কিডনী প্রতিস্থাপনে অনন্য নজির
প্রকাশিত : ১২:২৪, ১ নভেম্বর ২০২১ | আপডেট: ১২:৩১, ১ নভেম্বর ২০২১
মাত্র দুই লাখ ১০ হাজার টাকা খরচে দেশেই করা যাচ্ছে কিডনী প্রতিস্থাপন। রাজধানীর শ্যামলীর একটি হাসপাতালে মিলছে এমন চিকিৎসা সেবা। হাসপাতালটির প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক ডা. কামরুল ইসলাম এরই মধ্যে এক হাজারেরও বেশি কিডনী প্রতিস্থাপন করে অনন্য নজির তৈরি করেছেন।
মনিরুল ইসলামের চোখের জলে বেঁচে থাকার আকুতি। একটি কিডনি বিকল। দীর্ঘদিন প্রবাসে থেকে যা উপার্জন করেছিলেন, তার সবটাই শেষ কিডনি চিকিৎসায়। নিঃস্ব মানুষটি কুমিল্লা থেকে এসেছেন শ্যামলীর সেন্টার ফর কিডনি ডিজিজেস অ্যান্ড ইউরোলজি হাসপাতালে কিডনি প্রতিস্থাপন করাতে।
মনিরুল ইসলাম বলেন, স্কয়ারে করেছি বর্তমানে কুমিল্লায় করতেছি। এখন স্যারের কাছে এসেছি ভালো একটা পরামর্শের জন্য। ডায়ালেসিস করাতে গিয়ে আমি সব শেষ করে ফেলেছি।
স্ত্রী, চার সন্তানের সংসারে মনিরুলই ছিলেন একমাত্র উপার্জনকারী। কিডনি দান করে স্বামীর জীবন বাঁচাতে চান স্ত্রী।
স্ত্রী কামরুন নাহার জানান, ডায়ালাইসিস তো ক্ষণিকের জন্য। যতোক্ষণ করে ততোক্ষণই ভালো, তারপরে তো অসুস্থ হয়ে যায়। এজন্য কিডনি ট্রান্সফার করলে ভালো থাকবে এই আশায় দিতে চাই।
সিকেডি হাসপাতালে ২২ বেডের ডায়ালাইসিস ইউনিটে প্রতিদিন ৫০ থেকে ৬০ জন সেবা নেন দেড় হাজার টাকায়। কিডনী জটিলতা ও প্রতিস্থাপনের জন্য দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অসংখ্য রোগী আসেন এই হাসপাতালে।
পাশ্ববর্তী দেশ ভারতে গিয়ে কিডনি প্রতিস্থাপন করলে খরচ হয় ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা। তবে ডা. কামরুল ইসলামের হাসপাতালে কিডনী প্রতিস্থাপন, আইসিইউ বেড ও ওষুধসহ খরচ মাত্র ২ লাখ ১০ হাজার টাকা। সফলতার হার ৯৬ শতাংশ।
ইউরোলজিস্ট এন্ড ট্রান্সপ্লান্ট সার্জন অধ্যাপক ডা. কামরুল ইসলাম বলেন, “হয়তো প্রতিমাসে আমার এখানে সাড়ে তিন থেকে চার লাখ টাকার ট্রান্সপ্লান্টের টেস্ট ফ্রি হচ্ছে। এটার লোড কিন্তু আমার উপর অতটা নাই। আমি যদি একটা হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করি ওখানে স্টোন সার্জারি, প্রোস্ট সার্জারি, ক্যান্সার সার্জারি করছি বা অন্য একটি সার্জারি করছি। সেগুলো থেকে পেমেন্ট আসছে, ওখান থেকে দু’মুঠো চাল যদি আপনি ট্রান্সপ্লান্ট রোগীদের দিয়ে দেন তাহলে কিছুই ক্ষতি হবে না।”
২০০৭ সালে হাসপাতালটির যাত্রা শুরু। এখন পর্যন্ত দেশে যত কিডনি প্রতিস্থাপন হয়েছে, তার এক-তৃতীয়াংশই করেছেন অধ্যাপক ডা. কামরুল ইসলাম। গেল ১৯ অক্টোবর ১ হাজার কিডনি প্রতিস্থাপনের মাইলফলক স্পর্শ করেছেন তিনি।
অধ্যাপক ডা. কামরুল ইসলাম বলেন, এখন টার্গেট ২ হাজারে পৌঁছাতে হবে। আপনি যদি একটা ভালো কাজ করবেন, ভালো লাগবে। আমার মনে হয়, এটাই অনুপ্রেরণা। সেই অনুপ্রেরণা দিয়েই এগিয়ে যেতে হবে। আমার সহকর্মী, সিস্টার-ব্রাদার তাদের ‘ফাইট ফর দ্যা পেসেন্ট’ এটা কোথা এসেছে আমি জানি না।
গরীব ও অসহায় মানুষদের স্বল্পব্যয়ে উন্নত সেবা দেয়াই লক্ষ্য ডা. কামরুল ইসলামের। বিত্ত-বৈভবের মোহ টানে না তাকে।
এই চিকিৎসক আরও বলেন, “শুধুমাত্র আইসিইউতে যারা মারা যাচ্ছেন, সেই কিডনি নিয়ে দু’জন রোগীকে বাঁচানো যায়। আমরা এখনও এটা করতে পারেনি। আশা করছি, হয়তো আগামী দু’তিন বছরের মধ্যে এভরিডে ট্রান্সপ্লান্ট করতে পারবো।”
ভালো কাজের জন্য ইচ্ছেশক্তির বিকল্প নেই; কোন ধরনের অনুদান ছাড়াই চলছে সিকেডি হাসপাতালের কার্যক্রম।
ভিডিও-
এএইচ/