটাশিয়ামযুক্ত ফল খাবেন না।

শাকসবজি লিচিংয়ের মাধ্যমে অর্থাৎ দুই ঘণ্টা আগে পানিতে ভিজিয়ে অথবা পিস করে পানি ফেলে রান্না করবেন। অনেক সময় ফলে কার্বাইডসহ বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ মিশ্রিত থাকে। তাই খাওয়ার আধ ঘণ্টা আগে পানিতে ভিজিয়ে খোসা ফেলে ফল খেতে পারেন।

কিডনি রোগীরা অধিক মাত্রায় ভাজাপোড়া এবং ডাল বা ডালের তৈরি জিনিস খাবেন না। বাইরের খাবার না খেয়ে ঘরে তৈরি খাবারের প্রতি মনোযোগী হবেন। কিডনি রোগীরা আলগা লবণ বা অধিক পানি খাবেন না, কারণ কিডনি বিকল রোগীদের প্রস্রাব স্বাভাবিক মানুষের তুলনায় কম হয়, তাই অতিরিক্ত পানি হার্টে এবং ফুসফুসে জমে থেকে রোগীর মৃত্যুও হতে পারে।

যাদের জন্য রোজা ঝুঁকিপূর্ণ-

যারা দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগী, যাদের কিডনি বিকল হয়ে আছে, যাদের নিয়মিত ডায়ালিসিস করতে হচ্ছে, যাদের মূত্রতন্ত্রের প্রদাহের চিকিৎসা চলছে, আকস্মিক কিডনি বিকল রোগীদের মধ্যে যারা কিডনির কোনো জরুরি অপারেশন করাতে হচ্ছে। তাছাড়া দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগীদের যদি রক্তের উপাদানে কোনো জটিলতা দেখা দেয়, যাদের ডায়ালিসিস বা উচ্চ রক্তচাপ অনিয়ন্ত্রিত আছে, তাদের এগুলো নিয়ন্ত্রণ করে রোজা রাখতে হবে। কিডনি রোগীরা রোজা রাখতে পারেন কিন্তু তাদের বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

কিডনি রোগীর খাওয়া দাওয়া-

কোনো জটিলতা নেই এমন কিডনি রোগীরা তারা রোজা রাখতে পারবেন তবে তাদের প্রোটিন জাতীয় খাবার যেমন- মাছ, মাংস, ডিম, দুধ এগুলো পরিমিতভাবে খেতে হবে। পিঁয়াজু ও ভাজা-পোড়া খাবার, অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার, ঝাল-মসলা পরিহার করতে হবে। যাদের রক্তে পটাশিয়াম বেশি তারা শাকসবজি পটাশিয়ামমুক্ত করে খাবেন ও ফল সীমিত পরিমাণ খাবেন। আপনার ডাক্তারের পরামর্শে রক্তের উপাদান মাঝে মাঝে পরীক্ষা করিয়ে নেবেন। যাদের শরীরে অতিরিক্ত পানি আছে বা শরীর ফোলা তারা একবারে অনেক বেশি পানি খাবেন না। সেহরির সময় ভাত-রুটি, মাছ-মাংস, ডিম, দুধ পরিমিত খাবেন। ইফতারের সময় খাবেন খেজুর, চিড়া, দই, ডিমের পুডিং, সেমাই, পায়েস, পিঠা ইত্যাদি।

বেশি করে পানি খেতে হবে-

প্রস্রাবে ইনফেকশন প্রতিরোধের জন্য সেহরির সময় ও ইফতারের পর পর বেশি করে পানি খেতে হবে। কমপক্ষে তিন লিটার পানি প্রতিদিন পান করা দরকার। এ ছাড়া ক্রানবেরি জুস অথবা প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী ওষুধ, প্রস্রাবে ইনফেকশন কমিয়ে আনে। প্রতিদিন সেহরির সময় এক বা দুটি ক্যাপসুল বা ট্যাবলেট খাবেন। যাদের ঘন ঘন মূত্রতন্ত্রে ইনফেকশন হয়, তারা ইনফেকশন প্রতিরোধের জন্য কট্রিম অথবা নাইট্রোফোরানটোয়িন জাতীয় অ্যান্টিবায়োটিক অল্প মাত্রায় খেতে পারেন। কিডনিতে পাথর সৃষ্টির সঙ্গে পানির একটা সম্পর্ক আছে। পানি কম খেলে পাথর হওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়। কাজেই যাদের পাথর হওয়ার প্রবণতা আছে, তাদের ইফতার থেকে শুরু করে সেহরি পর্যন্ত ৩-৪ লিটার পানি খেতে হবে। সেই সঙ্গে আলগা লবণ পরিহার করতে হবে এবং প্রোটিন জাতীয় খাবার বিশেষ করে গরু-খাসির মাংস কম খেতে হবে।

কিডনি সংযোজনের রোগী ক্ষেত্রে-
কিডনি সংযোজিত রোগীরা রোজা রাখতে পারেন। তবে তাদের ওষুধ নিয়মিত খেতে হবে। মনে রাখতে হবে, এখন প্রচণ্ড গরমের সময়। খোলা খাবার, রাস্তার পাশে বিভিন্ন রঙবেরঙের শরবত সহজেই জীবাণু দ্বারা সংক্রমিত হতে পারে। এগুলো খেয়ে ডায়রিয়া, বমিতে আক্রান্ত হয়ে অনেক রোগীর আকস্মিক কিডনি বিকল হয়ে যেতে পারে। এজন্য এ ব্যাপারে সচেতনতাবোধ গড়ে তোলা জরুরি।

 এসএইচ/


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি