কী পাইলাম?
প্রকাশিত : ১৭:২৭, ২৫ আগস্ট ২০২৩
ফরিদপুর শহরে একটি জায়গা আছে। কী পাইলাম মোড় ! প্রথম যখন আমি ওই মোড় দিয়া যাই এবং সাইনবোর্ডে জায়গাটির নাম দেখতে পাই- বিস্মিত হয়েছিলাম ! বিস্ময় কাটাতে রিক্সাওয়ালাকে জিজ্ঞেস করলাম। সেও একগাল হাসি দিয়ে বলে, হ ! আপনি ঠিকই দেখছেন। এ বিষয়ে আমি আর কাউকে প্রশ্ন করিনি- এমন কি কেন এমন অদ্ভুত নাম- কারো কাছে জানতেও চাইনি।
তবে এরপর যতবার ফরিদপুর গিয়েছি- ওই মোড়টার কাছে কোন দোকানে গিয়া চা খাইতে খাইতে একটা আধ্যাত্মিক ভাব আনার চেষ্টা করেছি আর মনে মনে ভেবেছি- কী পাইলাম ...। আশ্চর্যের বিষয়: আমার ভেতর প্রতিবারই একটা চেতনা তৈরি হত এবং কোন একটা জিনিস মনে করে আমার মন খারাপ হতো! কে যেন বলেছিল: আধ্যাত্মচেতনা এমন এক ঘোর: স্থান-কাল-পরিবেশ যাকে প্রভাবিত করে। এ কারণে কেউ আজমীর যায়, কেউ যায় হরিদ্বার-ঋষিকেশ ! আমার আছে- কী পাইলাম মোড় ..! তো- কী পাইলাম মোড় গিয়া এইবার যে- না পাওয়ার বেদনার ঢেউ আমার মনের ভেতর উথলে উঠলো- তা একটি খাতা ! ছোটবেলায় যখন ওয়ান থেকে টু ক্লাসে উঠলাম, তখন- ইউনিসেফ থেকে নীল কাভারের ঝকঝকা সাদা কাগজের খাতা দেওয়া হলো ওয়ানের শিক্ষার্থীদের! সে কি উন্মাদনা ! কয়েকদিন যেতে না যেতেই সেই খাতার পাতা ছিড়ে কেউ নৌকা বানায়- কেউ বা এরোপ্লেন বানিয়ে উড়িয়ে দেয় আকাশে। আহা আমি যদি এই খাতা একটা পেতাম ..! কতকিছু লিখতাম ..! ক্লাস টু থেকে থ্রি-তে উঠলাম; এবার টু ক্লাসের শিক্ষার্থীদের দেওয়া হল সেই খাতা। যখন ফোরে তখন পেল ক্লাস থ্রি। এভাবে একধাপ উপর ক্লাসে উঠছি-আর মহামহিম সরকারও একধাপ করে উপরের শ্রেণিতে খাতা বিতরণ করছেন। টানা চারবছর এই খাতা না পাওয়ার বেদনা বুকে চেপে আমি যখন হাইস্কুলে গেলাম-তখনই সরকার ক্লাস ওয়ান থেকে ফাইভ পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষার সবার জন্য বিনামূল্যের ইউনিসেফ লেখা নীল কাভারের খাতা সরবরাহ বাধ্যতামূলক করে দিল। কী পাইলাম মোড়ে বসে আমার এখন সেই ইউনিসেফ লেখা নীল কাভারের খাতার জন্য খুব মন খারাপ হচ্ছে! আমি মুখ বিষন্ন করে একটার পর একটা চা'র অর্ডার দিচ্ছি- আর আমার মনের পাশ দিয়ে তারাশঙ্করের সেই 'কবি' উপন্যাসের কবিতার লাইন ঘুরাফেরা করছে . .. “এ খেদ মোর মনে ভালবেসে মিটল না আশ- কুলাল না এ জীবনে হায়, জীবন এত ছোট কেনে?..''
রুকনুজ্জামান অঞ্জন ২৫০৮২৩. (ছবি: মুন্সিবাজার, সাহেববাড়ি, ফরিদপুর)