কিশোর গ্যাংয়ের ছত্রছায়ায় চলছে মাদক ব্যবসা
প্রকাশিত : ১৫:০০, ৯ নভেম্বর ২০২১ | আপডেট: ১৫:০৬, ৯ নভেম্বর ২০২১
ফাইল ছবি
যশোরের শার্শা উপজেলার কায়বা ইউনিয়নের বেলতলা বাজারে হাত বাড়ালেই মিলছে ভয়ানক মাদক। যার নৈপথ্য ভূমিকায় এলাকার উঠতি বয়সী কিশোর গ্যাং।
বাগআঁচড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের মাত্র ২ কিলোমিটারের মধ্যে কিশোরদের দিয়েই চলছে এই মাদক ব্যবসা।
সরেজমিনে দেখা যায়, রাত যত গভীর হয় ওই এলাকায় মাদক ব্যবসা তত জমজমাট হয়। সন্ধ্যা পর রাতের আধারটাকে পুঁজি করে দক্ষিণপাড়া বেলতলা মোড় সংলগ্ন মাদক ব্যবসায়ীর বাড়ির চারপাশ ঘিরে কয়েকজন কিশোর চালিয়ে যাচ্ছে রমরমা মাদকের ব্যবসা। বেশির ভাগ কিশোর ১৪ থেকে ১৫ বা ১৫ থেকে ১৭ বছরের।
গাঁজার ছোট এক পুড়িয়া ২০ টাকা আর প্যাকেট ১০০ টাকা, বড় প্যাকেট ২০০ টাকায় বিক্রি হয়। তাছাড়া এখানে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকায় এক পিচ ইয়াবাও বিক্রি হয়। প্রতিদিন এসব স্পট থেকে বিভিন্ন ক্রেতার কাছে মাদক সরবরাহ করা হয়।
এছাড়া পরিচিত ক্রেতারা ফোনে অর্ডার দিলে তাদের দেওয়া ঠিকানায় কিশোরদের ছত্রছায়ায় মাদক পৌঁছে দিয়ে আসছে বিক্রেতারা। এর জন্য টাকা কিছুটা বেশি নিয়ে থাকে।
আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা বিষয়টি জেনেও রহস্যময় কারণে তাদেরকে গ্রেফতার করছেনা। তাদের খুটির জোর কোথায় সেটা এখন এলাকার মানুষের মধ্যে ঘুরে ফিরে আলোচনায় আসছে।
পুলিশের গাড়ি এলে ক্রেতা-বিক্রেতা সবাই সতর্ক হয়ে যায়। যার যার মত গা ঢাকা দেয়। গাড়ি দেখলে মাদক ব্যবসায়ীদের সতর্ক করার কাজটি করে থাকে কিশোর দল।
লাভজনক এই ব্যবসায় কিশোররাই প্রধান হাতিয়ার ও অন্যতম টার্গেট। বাগুড়ী প্রাইমারি স্কুল মাঠপাড়া ভেতরের অবস্থা আরও ভয়াবহ। এই এলাকাটি কিশোররা মাদক খাওয়া ও বিক্রির নিরাপদ স্থান হিসেবে বেছে নিয়েছে।
জানা গেছে বাগুড়ী বেলতলা বাজারের পাশে ইউনুস আলীর দোকানের পেছনে মাসুদের আমবাগান, মুড়ির মিল (আমিরির মোড়) পালপাড়া, বাগুড়ী মাঠ পাড়া, মাঝের পাড়া, বাগুড়ী সীমানা ঘেষা বেত্রাবতী নদীর ঘাটসহ বিভিন্ন এলাকায় মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ করে থাকে মাদক ব্যবসায়ীরা। টাকা-পয়সার ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে প্রায়ই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেলতলা বাজারের এক দোকান ব্যবসায়ী জানান, আমার ছেলের বয়স ১৫ থেকে ১৬ বছর। দীর্ঘ ৪ বছর ধরে মাদকাসক্ত হয়ে পড়েছে। প্রায় মাদকের টাকার জন্য বাড়িতে ঝগড়া ও সংসারের জিনিসপত্র ভাঙচুর করে। এলাকায় যদি মাদক বেচাকেনা না হতো তাহলে আমার ছেলেটির এমন পরিণতি হতো না।
সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মতে মাদক, অপরাধ ও যৌনতা একই বৃত্ত। মাদক বহন করতে গিয়ে একজন কিশোর প্রথমে ওই প্যাকেট খোলে। সেখান থেকে সে মাদকাসক্ত হয়। মাদকাসক্ত হলে ওই কিশোরের টাকার প্রয়োজন হয়। তখন ২০টি গাঁজার পুড়িয়া বিক্রি করলে তাকে দুটি বিনামূল্যে দেওয়ার কথা বলে। এভাবে মাদকের সঙ্গে জড়িত কিশোররা ভবিষ্যতে পেশাদার সন্ত্রাসী হওয়ার পথ তৈরি হচ্ছে।
এই মাদকের আখড়াকে অনতিবিলম্বে যদি ধ্বংস না করা হয়, তাহলে অতি অল্প সময়ের মধ্যে এলাকার শিশু, কিশোর, যুব সমাজ মাদকে নিমজ্জিত হয়ে যাবে, আশঙ্কা তাদের।
এ ব্যাপারে বাগআঁচড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ ফরিদ ভূইয়া জানান, মাদকের ব্যাপারে কোন আপোষ নেই। মাদকের বিক্রির খবর শোনার পর আমরা বিভিন্ন স্পটগুলোতে অভিযানের পাশাপাশি নজরদারিতে রেখেছি। মাদকে কোন ছাড় হবেনা বলে জানান তিনি।
এএইচ/
আরও পড়ুন