ঢাকা, রবিবার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪

কিভাবে বুঝবেন আপনি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত: ডা. এবিএম আবদুল্লাহ

প্রকাশিত : ১৪:১৪, ১৭ অক্টোবর ২০১৮ | আপডেট: ১৬:৫৩, ১৭ অক্টোবর ২০১৮

ডা. এবিএম আবদুল্লাহ

ডা. এবিএম আবদুল্লাহ

মে থেকে অক্টোবর মাস বিশেষ করে বর্ষাকালে থাকে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব, শীতের আগমনের আগ পর্যন্ত চলতেই থাকবে। কিন্তু এবছরের শুরু থেকেই বেড়ে চলেছে ডেঙ্গুজ্বরের প্রকোপ, কারণ মাঝেমাঝে হালকা বৃষ্টিতে জমে থাকা পানি ডেঙ্গুবাহিত এডিস মশার প্রধান প্রজননক্ষেত্র। ফলে মশার বংশবৃদ্ধির সাথে তাল মিলিয়ে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। তা কিভাবে বুঝবেন আপনি ডেঙ্গু জ্বরে ভুগছেন?

ডেঙ্গু প্রধানত দুই ধরনের, ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গু ফিভার এবং ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার। ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গুজ্বরে সাধারণত তীব্র জ্বর ও সেই সাথে সারা শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা হয়। জ্বর ১০৫º ফারেনহাইট পর্যন্ত হতে পারে। শরীরে বিশেষ করে হাড়, কোমর, পিঠসহ অস্থিসন্ধি, মাংসপেশি, মাথাব্যথা ও চোখের পিছনে তীব্র ব্যথা হয়। এমনকি ব্যথা এত তীব্র হয়, মনে হয় হাড় বুঝি ভেঙ্গে যাচ্ছে।

তাই এই জ্বরের আরেক নাম “ব্রেক বোন ফিভার”। শিশুদের ক্ষেত্রে ব্যথার তীব্রতায় শিশুকে স্পর্শ করলেই কেঁদে ওঠে, খিটখিটে মেজাজের হয়। জ্বর হওয়ার ৪ বা ৫ দিনের সময় সারা শরীরজুড়ে লালচে দানা দেখা যায়, যাকে বলা হয় স্কিন র‌্যাশ, অনেকটা এলার্জি বা ঘামাচির মত। এরসাথে বমিবমি ভাব, এমনকি বমি হতে পারে। রোগী অতিরিক্ত ক্লান্তিবোধ করে এবং রুচি কমে যায়। সাধারণত ৪ বা ৫ দিন জ্বর থাকার পর তা এমনিতেই চলে যায় এবং কোনো কোনো রোগীর ২ বা ৩ দিন পর আবার জ্বর আসে। একে বাইফেজিক ফিভার বলে।

আরও পড়ুন : এই সময়ে সর্দি-জ্বর হলে কী করবেন: ডা. এবিএম আবদুল্লাহ

ডেঙ্গু হেমোরেজিক জ্বরের অবস্থাটাই সবচেয়ে জটিল, যেখানে ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ও উপসর্গের পাশাপাশি আরও কিছু সমস্যা হয়, যেমন শরীরের বিভিন্ন অংশ থেকে রক্তপাত, চামড়ার নিচে, নাক ও মুখ দিয়ে, মাড়ি ও দাঁত হতে, কফের সাথে, রক্তবমি, পায়খানার সাথে তাজা রক্ত বা কালো পায়খানা, চোখের মধ্যে এবং চোখের বাহিরে, মেয়েদের বেলায় সময়ের আগেই মাসিক হওয়া বা মাসিকের সময় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ ইত্যাদি।

আরও পড়ুন :  হৃদরোগ থেকে বাঁচার ১১ উপায়: ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ

এমনকি মস্তিষ্ক এবং হার্টেও রক্তক্ষরণ হতে পারে। ফলে হাইপোভলিউমিক শকে গিয়ে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। তাছাড়া বুকে পানি এবং শ্বাসকষ্ট, পেটে পানি, লিভার আক্রান্ত হয়ে জন্ডিস, কিডনি আক্রান্ত হয়ে রেনাল ফেইলিউর ইত্যাদি জটিলতা দেখা দিতে পারে।

ডেঙ্গু শক সিনড্রোম: ডেঙ্গু জ্বরের ভয়াবহ রূপ হলো ডেঙ্গু শক সিনড্রোম। ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভারের সাথে সার্কুলেটরী ফেইলিউর হয়ে ডেঙ্গু শক সিনড্রোম হয়। এর লক্ষণ হলো রক্তচাপ হঠাৎ কমে যাওয়া, নাড়ীর স্পন্দন অত্যন্ত ক্ষীণ ও দ্রুত হয়, শরীরের হাত পা ও অন্যান্য অংশ ঠাণ্ডা হয়ে যায়, প্রস্রাব কমে যায়, হঠাৎ করে রোগী অজ্ঞান হতে পারে। এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

বর্তমানে ডেঙ্গুর ধরণ: এবারে অধিকাংশ রোগীর ক্ষেত্রে রোগের লক্ষণের ভিন্নতা দেখা যাচ্ছে। জ্বরের তীব্রতা, তীব্র শরীর ব্যথা এবং র‌্যাশ পরিলক্ষিত হচ্ছে না, ফলে রোগীরা সাধারণ জ্বর মনে করে অধিকাংশ ক্ষেত্রে সময়ক্ষেপণ করছেন এবং যথাযথ চিকিৎসা নিতে বিলম্ব করছেন।

ফলে, কিছু বুঝে ওঠার আগেই অনেক রোগীর অবস্থার হঠাৎ অবনতি হচ্ছে, কোনো কোনো রোগী হেমোরেজিক ডেঙ্গু বা ডেঙ্গু শক সিনড্রোমের মত মারাত্মক জটিলতা নিয়ে হাসপাতালে আসছেন। শেষমূহূর্তে সামাল দিতে ডাক্তারদেরও হিমসিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসা করতে। ভোগান্তি বাড়ছে রোগীদের।

লেখক: ডিন, মেডিসিন অনুষদ
অধ্যাপক, মেডিসিন বিভাগ,
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।

আরো পড়ুন :  ওজন কমাবেন যেভাবে: ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ

ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধে ৭ পরামর্শ

মুখ ও দাঁতের স্বাস্থ্য রক্ষায় করণীয়


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি